নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: স্বপ্নভঙ্গের এক নগরীর নাম গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গাসিক)। পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর তিনজন নির্বাচিত মেয়রের কেউই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি।
সিটি করপোরেশনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, মহানগরীতে এক যুগেও দৃশ্যমান সেবা বাড়েনি। বেড়েছে দুর্ভোগ। বাসযোগ্য পরিকল্পিত নগরায়ণ ও উন্নত নাগরিক সেবাদানের যে লক্ষ্য নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত হয়েছিল, সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে।
মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি ৩২৯ দশমিক ৯০ বর্গমিটার আয়তনের এই শিল্প এলাকা নিয়ে গঠিত হয় সিটি করপোরেশন। বর্তমানে নগরীতে ৬০ লাখের বেশি মানুষের বসবাস। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখল-দূষণ ও দুর্গন্ধে মানুষের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, খানাখন্দ ভরা রাস্তা, নেই নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ময়লার নির্দিষ্ট ডাম্পিংস্টেশন নেই। সড়কে ট্রাফিকব্যবস্থাও দুর্বল। মশা আর ছিনতাইকারীর রাজ্যে আতঙ্কময় হয়ে ওঠে রাতের নাগরিক জীবন।
প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ‘মেয়র’ সংকট ছিল সিটি করপোরেশনে। তথ্যানুসারে, বিগত প্রায় এক যুগের তিন বছরই ভারপ্রাপ্ত মেয়র দিয়ে চলে সিটি করপোরেশন। সর্বশেষ এক বছরের মাথায় অপসারণ করা হয়েছে মেয়র জায়েদা খাতুনকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে আওয়ামী আমলে নগরবাসী প্রথম সিটি নির্বাচনে প্রথম মেয়র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম এ মান্নানকে। বিরোধী রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তিনি তেমন কোনো উন্নয়ন বরাদ্দ পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ২৩ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা হয় তাঁর। মান্নানের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আসাদুর রহমান কিরন। দ্বিতীয় নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম সিটি মেয়র নির্বাচিত হন। নানা অনিয়ম, ক্ষতিপূরণ না দিয়ে হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি উচ্ছেদসহ নানা অভিযোগে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাঁকে মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।
এতে আবারও অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে নগরবাসী।
সর্বশেষ ২০২৩ সালের নির্বাচনে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হলে ঋণখেলাপির কারণে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। তবে নির্বাচনের অপর প্রার্থী তাঁর মা জায়েদা খাতুন জয়ী হন। কিন্তু জায়েদা খাতুন ১৫ মাস দায়িত্ব পালনকালে কোথাও কোনো দৃশ্যমান কাজ করতে পারেননি। বরং নির্বাচনের আগে চলমান যে কাজগুলো ছিল, সেগুলোও বিভিন্ন অজুহাতে বন্ধ করে রাখা হয়। ইশতেহারে ট্যাক্স মওকুফের কথা বলা হলেও সেই কথা রাখা হয়নি।
গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অনেক আশা নিয়ে জায়েদা খাতুনকে ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই আশায় গুড়ে বালি। গত ১৫ মাসে সাবেক মেয়র নগরবাসীর কোনো একটি চাহিদা পূরণ করতে পারেননি।’
সার্বিক বিষয় জানতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জায়েদা খাতুনের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম শফিউল আলম বলেন, মেয়র ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু তিনি লেখাপড়া জানেন না। মেয়র হওয়ার পর এখন তিনি স্বাক্ষর দিতে পারেন। মায়ের লেখাপড়া না জানার সুযোগে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম কাজে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করতেন।
প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার একটি দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। সেই আদর্শের জায়গা থেকে কাজ করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।