নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে অনুমোদনহীনভাবে পরিচালিত একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের পর এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পরপরই স্থানীয় প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে কর্তৃপক্ষকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে।
শ্রীপুর পৌর শহরের ‘জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতাল’-এ এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, ২২ জুন সকাল ১১টার দিকে অন্তঃসত্ত্বা মিথিলা আক্তার (২৪)–কে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেদিনই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রোগীর স্বজনেরা তাকে অন্যত্র স্থানান্তরের চেষ্টা করলে হাসপাতালের ব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ও মো. মেহেদী তাদের সেখানে রাখার অনুরোধ করেন। দুপুর ২টার দিকে সিজারিয়ানের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
রাতে নবজাতক অসুস্থতার লক্ষণ দেখালে কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করে। এরপর শিশুকে নেবুলাইজার দেওয়া হয় এবং একপর্যায়ে একজন নার্স তার পেটে চাপ দেন বলে পরিবারের অভিযোগ। ধীরে ধীরে নবজাতকের শরীরে নীলাভ পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ২৩ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়।
নবজাতকের চাচা মেহেদী হাসান আশিক শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার বিকেলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শফিকুল ইসলাম জানান, সিজার অপারেশনের দিন হাসপাতালটিতে কোনো লাইসেন্সধারী চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন না এবং কর্মরত নার্সরা সনদ দেখাতে পারেননি। এ কারণে জরিমানা ও কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালটির একাউন্টস অ্যাসিস্ট্যান্ট নাজমুল হুদা বলেন, “আমাদের কাগজপত্র রয়েছে, আমরা আবেদন করেছি। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে টাকা দিই। যদি অবৈধ হতাম, সিভিল সার্জন আগেই বন্ধ করতেন।” তবে আবেদন করলেই কি কার্যক্রম চালানো যায়—এমন প্রশ্নের সঠিক জবাব তিনি দেননি।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতাহার শাকিল জানান, “নিবন্ধনহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।”
এ বিষয়ে গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মামুনুর রহমান জানান, নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শ্রীপুরসহ গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অনেক ক্লিনিক ও হাসপাতাল প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়াই চলছে। জনস্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার জন্য এমন অনিয়ম রোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।