গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়ক প্রশস্ত করার কারণে ৪ হাজারেরও বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি সড়কের মাঝখানে পড়েছে। এতে দুর্ঘটনার মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সড়ক প্রশস্তকরণের সুবিধা কাজে আসছে না ব্যবহারকারীদের। সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হলেও এগুলো স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ কর্তৃপক্ষ।
সিটি করপোরেশন থেকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসকে বারবার অনুরোধ করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে সড়কের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এসব খুঁটি যান চলাচলে বাধা সৃষ্টি করছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
আজ রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে দেখা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশের সার্ডি সড়ক এলাকায় সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ শেষ করেছে অনেক আগেই। এই সড়কের ডান পাশের সব বৈদ্যুতিক খুঁটি এখন রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ব্যস্ত এই সড়কে প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে।
এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, এই রাস্তায় ট্রাক মিনিবাস প্রাইভেট কারসহ অটোরিকশা চলাচল করে সবসময়। বৈদ্যুতিক এই খুঁটি এখন সড়কের মাঝে চলে আসায় যেকোনো সময় এসব যানবাহনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিশেষ করে রাতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই সড়কটি।
শুধু সার্ডি সড়ক নয়, সিটি করপোরেশনের ভেতর অধিকাংশ সড়কেই এখন দেখা যাচ্ছে এই চিত্র। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নির্বিকার।
আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ সিটি করপোরেশন গাজীপুরে এখন চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। এই উন্নয়নের সিংহভাগজুড়েই রয়েছে সিটি এলাকার সড়ক সম্প্রসারণের কাজ। বর্তমানে এই কাজে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সড়কের উপর বিদ্যুতের খুঁটি। পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগাদা দিলেও তারা এই খুঁটি স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ নেয়নি, তাই বাধ্য হয়েই সড়কের উপর খুঁটি রেখেই উন্নয়নকাজ করছে সিটি করপোরেশন।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, নাগরিকদের দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সিটি এলাকার আঞ্চলিক সড়কে। ভাঙাচোরা সড়ক, সরু সড়কের কারণে একদিকে যেমন এলাকার উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে, অপরদিকে সাধারণ মানুষেরও ভোগান্তি হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি এই সড়ক সম্প্রসারণের মাধ্যমে উন্নয়নকাজ শুরু করেন।
বর্তমানে সিটি এলাকায় সাড়ে সাত হাজার কিলোমিটার সড়ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র। গাজীপুরকে আধুনিক শহর হিসেবে গড়তে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বিশেষ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৫৭টি ওয়ার্ডের প্রতিটি সড়ককে ৩০ থেকে ৬০ ফুট পর্যন্ত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্ত এই কাজে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি।
ইতোপূর্বে গাজীপুর সিটির অধিকাংশ এলাকার সড়কগুলো ছিল আট থেকে ১০ ফুট। আর পরিকল্পনা ছাড়াই পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ শহরজুড়েই নিজেদের ইচ্ছেমত খুঁটি স্থাপনের ফলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়ে বলে মনে করছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপনের কারণেই এ দুর্ভোগে সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সড়কের নির্মাণকাজ শুরুর আগেই তাদেরকে চিঠি দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের জন্য বলেছি। তবে তারা এ বিষয়ে এখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। জনদুর্ভোগ লাগবে দ্রুত আমরা সড়কের উন্নয়ন কাজ করছি, এতে অনেক সড়কের উপর খুঁটি রেখেই নির্মাণ কাজ করতে হচ্ছে। এতে যেমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে আবার এক সময় খুঁটি অপসারণ করলে সড়ক পুনরায় খনন করতে হবে। এতে সড়কের উন্নয়ন ব্যয় বেড়ে যাবে। এজন্য মেয়র বিদ্যুৎ বিভাগের সহযোগিতা ও সমন্বয় কামনা করেন।
এ বিষয়ে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী যুবরাজ চন্দ্র পাল বলেন, বিশাল আয়তনের এই সিটি এলাকায় হঠাৎ করে বিপুলসংখ্যক বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তরের বাজেট এই মুহূর্তে আমাদের নেই। তবে সিটি করপোরেশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে বিদ্যমান সড়কের উন্নয়নকাজে কতগুলো খুঁটি স্থানান্তর করতে হবে এর একটি জরিপ শুরু করেছি আমরা। পরে প্রকল্প তৈরির মাধ্যমে তা স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।