নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে হরহামেশা চুরি হচ্ছে পশুপাখি। গত বছরের ২৩ নভেম্বর দুটি গ্রিন ম্যাকাও পাখির পর গত ২৩ মার্চ রাতে চুরি হয় তিনটি আফ্রিকান লেমুর। পশুপাখি চুরির সঙ্গে পার্কের কর্মচারীদের জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ম্যাকাও চুরির মামলায় এক কর্মচারীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। পার্ক কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরিচ্যুত করেছে। এদিকে লেমুর চুরির মামলার তদন্তই শুরু হয়নি।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. রফিকুল ইসলাম জানান, রাতে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন আটজন প্রহরী। পশুপাখিগুলো নিরাপদ রাখতে প্রথমে দরকার মজবুত সীমানাপ্রাচীর। গত ৫ আগস্ট ভাঙচুরের সময় সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে, কিন্তু নতুন ক্যামেরা বসানো হয়নি। ক্যামেরা থাকলে সহজে চুরির বিষয়টি শনাক্ত করা যেত। বেশ কিছু পশুপাখির নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ২৩ নভেম্বর ভোরে পার্কের পাখিশালা থেকে দুটি গ্রিন ম্যাকাও পাখি চুরি হয়। পরদিন পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. রাজু আহমেদ শ্রীপুর থানায় মামলা করেন। খবর পেয়ে সেদিনই টঙ্গী থেকে একটি ম্যাকাওসহ মো. জহির নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বাড়ি শ্রীপুর উপজেলার ইন্দ্রপুর গ্রামে। জহিরের স্বীকারোক্তিতে পার্কের নিরাপত্তা প্রহরী মো. রফিকুল ইসলাম রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পার্ক কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। ম্যাকাও চুরিতে পাঁচজন জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও বাকি তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারি একটি নীলগাই প্রাচীর টপকে বেরিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ পর্যন্ত সেটিকে ফেরানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে গত ২৩ মার্চ রাতে সাফারি পার্ক থেকে চুরি হয় তিনটি লেমুর। পরদিন পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার মো. আনিছুর রহমান শ্রীপুর থানায় অভিযোগ করেন। কিন্তু এ পর্যন্ত তদন্তে নামেনি পুলিশ। অবশ্য লেমুর চুরির সপ্তাহখানেক আগে জামিনে বের হন ম্যাকাউ চুরি মামলার প্রধান আসামি জহির।
রিভার অ্যান্ড নেচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলম বলেন, সাফারি পার্কের অনিয়ম আর দুর্নীতির শেষ নেই। একটি নীলগাই সীমানাপ্রাচীর ডিঙিয়ে চলে গেল। এখন পর্যন্ত সেটিকে পার্কে ফেরানো যায়নি। এরপর ম্যাকাও চুরি হলো; এর একটি মেরে ফেলা হয়েছে। এই যে অনিয়ম, দুর্নীতি, অবহেলা—এগুলোর বিচার শেষ হতে না হতেই আবার আফ্রিকান লেমুর চুরি হলো। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কঠোর হলে বারবার চুরি হতো না। পার্কের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত করে কঠোর পদক্ষেপ নিলে এগুলো রোধ করা সম্ভব।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে গাজীপুর সাফারি পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, লেমুর বেষ্টনী ফাঁকা পড়ে রয়েছে। বেষ্টনীর নেট কাটা। বেষ্টনীর কাছের সীমানাপ্রাচীরের বেশ কয়েকটি অংশ ভাঙা। অবশ্য পুরো সীমানাপ্রাচীর জরাজীর্ণ। পার্কের অন্য পশুপাখির নিরাপত্তার কথা ভেবে বেশ কিছু পশুপাখি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত এসিএফ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পশুপাখি চুরি ঠেকাতে প্রথমে পার্কের সীমানাপ্রাচীর মজবুত করতে হবে। সীমানাপ্রাচীরের অনেক পয়েন্টে ভাঙা রয়েছে। প্রাচীর ও বেষ্টনীর সীমানা খুবই জরাজীর্ণ, ফলে যে-কেউ ঢুকতে পারে। পাশাপাশি পশুপাখি চুরির সঙ্গে পার্কের কর্মচারীরা জড়িত। কারণ ম্যাকাউ চুরির ঘটনায় একজন নিরাপত্তা প্রহরী জড়িত থাকায় তিনি চাকরিচ্যুত হয়েছেন।
লেমুর চুরির বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দিই। থানায় অভিযোগ করি। কিন্তু এ পর্যন্ত পুলিশ তদন্তে আসেনি। মামলাও রুজু করেনি।
কিছু স্থানীয় ব্যক্তি রাজনৈতিক পরিচয়ে পার্ক থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে চায় উল্লেখ করে রফিকুল বলেন, এ জন্য তারা আমাদের দু-একজন মাদকাসক্ত কর্মচারীকে ব্যবহার করে এ ধরনের কাজ করতে পারে। অনিয়ম-দুর্নীতি-অবহেলার সঙ্গে যে-কেউ জড়িত থাকলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। এমনকি আমার বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি-অবহেলার প্রমাণ পেলে আমার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ম্যাকাও চুরির ঘটনায় থানায় মামলার পরপরই অভিযান পরিচালনা করে একটি ম্যাকাউ উদ্ধার করা হয়েছিল। দুজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ বিষয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। লেমুর চুরির অভিযোগের মামলা দুই দিন আগে রুজু হয়েছে। অভিযোগের ১৫ দিন পরে কেন মামলা রুজু হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়ে কাজ করছে পুলিশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।