নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর : লেখাপড়া শেষ করে বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে কৃষক বাবার সাথে কৃষিকাজে যোগ দেন এক যুবক। কৃষিকাজে নতুন সম্বাবনা দিক খুজতে খুজতে বর্তমানে তার জীবনে ভরে উঠেছে সাফল্য গাঁথায় । শিক্ষা জীবনে গণিতের চর্চা করে ব্যাক্তি জীবনে তা প্রয়োগে সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন গাজীপুরের এক যুবক।
গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী আলীমপাড়া গ্রামে নিজ জমিতে ‘সৌদি ডেট পাম ট্রিস ইন বাংলাদেশ’ নামে ব্যক্তি উদ্যোগে খেজুরের আবাদ করছেন। গাজীপুরে মরুভূমির ফল খেজুর চাষ করে এখন রপ্তানির স্বপ্ন দেখছেন নজরুল ইসলাম বাদল(৩০)। খেজুর চাষের পাশাপাশি খেজুর চারার নার্সারিও গড়ে তোলেছেন ওই চাষী। খেজুর আবাদের সফলতায় দেশের বিভিন্ন জেলার আগ্রহী চাষীরাও তার কাছ থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে খেজুর চাষে সফলতার স্বপ্ন দেখছেন।
যে ভাবে স্বপ্নের শুরু:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে সম্মান ডিগ্রী অর্জনের পর কৃষক পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুর রহমানের সাথে কৃষিকাজে মনোযোগ দেন। তখন থেকেই নতুন আইডিয়া খুঁজতে থাকেন কিভাবে কৃষিতে নতুন কিছু করা যায়। সেই স্বপ্ন তাকে নিয়ে যায় সৌদি আরব প্রবাসী এক বন্ধুর কাছে। ২০১৫ সালে শুরুর দিকে ওই বন্ধুর সহযোগিতার আশ্বাসে খেজুরের চাষ ও নার্সারী করার পরিকল্পনা করেন। মরুভূমি অঞ্চলেল ফসল কাদামাটির বাংলাদেশে ফলানো সম্ভব কিনা তা নিয়েও ভাবনার অন্ত ছিল না তার। ভাবনা চিন্তা মাথায় রেখেই প্রবাসী ওই বন্ধুর সহযোগিতায় বিশ্বের ৬টি দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের খেজুরের বীজ ও চারা সংগ্রহ করেন।
প্রথমে ৭০ শতক জমিতে সৌদি আরবের খেজুরের জাত নিয়ে বাগান শুরু করেন। ২০১৭ সালে প্রথম তার বাগানে ফলন আসতে শুরু করে। পাশপাশি নার্সারিও গড়ে তোলেন। সেই বছরেই বাগান থেকে উৎপাদিত চারা ৬২ লাখ টাকায় বিক্রি করেন।এরপর তার শুধুই সামনে এগিয়ে চলা। বর্তমানে তার বাগানে ১৬ প্রজাতির খেজুর গাছ রয়েছে।
ফলন ও জাত:
চাষী নজরুল ইসলাম বাদল জানান, পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন জাতের ১১টি গাছ রোপন করেছিলেন বছর তিনেক আগে। এ বছর ওই গাছগুলোতে খেজুরের বাম্পার ফলন এসেছে। যার এক একটি খেজুরের বাঁধার ওজন প্রায় ২৫ কেজি। তার এ সফলতা খেজুর চাষে আগ্রহীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। নুতনভাবে খেজুর চাষে অগ্রহীদের মধ্যে তার এ সফলতা প্রেরণা যুগিয়েছে। বর্তমানে তিনি ৩০ হাজার চারা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে খেজুরের নার্সারি গড়ে তোলেছেন। তার সংগ্রহে খেজুরের যেসব জাত রয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আজওয়া, মরিয়ম, আনবারা, ম্যাটজেল, বাহরি, খালাস, সাফাওয়ি ইত্যাদি। যেভাবে ফলন হচ্ছে তা ঠিক থাকলে অচিরেই তিনি দেশের বাইরেও খেজুর রপ্তানী করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
চারা সংগ্রহের প্রক্রিয়া:
টিসু, কলম ও সরাসরি বীজ থেকে উৎপাদিত চারা। টিস্যু ও কলম চারা থেকে ২ থেকে ৩ বছরে ফলন পাওয়া যায়। একটি টিস্যু চারা ৮ থেকে ১০ হাজার, কলম চারা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা এবং বীজের চারা ৮শ থেকে ১হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।
খেজুরের ফলন:
একটি পূর্ণাঙ্গ গাছে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি খেজুর হয়। তাছাড়া বীজ থেকে উৎপাদিত চারায় ফলন আসতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ বছর। বীজ থেকে উৎপাদিত চারা তুলনামূলক স্বল্পমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব।
বিদেশেও রপ্তানী সম্ভব:
দেশে বছরে প্রায় ৩০ হাজার মে. টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে। যার পুরোটাই আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়।দেশে খেজুর বাগান করতে সরকারের কৃষি বিভাগের সহযোগীতা পেলে এক সময় দেশে উৎপাদিত খেজুরই দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব । এ ক্ষেত্রে সহজ সর্তে ব্যাংক ঋণ, কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগীতা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশে খেজুর চাষে হাজারো চাষি তৈরী হবে।কৃষকের মধ্যে খেজুর চারা সহজলভ্য ও কম মূল্যে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে । আর এতে করেই দ্বার উন্মুক্ত হতে পারে খেজুর চাষে। বাংলাদেশ হতে পারে খেজুর উৎপাদনের সম্বাবনাময় দেশ ।
সম্ভাবনা:
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাহবুব আলম জানান, বাংলাদেশে সৌদি আরবের খেজুর চাষ একটি সম্ভাবনাময় কৃষিপণ্য। এর জন্য কৃষি পর্যায়ে গবেষণা প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।