রমিজ সাহেবের চোখে জল। অফিস যাওয়ার পথে হঠাৎ ধোঁয়া উঠল গাড়ির বনেট থেকে। মেকানিক বললেন—ইঞ্জিন ওভারহিট, মেরামতিতে ৩৫ হাজার টাকা! এই দৃশ্য কতবার দেখেছেন? আপনার গাড়ির ইঞ্জিনই তো তার প্রাণকেন্দ্র। একটু সচেতনতা আর নিয়মিত গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস মেনে চললে রোধ করা যায় ৮০% যান্ত্রিক সমস্যা, বলছে বাংলাদেশ অটোমোবাইল সমিতির সাম্প্রতিক সমীক্ষা। শুনতে জটিল মনে হলেও, কিছু সহজ নিয়ম আপনার গাড়িকে দিতে পারে নতুন জীবন, বাঁচাতে পারে লক্ষাধিক টাকা। ঢাকার ব্যস্ত রাস্তায় কিংবা গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে—একটি সুস্থ ইঞ্জিন মানেই নিরাপদ যাত্রা। আজ জানুন কিভাবে ঘরে বসেই করতে পারেন ইঞ্জিনের প্রাথমিক যত্ন, কখন ডাকতে হবে পেশাদারকে, আর কীভাবে দীর্ঘদিন রাখবেন আপনার লোহার বন্ধুকে সচল।
গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস: আপনার প্রথম ধাপই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স শুরুর আগে বোঝা জরুরি—কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এটি? ঢাকার শীর্ষ অটো ইঞ্জিনিয়ার এবং “অটোমোটিভ টেকনোলজি হ্যান্ডবুক”-এর লেখক ড. মোঃ ফারুক হোসেনের মতে, “নিয়মিত ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স শুধু গাড়ির আয়ুই বাড়ায় না, জ্বালানি খরচ কমায় ২০-৩০%, আর দূষণও নিয়ন্ত্রণ করে।” বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০% গাড়ি খারাপ হয় শুধু ইঞ্জিনের অবহেলার কারণে, নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (BRTA) এর ২০২৩ রিপোর্ট। প্রথম ধাপগুলো সহজ:
- মালিকের ম্যানুয়াল পড়ুন: প্রতিটি গাড়ির ইঞ্জিনের চাহিদা আলাদা। আপনার গাড়ির ম্যানুয়ালে মেইনটেনেন্স শিডিউল (প্রতি ৫,০০০ কি.মি. বা ৬ মাস) লেখা থাকে। ঢাকার মিরপুরে বসবাসরত রুমানা আক্তার বলেন, “টয়োটা এক্সিওর ম্যানুয়াল মেনে মাসে একবার তেল চেক করায় ৭ বছরেও ইঞ্জিনে কোনও সমস্যা হয়নি।”
- বেসিক টুলস কিট: বাড়িতে রাখুন:
- ইঞ্জিন অয়েল ডিপস্টিক
- ক্লিন রাগ বা মাইক্রোফাইবার কাপড়
- গ্লাভস
- টর্চলাইট
- বেসিক রেঞ্চ সেট
- সুইচ অন করার আগে: প্রতিদিন সকালে গাড়ি চালু করার আগে এক নজর দেখে নিন:
- মাটিতে তেল/পানির লিকেজ আছে কিনা
- ইঞ্জিন বেল্টে ফাটল বা ঢিলেঢালা ভাব
- ইঞ্জিন বে’তে কোনও অস্বাভাবিক তার ছেঁড়া বা খুলে যাওয়া
বাংলাদেশের আবহাওয়ার প্রভাব: দেশের আর্দ্র জলবায়ু ও ধুলোবালি ইঞ্জিনের জন্য চ্যালেঞ্জিং। চট্টগ্রামের মেকানিক জামাল উদ্দিন সতর্ক করেন, “সমুদ্রের লবণাক্ত বাতাস ইঞ্জিন পার্টসে জং ধরা ত্বরান্বিত করে। তাই উপকূলীয় এলাকার গাড়ির মেইনটেনেন্স বেশি ঘন ঘন দরকার।
ইঞ্জিন অয়েল: আপনার গাড়ির ‘জীবন রক্তের’ যত্ন নিন
ইঞ্জিন অয়েলকে গাড়ির ‘জীবন রক্ত’ বলা হয় যথার্থই। এটি শুধু যন্ত্রাংশের ঘর্ষণ কমায় না, তাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ধুলোময়লা পরিষ্কার রাখে। গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস এর মধ্যে এটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ:
- সঠিক তেল বাছাই: ম্যানুয়ালে উল্লিখিত সান্দ্রতা গ্রেড (যেমন: 5W-30, 10W-40) এবং ধরন (মিনারেল, সেমি-সিনথেটিক, ফুলি সিনথেটিক) মেনে চলুন। ঢাকার জনপ্রিয় অটো পার্টস শপ ‘মোটর ওয়ার্ল্ড’-এর মালিক শফিকুল ইসলাম বললেন, “বাংলাদেশের গরমে সিনথেটিক অয়েল বেশি কার্যকর, তবে দাম কিছুটা বেশি।
- চেক করার পদ্ধতি (প্রতি ১৫ দিন বা ৫০০ কি.মি.):
- গাড়ি সমতল জায়গায় পার্ক করুন, ইঞ্জিন বন্ধ রাখুন (কমপক্ষে ১০ মিনিট পর).
- অয়েল ডিপস্টিক বের করে কাপড় দিয়ে মুছে নিন।
- আবার পুরোটা ঢুকিয়ে বের করুন।
- দেখুন তেলের স্তর ডিপস্টিকের “MIN” ও “MAX” মার্কিং এর মধ্যে আছে কিনা। এই ভিডিওটি দেখুন সহজ নির্দেশিকার জন্য
- রঙ ও গঠন: তেলের রঙ স্বচ্ছ বাদামি হওয়া উচিত। কালো, ঘন বা দানাদার মনে হলে অবিলম্বে পরিবর্তন করুন।
- অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন: তেল বদলানোর সময় অয়েল ফিল্টার অবশ্যই বদলাবেন। পুরনো ফিল্টার নতুন তেল দূষিত করে।
ইঞ্জিন অয়েল পরিবর্তন সময়সীমা:
গাড়ির ধরন | মিনারেল অয়েল | সিনথেটিক অয়েল |
---|---|---|
নতুন গাড়ি | ৫,০০০ কি.মি. / ৬ মাস | ১০,০০০ কি.মি. / ১ বছর |
পুরানো গাড়ি | ৪,০০০ কি.মি. / ৪ মাস | ৭,০০০ কি.মি. / ৯ মাস |
এয়ার ফিল্টার ও কুল্যান্ট: ইঞ্জিনের ‘শ্বাস-প্রশ্বাস’ ও ‘শীতলতা’ নিশ্চিত করুন
ইঞ্জিনের দক্ষতার জন্য পরিষ্কার বাতাস ও ঠান্ডা থাকা অপরিহার্য। এই দুটি উপাদানই গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস এর গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ।
এয়ার ফিল্টার: ইঞ্জিনের ফুসফুস
- ভূমিকা: ইঞ্জিনে যাওয়া বাতাস থেকে ধুলো, বালি, পোকামাকড় আটকে দেয়। বন্ধ ফিল্টার জ্বালানি খরচ ১০% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।
- চেক ও পরিবর্তন (প্রতি ১০,০০০ কি.মি. বা ১ বছর):
- সাধারণত ইঞ্জিন বে’র পাশেই প্লাস্টিকের বক্সে থাকে ফিল্টার।
- ক্লিপ খুলে ফিল্টার বের করুন।
- সূর্যের দিকে ধরে দেখুন। আলো না গেলে বা অতিরিক্ত ময়লা দেখলে পরিবর্তন করুন।
- ঢাকার ধুলোর কারণে ফিল্টার দ্রুত বন্ধ হয়। তাই বাংলাদেশে প্রতি ৭,০০০ কি.মি. পর চেক করা ভালো।
- ধরন: সাধারণ কাগজের ফিল্টার বা পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ফোম/কটন ফিল্টার (পরিষ্কার করতে হয়)।
কুলিং সিস্টেম: ইঞ্জিনের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রক
- কুল্যান্ট/এন্টিফ্রিজের গুরুত্ব: শুধু পানি ব্যবহার করলে গরমে ফুটে যাওয়া, শীতে জমে ফাটল ধরার ঝুঁকি থাকে। কুল্যান্ট স্ফুটনাংক বাড়ায়, হিমাঙ্ক কমায় এবং যন্ত্রাংশে জং ধরা রোধ করে।
- লেভেল চেক (প্রতি মাসে):
- ইঞ্জিন সম্পূর্ণ ঠান্ডা অবস্থায় (গরম অবস্থায় নয়!) রেডিয়েটারের ক্যাপ খুলুন (সতর্কতার সাথে)।
- দেখুন কুল্যান্ট রিজার্ভার ট্যাঙ্কে তরল “FULL” ও “LOW” মার্কিং এর মধ্যে আছে কিনা।
- রঙ: কুল্যান্ট সাধারণত সবুজ, লাল বা কমলা হয়। ম্যানুয়াল অনুযায়ী সঠিক ধরন ব্যবহার করুন। ভিন্ন রঙের কুল্যান্ট মিশ্রিত করবেন না।
- ফ্লাশিং (প্রতি ২ বছর বা ৪০,০০০ কি.মি.): পুরনো কুল্যান্টে অম্লতা বেড়ে যায়, যা রেডিয়েটার ও ওয়াটার পাম্প নষ্ট করে। পেশাদার গ্যারেজে সিস্টেম ফ্লাশ করান।
স্পার্ক প্লাগ ও ফুয়েল সিস্টেম: দহনের দক্ষতা বাড়ান
সুষ্ঠু দহন প্রক্রিয়া ইঞ্জিনের পারফরম্যান্স ও জ্বালানি দক্ষতার মূল চাবিকাঠি। গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস এর এই অংশে মনোযোগ দিন।
স্পার্ক প্লাগ: ইগনিশনের সূচনা
- কাজ: ইঞ্জিন সিলিন্ডারে বাতাস-জ্বালানি মিশ্রণে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করে প্রজ্বলিত করে।
- খারাপ প্লাগের লক্ষণ:
- ইঞ্জিন স্টার্ট নিতে সমস্যা
- ইঞ্জিনের অনিয়মিত চলন (Rough Idling)
- জ্বালানি খরচ বেড়ে যাওয়া
- ত্বরণে দুর্বলতা
- পরিবর্তনের সময়: ম্যানুয়ালে উল্লেখিত মাইলেজ (সাধারণত ৩০,০০০ – ৬০,০০০ কি.মি.) বা লক্ষণ দেখলেই। ঢাকার ‘প্রিমিয়ার অটো সার্ভিস’-এর প্রধান টেকনিশিয়ান রবিন মিয়া বলেন, “বাংলাদেশে নিম্নমানের জ্বালানির কারণে স্পার্ক প্লাগ দ্রুত কার্বন জমে নষ্ট হয়। তাই লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করাই ভালো।”
- প্লাগের ধরন: সাধারণ তামার, প্লাটিনাম বা ইরিডিয়াম। প্লাটিনাম/ইরিডিয়াম প্লাগ দীর্ঘস্থায়ী কিন্তু দামি।
ফুয়েল ফিল্টার ও ফুয়েল সিস্টেমের পরিচ্ছন্নতা
- ফুয়েল ফিল্টার: জ্বালানির অমেধ্য (পানি, ময়লা) ইঞ্জিনে যাওয়া আটকায়। বন্ধ হলে জ্বালানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।
- পরিবর্তন: ম্যানুয়াল নির্দেশনা (সাধারণত ২০,০০০ – ৪০,০০০ কি.মি.)। বাংলাদেশে প্রতি ১৫,০০০ কি.মি. পর চেক করা যুক্তিযুক্ত।
- ফুয়েল ইনজেক্টর ক্লিনিং: নিম্নমানের জ্বালানি বা দীর্ঘদিন গাড়ি না চালালে ইনজেক্টর বন্ধ হতে পারে। ফলে স্প্রে প্যাটার্ন নষ্ট হয়, জ্বালানি খরচ বাড়ে। প্রতি ৪০,০০০ কি.মি. পর পেশাদার গ্যারেজে আল্ট্রাসনিক ক্লিনিং করানো ভালো।
মাসিক ও বাৎসরিক মেইনটেনেন্স চেকলিস্ট: আপনার কাজ সহজ করুন
একটি সহজ চেকলিস্ট মেনে চললে গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস গুলো মনে রাখা সহজ হবে:
মাসিক চেকলিস্ট (ঘরে বসেই করুন):
- ইঞ্জিন অয়েল লেভেল ও কন্ডিশন: ডিপস্টিক দিয়ে চেক করুন।
- কুল্যান্ট লেভেল: রিজার্ভার ট্যাঙ্ক চেক করুন (ইঞ্জিন ঠান্ডা থাকাকালীন)।
- বেল্টের অবস্থা: পাওয়ার স্টিয়ারিং, এয়ার কন্ডিশনার, অল্টারনেটর বেল্টে ফাটল, ফ্রে বা অতিরিক্ত ঢিল দেখুন। টেনে দেখুন – ১/২ ইঞ্চির বেশি নড়ে না।
- যে কোনও লিক: ইঞ্জিন বে’র নিচে মাটিতে তেল, পানি বা কুল্যান্টের দাগ আছে কিনা দেখুন।
- এয়ার ফিল্টার (দৃশ্যত পরীক্ষা): বক্স খুলে দেখুন অতিরিক্ত ময়লা আছে কিনা।
বাৎসরিক/নির্দিষ্ট মাইলেজ পর চেকলিস্ট (পেশাদারের সাহায্য নিন):
- ইঞ্জিন অয়েল ও অয়েল ফিল্টার পরিবর্তন (ম্যানুয়াল অনুযায়ী)
- এয়ার ফিল্টার পরিবর্তন (ম্যানুয়াল অনুযায়ী বা দরকার হলে)
- ফুয়েল ফিল্টার পরিবর্তন (ম্যানুয়াল অনুযায়ী)
- স্পার্ক প্লাগ পরীক্ষা ও পরিবর্তন (প্রয়োজনে)
- কুলিং সিস্টেম ফ্লাশ ও কুল্যান্ট পরিবর্তন (প্রতি ২ বছর)
- থ্রটল বডি পরিষ্কার করা
- ইঞ্জিনের বিভিন্ন সেন্সর পরীক্ষা (OBD-II স্ক্যানার দিয়ে)
কখন পেশাদার মেকানিকের শরণাপন্ন হবেন?
সব কাজ ঘরে করা যায় না। এই লক্ষণগুলো দেখলে অবিলম্বে ভালো গ্যারেজে যোগাযোগ করুন:
- ইঞ্জিন ওয়ার্নিং লাইট জ্বলা: ড্যাশবোর্ডে ইঞ্জিনের আইকন (চেক ইঞ্জিন লাইট) জ্বললে।
- অস্বাভাবিক শব্দ: ইঞ্জিন থেকে টিকটিক, নকিং, গর্জন, হুইসেলিং শব্দ আসলে।
- অতিরিক্ত ধোঁয়া: এক্সস্ট থেকে নীল (তেল পোড়া), সাদা ঘন (কুল্যান্ট পোড়া) বা কালো ধোঁয়া (অসম্পূর্ণ দহন) বের হলে।
- ইঞ্জিন ওভারহিটিং: টেম্পারেচার গেজ রেড জোনে উঠে গেলে বা ওভারহিট ওয়ার্নিং লাইট জ্বললে।
- শক্তিতে ঘাটতি: স্পষ্টভাবে গাড়ির পারফরম্যান্স কমে গেলে, ত্বরণ দুর্বল লাগলে।
- অনিয়মিত ইডলিং: গাড়ি স্টেশনারি থাকাকালীন কাঁপলে বা RPM ওঠানামা করলে।
গ্যারেজ বাছাইয়ের টিপস: BRTA অনুমোদিত বা স্বনামধন্য গ্যারেজ বেছে নিন। ঢাকার ‘অটোমেকার্স’ বা চট্টগ্রামের ‘প্রেস্টিজ অটো’র মতো প্রতিষ্ঠান বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিন সার্ভিস দেয়। সার্ভিসের আগে খরচের আনুমানিক হিসাব চেয়ে নিন। বিআরটিএ-র অনুমোদিত সার্ভিস সেন্টার তালিকা এখানে পাবেন (সর্বশেষ আপডেট: জানুয়ারি ২০২৪)।
সাধারণ ইঞ্জিন সমস্যা ও ঘরোয়া সমাধান (প্রাথমিক)
কিছু ছোট সমস্যার সমাধান আপনি নিজেই করতে পারেন:
- ইঞ্জিন স্টার্ট নিচ্ছে না (কিন্তু ব্যাটারি ঠিক আছে):
- সম্ভাব্য কারণ: খারাপ স্পার্ক প্লাগ, ফুয়েল ফিল্টার বন্ধ, ফুয়েল পাম্প ত্রুটি।
- কী করবেন: প্রথমে স্পার্ক প্লাগ ও ফুয়েল ফিল্টারের অবস্থা চেক করুন (যদি অভিজ্ঞতা থাকে)। না পারলে গ্যারেজে ফোন করুন। আমাদের গাইড [গাড়ি স্টার্ট না নিলে করণীয়] এ বিস্তারিত পাবেন।
- ইঞ্জিন ওভারহিটিং:
- তাত্ক্ষণিক করণীয়: গাড়ি নিরাপদ জায়গায় থামান। ইঞ্জিন বন্ধ করে কমপক্ষে ৩০ মিনিট ঠান্ডা হতে দিন। কখনই গরম ইঞ্জিনে রেডিয়েটার ক্যাপ খুলবেন না! কুল্যান্ট লেভেল চেক করুন (ঠান্ডা হয়ে গেলে)। কম থাকলে ম্যানুয়াল অনুযায়ী কুল্যান্ট/পানি মিশিয়ে পরিপূর্ণ করুন (শুধু পানি দেবেন না দীর্ঘমেয়াদে)। তারপরও সমস্যা হলে গ্যারেজে নিন।
- অস্বাভাবিক শব্দ (টিকটিক):
- সম্ভাব্য কারণ: ইঞ্জিন অয়েল লেভেল কম, অয়েল প্রেশার কম, ভালভের সমস্যা।
- কী করবেন: প্রথমেই ইঞ্জিন অয়েল লেভেল চেক করুন। কম থাকলে সঠিক গ্রেডের অয়েল দিয়ে পরিপূর্ণ করুন। শব্দ না গেলে মেকানিক দেখান।
ইঞ্জিনের আয়ু বাড়ানোর মূলমন্ত্র হলো নিয়মিততা আর সতর্কতা। আপনার গাড়ির ইঞ্জিন শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি আপনার পরিবারের নিরাপত্তা ও স্বাধীন চলাচলের চাবিকাঠি। আজ থেকেই এই গাড়ির ইঞ্জিন মেইনটেনেন্স টিপস গুলো অনুসরণ করুন। এক কাপ চায়ের সময় বের করুন প্রতি সপ্তাহে আপনার লোহার বন্ধুটির জন্য। ডিপস্টিকটা টেনে দেখুন, কানে খানিকক্ষণ শুনুন তার গর্জন। এই ছোট ছোট পদক্ষেপই আপনার গাড়িকে দেবে আরও এক লাখ মাইল পথ চলার শক্তি, আর আপনাকে বাঁচাবে অপ্রত্যাশিত বিপুল খরচ ও মানসিক চাপ থেকে। আপনার গাড়ির হৃদয়স্পন্দন যেন অনন্তকাল ধরে বাজতে থাকে!
জেনে রাখুন
প্রশ্ন: বাংলাদেশে গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল কত দিন পর পর বদলানো উচিত?
উত্তর: ম্যানুয়াল নির্দেশিত মাইলেজ বা সময়সীমা (যা আগে আসে) মেনে চলাই উত্তম। সাধারণত মিনারেল অয়েলের জন্য ৫,০০০ কি.মি. বা ৬ মাস এবং ফুলি সিনথেটিক অয়েলের জন্য ১০,০০০ কি.মি. বা ১২ মাস। তবে বাংলাদেশের ধুলো, যানজট ও আবহাওয়ার প্রভাবে বিশেষজ্ঞরা প্রতি ৭,০০০-৮,০০০ কি.মি. বা ৬ মাস পরপর চেক ও প্রয়োজনে বদলানোর পরামর্শ দেন।
প্রশ্ন: চেক ইঞ্জিন লাইট জ্বলে গেলে কি করব? তাত্ক্ষণিক গাড়ি চালানো কি বিপজ্জনক?
উত্তর: চেক ইঞ্জিন লাইট জ্বললে প্রথমে গাড়ি নিরাপদ স্থানে থামিয়ে ইঞ্জিন বন্ধ করুন। কিছুক্ষণ পর আবার স্টার্ট দিলে লাইট নিভে গেলে সাময়িক ত্রুটি হতে পারে। লাইট জ্বালা অবস্থায় চালালে গুরুতর ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত ধোঁয়া, শব্দ বা পারফরম্যান্সে সমস্যা না থাকলে সতর্কতার সাথে নিকটস্থ গ্যারেজে নিয়ে যান। কোনও অস্বাভাবিকতা থাকলে টোয়িং করানোই নিরাপদ। OBD-II স্ক্যানার দিয়ে কোড পড়ে কারণ জানা যায়।
প্রশ্ন: পুরোনো গাড়ির ইঞ্জিনের বিশেষ যত্ন কী?
উত্তর: পুরোনো গাড়ির ইঞ্জিনে বিশেষ মনোযোগ দরকার। নিয়মিত ও ঘনঘন (প্রতি ৩০০০-৪০০০ কি.মি.) ইঞ্জিন অয়েল ও ফিল্টার বদলান। কুলিং সিস্টেমের দিকে বিশেষ নজর রাখুন, ওভারহিটিং ঝুঁকি বেশি। ভাল্ব ক্লিয়ারেন্স মাঝেমধ্যে চেক করান। হাই মাইলেজ ইঞ্জিনের জন্য উচ্চ সান্দ্রতার (যেমন ২০W-৫০) বা বিশেষভাবে তৈরি ‘হাই মাইলেজ’ ইঞ্জিন অয়েল ব্যবহার করা ভালো। জ্বালানি সিস্টেম ক্লিনার ব্যবহার উপকারী হতে পারে।
প্রশ্ন: গাড়ি দীর্ঘদিন (১ মাস+) না চালালে ইঞ্জিনের কী ক্ষতি হয়?
উত্তর: দীর্ঘদিন গাড়ি না চালালে ইঞ্জিন অয়েল নিচে জমে যায়, লুব্রিকেশন কমে। ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়। ফুয়েল সিস্টেমে জ্বালানি জমে গিয়ে গন্ধি হতে পারে বা ইনজেক্টর বন্ধ হতে পারে। টায়ার ফ্ল্যাট স্পট হতে পারে। সপ্তাহে অন্তত একবার ১৫-২০ মিনিট গাড়ি চালানো বা ইঞ্জিন চালু রাখা উচিত। না পারলে ব্যাটারি কানেকশন খুলে রাখুন এবং টায়ারের চাপ ঠিক রাখুন।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের জ্বালানির মান ইঞ্জিনের উপর কী প্রভাব ফেলে? মেইনটেনেন্সে কী বিশেষ পদক্ষেপ নেব?
উত্তর: বাংলাদেশে পেট্রোল/ডিজেলের মান প্রায়ই পরিবর্তনশীল এবং কখনও কখনও নিম্নমানের হতে পারে। এতে কার্বন জমা, ইঞ্জিন নকিং, ফুয়েল ইনজেক্টর বন্ধ হওয়া, স্পার্ক প্লাগ দ্রুত নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। প্রতিরোধে প্রতি ৫,০০০ কি.মি. পর ভালো মানের ফুয়েল সিস্টেম ক্লিনার ব্যবহার করুন। নির্দিষ্ট সময়ে ফুয়েল ফিল্টার বদলান। নামকরা পেট্রোল পাম্প থেকে জ্বালানি নিন। উচ্চ কম্প্রেশন ইঞ্জিনে অকটেন বুস্টার ব্যবহার ভাবা যেতে পারে।
প্রশ্ন: ইঞ্জিন ওয়াশ করানো কি ভালো? নিজে কীভাবে পরিষ্কার করব?
উত্তর: পেশাদারভাবে ইঞ্জিন বে পরিষ্কার করানো (স্টিম ক্লিনিং বা ড্রাই ক্লিনিং) ভালো। ময়লা, তেল জমে তাপ নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করে এবং ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে ইঞ্জিন গরম থাকাকালীন কখনই পানি বা ক্লিনার স্প্রে করবেন না! নিজে পরিষ্কার করতে: ইঞ্জিন ঠান্ডা করুন। ইলেকট্রিক্যাল পার্টস প্লাস্টিক/ফয়েল দিয়ে ঢেকে দিন। হালকা ডিটারজেন্ট মেশানো পানি ও নরম ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ময়লা তুলুন। তারপর হালকা পানির ঝাপটা দিন (হাই প্রেশার জেট নয়)। ভালো করে শুকিয়ে নিন। ক্লিনার ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। পেশাদার পরিষেবা নেওয়াই নিরাপদ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।