জুমবাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশ পুলিশে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত কুতুবদিয়া উপজেলার তারেক আজিজ আবেগে কেঁদে ফেলে বলেন, আমি গার্মেন্টে নামমাত্র বেতনে কাজ করতাম। সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত কাজ করে যা পেতাম, তা নিয়ে আমার সংসার চলতো না।
তিনি আরো বলেন, গার্মেন্টের চাকরি নিয়ে আমি এক অনিশ্চিত যাত্রার মানুষ ছিলাম। এরই মধ্যে শুধু ১০৩ টাকা ব্যয় করে এখন পুলিশে চাকরি পাওয়ায়, আমার পরিবারে ব্যাপক আশার সঞ্চার হয়েছে। আমি এজন্য প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি ও কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
তারেক আজিজ বলেন, আমি কৃষকের সন্তান। শুনতাম পুলিশে চাকরি পেতে কয়েক লাখ টাকা দিতে হয়। কিন্তু আমার কৃষক বাবা কোথায় পাবেন এত টাকা? আল্লাহর রহমতে আজ টাকা ছাড়াই পুলিশের চাকরি পেয়েছি। লোকজন বিশ্বাসও করে না টাকা ছাড়াই পুলিশের চাকরি হয়। কিন্তু এমন এক অবিশ্বাস্য চাকরি আজ আমি পেয়েছি। এই বলেই আবেগে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন তারিক আজিজ।
তোফাজ্জল হোসেন সাগর নামের আরেকজন মঞ্চে উঠে বলেন, আমার বাবা একজন রাজমিস্ত্রী। পুলিশে ১০৩ টাকায় চাকরি না পেলে আমার রাজমিস্ত্রী বাবা কীভাবে চাকরির টাকা যোগাড় করবেন আমার জন্য? রুপসী দেবী নামের এক তরুণী বলেন, আমার ভ্যানগাড়ি চালক বাবা আজ অনেক খুশি। ভগবানের কাছে আমার বাবার কত কৃতজ্ঞতা-আমার এমন একটি চাকরি হওয়ায়।
উর্মি দে দিন মজুর বাবার কন্যা। সাত ভাই বোনের মধ্যে দুই বোন ও এক ভাই প্রতিবন্ধী। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসারে পুলিশে আমার চাকরি হওয়ায় আমার পরিবার কী যে খুশি, আমি এখানে বুঝাতে পারব না। রীনা আকতারের মা রেহেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী নেই। এমন অবস্থায় আমার কন্যার চাকরি আমার জন্য সোনার হরিণ।
আনন্দ আর আবেগের কান্না যেন আছড়ে পড়েছিল পুলিশে নিয়োগের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতরা এবং তাদের মা’দের এমনসব আবেগঘন প্রতিক্রিয়ায়। গত ২ জুলাই কক্সবাজার জেলা পুলিশের উদ্যোগে নতুন রিক্রুট করা ৩৮৬ জন নির্বাচিতদের বৃহস্পতিবার পুলিশ লাইনে দেয়া সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে তাদের এমন আবেগঘন কথা শুনে উপস্থিত অতিথিরাও চমকে ওঠেন। অনুষ্ঠানে একজন বলেন, পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে আমাদের খুব ইতিবাচক ধারণা জম্মেছে। তার মতে, সাধারণ মানুষের কাছে পুলিশ সম্পর্কে ধারণা ক্রমাগত পাল্টাতে শুরু করেছে। যা দেশ ও নতুন প্রজন্মের জন্য একটা আশার বিষয়।
বক্তব্য দিতে গিয়ে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, পুলিশকে দেশপ্রেম নিয়েই দুষ্ট চক্রকে দমনে কাজ করতে হবে। সততা ও মানবিকতাকে সদা বুকে ধারণ করে যেতে হবে এগিয়ে। ধারণ করতে হবে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে।
তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে এবারের টিআরসি নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তা ও এ বিষয়ে কঠোর মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হয়েছে। যা কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ বাস্তবায়ন করেছে। এজন্য বক্তারা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও এসপি এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। পুরো সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানটি সততা, নৈতিকতা ও আন্তরিকতার মোহে আবদ্ধ ছিল।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনের সাংসদ মো. জাফর আলম বলেন, সেই শোকাবহ এবং বেদনাদায়ক আগস্ট মাসেই পুলিশের আজকের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও আগস্টের বেদনাবিধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ ও জাতির সুরক্ষায় নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় ঝাপিয়ে পড়ার জন্য তিনি তাদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের সভাপতি কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ পেয়ে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে জীবন যাত্রার মানকে উঁচু স্তরে নিয়ে যাওয়ার মানসিকতাকে পরিহার করতে হবে। সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবিক গুণাবলী দিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে টিআরসিদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সর্বপ্রথম পুলিশের ওপর বর্বরোচিত হামলা করেছিল।
তিনি বলেন, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ও আগস্টের বেদনাবিধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে দেশ ও জাতির সুরক্ষায় নিজেদেরকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ায় ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী এখন আর মান্ধাতা আমলের পুলিশ বাহিনী নেই। পুলিশ বাহিনীকে আগে ন্যূনতম বেতন ও সামান্য রেশন সুবিধা দেয়া হতো। ফলে পুলিশের সদস্যের সংসারে সবসময় টানাপোড়ন লেগে থাকতো। এখন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে বর্তমান সরকার আধুনিকায়ন করেছে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাহিনীতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। বেতন-ভাতা-সম্মানি, অবকাঠামোগত সুবিধা, যানবাহন সুবিধাসহ আরো অনেক সুবিধাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের এবং দৈনিক কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার তোফায়েল আহমদ তাদের বক্তৃতায় পুলিশে সততা, সাহসিকতা ও মানবিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) নিহাদ আদনান তাইয়ান, সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বাবুল বনিক, সহকারী পুলিশ সুপার (চকরিয়া সার্কেল) কাজী মতিউল হক ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার পিপিএম বক্তব্য রাখেন। সভায় নিয়োগপ্রাপ্ত টিআরসি দের ফুল দিয়ে সম্বর্ধনা জানানো হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।