নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে দক্ষিন বারতোপা জোড়াদিঘী এলাকায় আটো চালক ফালানকে (২৭) হত্যা করে রিক্সা ছিনতাই মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)গাজীপুর জেলা। এ সময় ঘটনার সাথে জড়িত মূলহোতাসহ ৪ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তথ্য জানিয়েছেন পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ।
গ্রেফতারের পর আসামীরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে।
তারা জানিয়েছে, অটোরিক্সা ছিনতাই করার জন্যই চালককে স্বাসরোধে হত্যা করেছে। তাদের মধ্যে ৩ জন হত্যাকান্ডে যুক্ত ছিল এবং একজন ছিনতাই করা অটোরিক্সাটি ক্রয় করেছে।
নিহত অটো চালকের ফালান ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানার চাইর বাড়ীয়া গ্রামের মো. মফিজ উদ্দিনের ছেলে। তিনি উপজেলার চন্নাপাড়া মক্কা-মদিনায় স্ত্রীসহ বাদলের বাসায় ভাড়া থাকতেন এবং স্থানীয় জনৈক সুমনের মালিকানাধীন ৫ ব্যাটারী বিশিষ্ট অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ময়মনসিংহের ভালুকার মো. সাগর (২২), একই জেলার কোতয়ালী থানার মো. শুক্কুর আলী (৪৪) ও আরিফ হোসেন (১৮), টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মো. শাহিন (২০)। তারা গাজীপুরের শ্রীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে নানা অপরাধে যুক্ত ছিল। তাদের মধ্যে সাগর, শাহিন ও শুক্কুরকে গত ১২ ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী আমবাগ বউবাজার এলাকা থেকে এবং আরিফকে ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীপুরের দারগারচালা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরো জানান, অটোচালক ফালান গত ৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শ্রীপুরের চন্নাপাড়া মক্কা-মদিনা সুমনের গ্যারেজ হতে অটোরিক্সা নিয়ে বের হয়। পরবর্তীতে ফালান রাত ১০টার দিকে অটোরিক্সাটি নিয়ে নিজের ভাড়া বাসায় আসে। বাসায় এসে পানি খেয়ে পুনরায় অটোরিক্সাটি নিয়ে বাসা হতে বের হয়ে যায়। কিন্তু ঐ রাতে ফালান আর বাসায় ফিরে আসেননি। ফালানের স্ত্রী রিনা আক্তার স্বামীর মোবাইল ফোনে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ফালানের স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টায় শ্রীপুর থানায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শ্রীপুরের দক্ষিন বারতোপা সাকিনস্থ জোড়াদিঘী নামক স্থানে পাকা রাস্তার দক্ষিনে গজারী বনের নিচু জায়গায় একটি পুরুষ মানুষের মৃতদেহ পাওয়া গিয়াছে। তিনি এ সংবাদের ভিত্তিতে তাৎক্ষনিক উক্ত স্থানে পৌছিয়ে মৃতদেহটি তার স্বামী ফালাণের বলে সনাক্ত করেন।
তিনি আরো জানান, পরে মৃতদেহ শ্রীপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজ উদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গাজীপুর প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী রিনা আক্তার বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে শ্রীপুর থানার মামলা রুজু হয়। শ্রীপুর থানা পুলিশ ১দিন মামলাটি তদন্তকালীন সময়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে অত্র মামলাটি পিবিআই গাজীপুর জেলা অধিগ্রহন করেন। পরে প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারী আসামী সাগর ও শাহীনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তারা ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে স্বাকারোক্তি মূলক জবানবন্দী দেয়। একই দিন অপর আসামী শুক্কুর আলী আদালতে অটোরিক্সা ক্রয়ের কথা স্বীকার করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি আসামী আরিফ হোসেন আদালতে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
তিনি আসামীদের বরাত দিয়ে আরো জানান, ফালান পেশায় অটোরিক্সা চালক ছিল। ঘটনায় জড়িত ও গ্রেফতারকৃত আসামী সাগর, শাহিন, আরিফ এবং পলাতক সহযোগি আসামী নাইম মিলে গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে মাওনা চৌরাস্তা থেকে ফালান মিয়ার অটোরিক্সায় উঠে। গ্রেফতার আসামীরা ফালান মিয়ার অটোরিক্সা ভাড়া করে বারতোপা জোড়া দিঘীস্থ গজারি বনের পাশে নিচু রাস্তার নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আসামী সাগর, শাহীন, আরিফ এবং পলাতক আসামী নাইমের সহযোগিতায় ফালানকে মাফলার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরতেদ গোপন করার উদ্দেশ্য গজারি বনের ভিতরে ফেলে দিয়ে আসে। পরে আসামীরা ফালানের মোবাইল ফোন ও অটো ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আসামীরা ছিনতাইকৃত অটোর ব্যাটারি শ্রীপুরের ২নং সিএন্ডবি বাজারে গিয়ে গ্রেফতারকৃত ভাঙ্গারির দোকানদার শুকুর আলীর নিকট ২৮ হাজার টাকা বিক্রি করে দেয়।
পিবিআই পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, এটি একটি নৃশংস হত্যাকান্ড। ফালান মিয়া অটোরিক্সা চালক ছিল। ঘটনার দিন মামলার ঘটনায় জড়িত তদন্তে প্রাপ্ত আসামীরা শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে অটোরিক্সা ভাড়া করে বারতোপা জোড়াদিঘী সাকিনস্থ গজারি বনের পাশে নিচু জায়গায় নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃত আসামী সাগর, আসামী শাহীন, আসামী আরিফ এবং পলাতক আসামী নাইমের সহযোগিতায় ফালানকে মাফলার গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরে উক্ত মরদেহ গোপন করার জন্য গজারি বনের ভিতরে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে আসামীরা অটোর ব্যাটারি ছিনতাই করে নিয়ে ভাঙ্গারির দোকানদার শুকুর আলীর নিকট বিক্রি করে দেয়।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত আসামীরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এছাড়া পলাতক আসামী নাইমকে গ্রেফতারের অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।