নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর মহানগরীর বাসন, টঙ্গী, কোনাবাড়ি বিসিক এলাকায় বিক্ষোভ ও কারখানা ভাঙচুর করেছেন চাকরিচ্যুত শ্রমিকরা। এ কারণে অন্তত ৩০টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, কারখানা মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, তৃতীয় কোনো পক্ষের ইন্ধনে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
পুলিশ-শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) সকালে নিজ নিজ কারখানায় কাজে যোগ দেন টঙ্গীর বিসিক এলাকার পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে চাকরিচ্যুত কয়েক’শ শ্রমিক কয়েক ধাপে ১১টি পোশাক কারখানার গেটে অবস্থান নেন। কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দিতে আহ্বান জানান তারা। এ সময় কারখানায় কর্মরত শ্রমিকেরা তাদের ডাকে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এসময় চাকরিচ্যুত শ্রমিকেরা ১১টি কারখানায় ভাঙচুর চালায়। নিজ কারখানায় ভাঙচুর ঠেকাতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে ভাঙচুর এড়াতে ওই কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। এ সময় চাকরিচ্যুত অন্তত দুই শ্রমিক আহত হন।
গাজীপুর চন্দনা চৌরাস্তা ও ভোগরা বাইপাস এলাকায় পুরুষ পোশাক শ্রমিকরা তাদের দাবি জানিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ছুটি ঘোষণা করা কারখানা গুলো হচ্ছে- টঙ্গীর বিসিক এলাকার লিমিটেড টসি নিট ফেব্রিক্স লিমিটেড, ন্যাশনাল কম্পোজিট লিমিটেড, পেট্রিয়ট ইকো এ্যাপারেল লিমিটেড, বেলিসিমা এ্যাপারেল্স লিমিটেড, জিন্স এন্ড পোলো লিমিটেড, টেঙ্গন গার্মেন্টস লিমিটেড, রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড, সুমি এ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএস গার্মেন্টস লিমিটেড, গার্ডেন টেক্সটাইল লিমিটেড ও তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড।
চাকরিচ্যুত শ্রমিক মো. রমজান হোসেন বলেন, কারখানাগুলোতে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বিভিন্ন কারখানার চাকরিতে থাকা শ্রমিকদের আমাদের আন্দোলনের যোগ দেওয়ার আহ্বান জানালেও আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়নি। আমরা সড়কে বসে অবস্থান করছি। দাবি না মেনে নিলে কোনো গার্মেন্টসে শ্রমিকদের ঢুকতে দেওয়া হবে না।
তাজকিয়া এ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মানবসম্পদ) হেমায়েত উদ্দিন বলেন, ‘সকালে বহিরাগতরা কারখানার সামনে জড়ো হয়ে কারখানার প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর ও ক্ষতি এড়াতে কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছি।’
অপরদিকে, কোনাবাড়ির বিসিক শিল্প এলাকায় নীটিং ফ্যাক্টরির শ্রমিকেরা বেশ কিছু দাবি নিয়ে বিসিক ৪ রাস্তার মোড়ে কাজে যোগ না দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ৪০০-৫০০ জন শ্রমিক বিসিকের ভেতরে রাস্তায় মাইক দিয়ে মিছিল করেন। আন্দোলনরত শ্রমিকরা ভেতরের দিকে প্রবেশ করলে নিরাপত্তার স্বার্থে ১৫টি কারখানা ছুটি দিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ।
ছুটি হওয়া কারখানাগুলো হলো- ফ্যাশন সমিট লি., রেজাউল এ্যাপারেলস লি., আই আর লি., কাদের স্পিনিং লি., তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল লি., ওয়াই কে নীটওয়্যার লি., লাইফটেক্স লি., বে রাবার লি., কানিজ ফ্যাশন লি., সোয়ান সোয়েটার লি., ডাইসিন কেমিক্যালস লি., ভাজন এ্যাপারেলস লি., পিবিএল নীট কম্পোজিট লি., বনিকা ফ্যাশন লি. এবং আর আর সোয়েটার লি.।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ জানান, বেশ কিছু দাবি নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করে। এসব দাবির অনেকগুলো অযৌক্তিক। কিছু কারখানায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ও দর্জি ফেডারেশনের গাজীপুর জোলার সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, কোনাবাড়ি বিসিকের সব কারখানা আজ ছুটি দেওয়া হয়েছে। গার্মেন্ট কর্মীদের সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষ জড়িয়ে গেছে। গতকাল তাদের ১৩টি দাবি ছিল। সবার সামনে মালিকপক্ষ ১০টি দাবি মেনে নিয়েছিল। শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে আজ কাদের ইন্ধনে এই আন্দোলন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।