লাইফস্টাইল ডেস্ক : আম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সুস্বাদু ফল। স্বাদে, গন্ধে, বর্ণে ও পুষ্টিমানে আমের বিকল্প শুধু আম তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষই আম পছন্দ করেন। ইট পাথর ঘেরা শহরে বাগান না থাকলেও টবে হবে আপনার পছন্দের আম, জানুন পদ্ধতি:-
আমে রয়েছে শ্বেতসার, চর্বি, আমিষ, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খনিজ দ্রব্য এবং ভিটামিন। কাঁচা ও পাকা আমের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার। অন্যান্য যে কোন ফলের তুলনায় মানুষ এটি বেশী পরিমানে খেয়ে থাকে। কিন্তু জায়গা জমির অভাবে চাষ করতে পারেন না অনেকেই। দেশের বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন আম চাষাবাদের জন্য অনেক জমি দরকার, জমিটি হতে হবে সুনিষ্কাশিত, মাটি হতে হবে দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ, আবহাওয়া গত বিষয় ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের দেশে মাথা পিছু জমির পরিমান অত্যন্ত কম। এছাড়াও প্রতি দিন আশংকাজনক ভাবে কমছে চাষাবাদ যোগ্যজমি। তাহলে পছন্দের এই ফলটি চাষ করবেন কিভাবে? প্রায় দেখা যায়, অনেক ক্রেতা বারি আম-৩ (আম্রপালি) জাতটি ছোট টবে লাগিয়ে রাখেন যেখানে ১৫-২০ কেজি পরিমান মাটি বা জৈব পদার্থ ও মাটির মিক্সার থাকে।
কিন্তু কয়েক বছর পর আর সেই গাছ থেকে কাঙ্খিত ফলন পান না অথবা গাছটি বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়। ফল বিজ্ঞানিরা সব সময়-ই চেষ্টা করেন কীভাবে ফলের উৎপাদন বাড়ানো যায়, নিরাপদ ও বিষমুক্ত ফল ক্রেতা সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে, বছরের বেশির ভাগ সময় ফলের সরবরাহ থাকে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, টবে অনায়াসেই পেয়ারা, লেবু, কামরাঙ্গা, জামরুল, ডালিম, বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি চাষাবাদ করা যায়। আর আমের মধ্যে বারি আম-৩ বা আম্রপালি জাতটি অনেকে চাষ করে থাকেন। বর্তমান গষেণায় দেখা গেছে, শুধু বারিআম-৩ (আম্রপালি) জাতটিই নয়, পছন্দের অন্য জাতগুলিও চাষ করা যাবে এই বিশেষ ধরণের টবে।
কনক্রিটের তৈরী টবে যেকোন জাতের আম ১০-১২ বছর এবং অন্যান্য ফল (কুল, পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙ্গা, ডালিম, জামরুল, আতা, শরিফা, বিভিন্ন ধরনের লেবু, মাল্টা প্রভৃতি) ১৫-২০ বছর পর্যন্ত সফলভাবে জন্মানো সম্ভব। বর্তমানে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বাড়ির ছাদে ফল-সবজি বাগান বেশভালো ভাবেই গড়ে উঠেছে। এটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।
বাড়ির ছাদে, যেসকল ব্যক্তি ফল বাগান বা সবজি বাগান করে থাকেন তাদের একটি বিষয়ের উপর এসময়ে বিশেষ নজর দিতে হবে তা হলো নিয়মিত পানির ব্যবস্থা করা এবং সম্ভব হলে দিনে একবার আপনার টবের গাছগুলো সাথে সাক্ষাৎ করা। পানি শুধু গাছের গোড়ায় না দিয়ে কিছু অংশ পাতায় ছিটিয়ে দিলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
খেয়াল করে দেখবেন, গাছও কথা বলে। বাড়ির মালিক গাছের দিকে দৃষ্টি দিলেই এই ভাবের আদান-প্রদান হয়। টব স্থাপনের জন্য সেইরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এই টবটি যে কোন জায়গায় স্থাপন করা যাবে। যদি জায়গাটি নিচু, অনুর্বর, অনাবাদি এবং উলু বা কাশদ্বারা আবৃত থাকে সেস্থানেও এই পদ্ধতিতে আম চাষ করা যাবে।
তবে বাড়ির ছাদে স্থাপনের জন্য টবের ও জনের বিষয়টি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে হবে। টবের বাইরে বেলে মাটি না এ্যঁটেল মাটি, পানির স্তর উপরে বা নিচে, আগাছায় ভরা সেটি মূখ্য বিষয় নয়। টবের গাছে জন্মানো ফলগুলি একটু কষ্ঠের তাই রোগ ও পোকা, কবুতর, পাখি যেন ফলগুলি খেতে বা নষ্ঠ করতে না পারে সেজন্য সময় মত ফ্রুটব্যাগিং অথবা নেটের ব্যবস্থা করা উচিৎ। তবে টবে আম চাষ করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে জাতগুলো যে এলাকায় ভালো ফলন দেয় সেগুলো নির্বাচন করতে হবে।
উৎপাদন পদ্ধতি: বিশেষ ধরণের এই টবটি তৈরীর জন্য খুয়া (ইটের টুকরা), সিমেন্ট, বালি ও চিকন রডের প্রয়োজন হয়। টবের আকার ৩২ঢ৩২ঢ৩০ইঞ্চি (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) এবং টবের ভিতরের আকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ২৫ইঞ্চি। টবের উপরের প্রান্তে ৪ ইঞ্চি পাড় বা কিনারা করলে দেখতে সুন্দর হয়।
টবটি ভালোভাবে স্থানান্তরের জন্য চারপ্রান্তে ৪ টি হুক রাখতে হবে। টবটির নিচের প্রান্তে৩টি পানি নিষ্কাষনের জন্য ছিদ্র রাখতে হবে। টবটি ভরাট করার সময় নিচের অংশে ছোট ইটের টুকরা ব্যবহার করতে হবে। এরপর ৫০ভাগ দোঁআশ মাটি এবং ৫০ভাগ পচানো গোবর সার অথবা জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এরপর পছন্দনীয় আমের জাতের কলম সংগ্রহ করে লাগাতে হবে। তবে গুটি আমের গাছ লাগিয়ে সেটিকে পছন্দের সায়ন দ্বারা কলম করা যায়।
টবে জন্মানোর জন্য নিচের দিকে বা মাটির কাছাকাছি গ্রাফটিং করা চারা গুলি নির্বাচন করতে হবে। মাটির উপর থেকে ৫-৮ ইঞ্চি দুরুত্বে কলম করলে সবচেয়ে ভালো হবে। প্রাথমিক অবস্থায় সব টবগুলো পাশাপাশি রাখলেই চলবে। এক-দুই বছর পর নির্দিষ্ট জায়গায় স্থানান্তর করতে হবে। প্রতি বছর গাছের চাহিদা অনুযায়ী সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
রাসায়নিক সারের চেয়ে জৈব সার বেশি কার্যকরী। তবে সকল ধরণের খাদ্যোপাদান নিশ্চিত করতে হবে। গোবর সার বা জৈব সার বা কেঁচো সার, ডিএপি, এমপি, জিপসাম, দস্তাসার এবং বোরিক পাউডার। সবগুলো সার একবারে প্রয়োগ না করে দুই থেকে তিন বারে প্রয়োগ করা ভালো। সার প্রয়োগের পর পানির ব্যবস্থা করতে হবে। যখন বৃষ্টিপাত কম হয় এবং মাটি শুষ্ক অবস্থায় থাকে তখন প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহ করতে হবে।
গাছ লাগানোর প্রথম দুই বছর গাছে শক্ত খুটির ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেহ ৩/৪টি আমের জাত পছন্দ করেন কিন্তু তার মাত্র একটি টব রাখার মতো জায়গা আছে তাহলে দ্বিতীয় বছরে প্রত্যেকটি ডালে কাঙ্খিত জাতের সায়ন দ্বারা টপওর্য়াকিং করতে হবে। এই পদ্ধতিতে একটি গাছে অনেক গুলোজাতের সমাবেশ ঘটানো যায়। টবে জন্মানো গাছের ফলন বাগানো জন্মানো গাছের ফলনের চেয়ে কিছুটা কম তবে সন্তোসজনক। প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে কার্বনডাইঅক্সাইডের নির্গমন, বাড়ছে তাপমাত্রা, উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী।
ফলন: আসলে গাছতো জন্মানো যায় তবে ফলন কেমন সে বিষয়ে প্রশ্ন আসতে পারে। তবে ফলনও সন্তোসজনক। বারিআম-৩ (আম্রপালি) ও বারিআম-২ (লক্ষণভোগ) জাত দুইটির ফলন সব চেয়ে বেশি (৪০কেজি)। বারি আম-৪ জাতটির ফলন ৩৫কেজি। আর সবচেয়ে কম ফলন হয় বারিআম-১ জাতটিতে। ১০-১২ বছরের একটি গাছে ২৫-৪০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। তবে জাত ভেদে আরও কমবেশি হতে পারে।
এমতাবস্থায়, বাড়ির ছাদে বিভিন্ন ফল ও সবজির সমাগম হলে বাড়িতে বসবাস অনেকটাই আরামদায়ক হতে পারে। প্রতিবেশিরা ফল খেতে না পারলেও পরিবেশের শীতলতা অনুভব করতে পারবেন অতিসহজেই। আমগাছ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ এবং আম সর্বাধিক পছন্দনীয়।
সুতরাং আমের চাহিদা পূরণে শুধু বাগানের দিকে চেয়ে থাকার প্রয়োজন নেই, টবে জন্মানো আম গাছই আপনার পরিবারের আমের চাহিদা পূরণ করবে বলে আমাদের আশাবাদ।
লেখক: ড. মো. শরফ উদ্দিন, ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বারি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।