আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনকে সমর্থন করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি যেমন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা, ঠিক একইভাবে মারাত্মক খাদ্য ঘাটতিতে থাকা লাখ লাখ ফিলিস্তিনি এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে থাকা গাজার ক্ষেত্রে একই ধরনের মনোভাব প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ব্রাসেলসে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে জাতিসঙ্ঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত মানদণ্ডের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে দৃঢ় ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের মূল নীতি হচ্ছে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া।
ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেলের পাশে দাঁড়িয়ে গুতেরেস সাংবাদিকদের বলেন, ইউক্রেনের মতো গাজাতেও আমাদের অবশ্যই নীতিতে অটল থাকতে হবে।
জাতিসঙ্ঘের খাদ্যবিষয়ক একটি সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ আসন্ন। এদিকে, ইসরাইল দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহয় স্থল আক্রমণ শুরু করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে মনে হচ্ছে, যেখানে অনেক লোক যুদ্ধ থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছে।
২৭ জাতির ইইউ দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীরভাবে বিভক্ত। ৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরাইলে হামাসের বিধ্বংসী হামলা এই বিভক্তির সৃষ্টি করেছে। তবে গাজায় নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার বেড়ে যাওয়ায় আরো অনেক দেশ যুদ্ধবিরতির আহ্বানকে সমর্থন করছে।
অন্যদিকে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধকে অস্তিত্বের হুমকি হিসেবে দেখছে প্রায় পুরো জোট। তারা দেশটিকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সহায়তা করার জন্য শত শত কোটি ইউরো ঢালছে জোটটি।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাদকার বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনের ভয়াবহ সঙ্কট মোকাবিলা ইউরোপের জন্য মোটেও উপযুক্ত সময় ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি ইউক্রেনকে রক্ষার জন্য আমাদের প্রচেষ্টাকে হ্রাস করছে কারণ গ্লোবাল সাউথের অনেক দেশ ইউক্রেন ও ফিলিস্তিনের বিষয়ে ইউরোপের পদক্ষেপকে দ্বৈত অবস্থান হিসাবে ব্যাখ্যা করে। আমি মনে করি, এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি আছে।’
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু গাজায় ঘটে যাওয়া ঘটনাকে ‘নাটকীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আজ এমন মানুষদেরও দেখতে পাচ্ছি যারা ঘাস খেয়ে নিজেদের পেট ভরানোর চেষ্টা করছে। যারা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। ইউরোপকে নেতৃত্ব দিতে হবে, অনুসরণ করা নয়। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করার সময় এসেছে- অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি করা, জিম্মিদের মুক্তির দাবি করা।
শীর্ষ সম্মেলনের উপসংহারে নেতারা ‘বেসামরিক মানুষের নজিরবিহীন প্রাণহানি এবং গুরুতর মানবিক পরিস্থিতি’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপীয় কাউন্সিল অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধ বিরতির আহ্বান জানিয়েছে, যার ফলে একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি হবে।
জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তারা বলছেন, ইসারাইল-হামাস যুদ্ধ গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনির জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ ক্ষুধার্ত রয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে শুরু হওয়া অতর্কিত হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রায় ১২০০ জন ইসরাইলিকে হত্যা করে এবং আরো ২৫০ জনকে অপহরণ করে। হামাস এখনো প্রায় ১০০ জনকে জিম্মি করে রেখেছে বলে মনে করা হয়। পাশাপাশি আরো ৩০ জনের লাশও তাদের জিম্মায় রয়েছে।
মিসর সীমান্তের কাছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহয় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের আসন্ন স্থল অভিযানের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এটি এমন একটি পরিকল্পনা যা সেখানে আশ্রয় নেয়া কয়েক হাজার বেসামরিক নাগরিকের ক্ষতির আশঙ্কায় বিশ্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, রাফাহয় অভিযান না চালিয়ে হামাসের বিরুদ্ধে ‘সম্পূর্ণ বিজয়ের’ লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না ইসরাইল।
ইইউ নেতারা ইসরাইলি সরকারকে রাফাহতে স্থল অভিযান থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি এরই মধ্যে মানবিক বিপর্যয়ের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পরিণত হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় মৌলিক সেবা ও মানবিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস রবিবার দেশটি সফর করে বলেছেন, আমরা রাফাহয় বড় ধরনের আগ্রাসনের পক্ষে নই। আমি নিজেই ইসরাইলে এটির ওপর জোর দিয়েছি। আমরা আশা করি যে এখন একটি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভব হবে। সমস্ত জিম্মির মুক্তি এবং নিহতদের লাশ হস্তান্তর করা হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, গাজায় আজ যা ঘটছে তা মানবতা রক্ষার ব্যর্থতা। এটা কোনো মানবিক সংকট নয়। এটা মানবতার ব্যর্থতা।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এটা ভূমিকম্প নয়, বন্যা নয়। এটা বোমা হামলা। সূত্র : ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।