নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার ড. মো. নাজমুল করিম খান স্বীকার করেছেন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার দায় থেকে তারা সরে দাঁড়াতে পারেন না। তিনি বলেন, জনবল স্বল্পতা ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে প্রিভেনশন সবসময় সম্ভব হয় না, তবে এ ঘটনায় পুলিশের ব্যর্থতা আছে।
শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে গাজীপুর শহরের জিএমপি সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার বলেন, “সুরক্ষার দায়িত্ব আমাদের ওপর ছিল। আমরা প্রিভেন্ট করতে পারিনি। বিশ্বের কোনো দেশ ক্রাইম একেবারে শূন্যতে নামিয়ে আনতে পারেনি। শত চেষ্টার পরও অপরাধ ঘটে যেতে পারে। তবু, এই ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”
ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে তিনি জানান, বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক থেকে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। পথে আসামি গোলাপী তাকে ‘হানিট্র্যাপে’ ফেলার চেষ্টা করে। বিষয়টি বুঝতে পেরে বাদশা সরে আসতে চাইলে কিল-ঘুষি দেন গোলাপীকে। তখন আগে থেকে ওত পেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে বাদশাকে কোপাতে শুরু করে। প্রাণ বাঁচাতে বাদশা দৌড়াতে থাকেন।
এই সময় পেশাগত কারণে ঘটনাটি ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। আসামিরা তাকে ভিডিও মুছে ফেলতে বললেও তিনি রাজি হননি। একপর্যায়ে তারা তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে ৮ জনকে চিহ্নিত করা হয়, যার মধ্যে ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র্যাব।
গ্রেপ্তাররা হলেন—জামালপুরের মেলান্দহের কেটু মিজান (৩৫) ও তার স্ত্রী গোলাপী (২৫), পাবনার স্বাধীন (২৮), খুলনার আল আমিন (২১), কুমিল্লার শাহজালাল (৩২), পাবনার ফয়সাল হাসান (২৩) এবং সুমন।
জিএমপি কমিশনার জানান, সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় পিএম রিপোর্ট হাতে পেলেই ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দেওয়া হবে এবং সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিতের চেষ্টা চলবে। তিনি বলেন, “আসামিরা যদি নাও স্বীকার করে, প্রমাণই তাদের অপরাধ প্রমাণ করবে। সাজার সংস্কৃতি নিশ্চিত হলে অপরাধ কমবে।”
এ সময় তিনি নিহত তুহিনের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারার দায় স্বীকার করেন।
কমিশনার আরও বলেন, গাজীপুরে ৫ আগস্টের পর অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, যা অপরাধ বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি আগের রাজনৈতিক রেজিমের শক্তিশালী প্রভাব এলাকায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। এতে অপরাধ দমনে মনোযোগে বিঘ্ন ঘটছে।
তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে। এর মধ্যে ৬ জনকে পুলিশ ও একজনকে র্যাব গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ত চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের সন্তান তুহিন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুরে ভাড়া বাসায় থাকতেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।