নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: কমনওয়েলথ এডুকেশনাল মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়া কমনওয়েলথ অব লার্নিং, কানাডা এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি)—এর যৌথ উদ্যোগে “বাংলাদেশে মিশ্র টেকনিক্যাল এবং পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এর উপর স্টেকহোল্ডারদের পরামর্শ” শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সোমবার, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীপুর ক্যাম্পাসে কেন্দ্রীয় কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এস এম এ ফায়েজ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি, শিল্প ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, তার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনলাইন ও মুখোমুখি শিক্ষার সমন্বয়ে পরিচালিত শিক্ষা কার্যক্রম—এই খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। এই ওয়ার্কশপের মূল লক্ষ্য হলো—নীতিনির্ধারক, শিক্ষাবিদ, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের অভিজ্ঞতা, মতামত ও সুপারিশের আলোকে একটি সমন্বিত কৌশল নির্ধারণ করা, যা বাংলাদেশে এর সফল বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ধরণের অংশীজন পরামর্শভিত্তিক কর্মশালা মানসম্পন্ন, দক্ষতাভিত্তিক ও শ্রমবাজার উপযোগী শিক্ষানীতি প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে”।
উদ্বোধনী অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. বি. এম. ওবায়দুল ইসলাম। উপাচার্য বলেন, “টেকনিক্যাল এবং পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ খাত বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের যুবকদের উপযুক্ত দক্ষতা প্রদান করার মাধ্যমে আমরা তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারি এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি। কিন্তু, এটি কেবলমাত্র একটি ঐতিহ্যগত পদ্ধতির মাধ্যমে সম্ভব নয়; আমাদের এ ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তি এবং নতুন শিক্ষণ পদ্ধতির সমন্বয় ঘটাতে হবে। এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও অভিজ্ঞতা গ্রহণ করার সুযোগ পাবো, যাতে আমরা আমাদের উন্নয়ন সম্পর্কে আরও কার্যকর কৌশল গ্রহণ করতে পারি। এই কর্মশালা শুধু মাত্র একটি আলোচনা সভা নয়, বরং একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা বাস্তবায়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আশা করি, এই কর্মশালার মাধ্যমে আমরা একটি শক্তিশালী দিকনির্দেশনা পেতে সক্ষম হবো”।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বাউবির গভর্নিং বোর্ডের সদস্য জনাব সিদ্দিক জোবায়ের। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশেষত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, প্রযুক্তিগত এবং পেশাগত শিক্ষা খাতের উন্নয়নে সর্বদাই অঙ্গীকারাবদ্ধ। বর্তমান সময়ে, প্রযুক্তির দ্রুত উন্নতি এবং শ্রম বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি। এ ধরণের কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে আমার বিশ্বাস”।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাউবির প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ড. এম. শমশের আলী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের দিকে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে দক্ষ জনশক্তির কোনো বিকল্প নেই। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এই দক্ষ জনশক্তি তৈরির প্রধান হাতিয়ার। যুগের চাহিদা এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযুক্তিগত এবং পেশাগত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও কার্যকর করে তুলতে হবে। আমরা যদি সবাই একত্রে কাজ করি এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা এবং মতামত সঠিকভাবে শেয়ার করি, তবে নিশ্চিতভাবেই এ পদ্ধতির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শুধু আধুনিকই হবে না, বরং আমাদের যুব সমাজের জন্যও তৈরি হবে একটি আরও উজ্জ্বল ভবিষ্যত”।
কমনওয়েলথ এডুকেশনাল মিডিয়া সেন্টার ফর এশিয়া, ভারত এর পরিচালক ড. বশীরহামাদ শাদরাচ মূল বক্তা হিসেবে ভার্চুয়ালি তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং আমি বিশ্বাস করি, এটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানের করবে। মিশ্র শিক্ষা পদ্ধতি যেখানে অনলাইন এবং অফলাইন শিক্ষার সমন্বয় ঘটানো হয়—এটি আধুনিক যুগের শিক্ষার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ, স্বাধীনতা, এবং নতুন দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ তৈরি করবে। ভারতের মতো দেশে আমরা দেখেছি, এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেমন নিজের গতিতে শিখতে পারে, তেমনি তারা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে বাজারে কর্মসংস্থানের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একাধিক সুবিধা নিয়ে আসে, যেমন: নতুন প্রযুক্তি ও টুলস ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি। স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিখার সুযোগ, যা একটি স্বচ্ছ, সহজ এবং গতিশীল পদ্ধতি। কম খরচে শিক্ষা, যা আর্থিক বাধা কাটিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করে”।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বাউবির প্রো—উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. দিল রওশন জিন্নাত আরা নাজনীন। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন, বাউবির প্রো—উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, বাউবির রেজিস্ট্রার ড. মহা শফিকুল আলম।
এই কর্মশালায় বাউবির বিভিন্ন স্কুল ও বিভাগের ডীন, পরিচালকসহ ৩৭ জন শিক্ষক ও কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মিশ্র শিক্ষার সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ এবং বাস্তবায়ন কৌশল নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।