নিজস্ব প্রতিবেদক,, গাজীপুর: দিনভর সুইং মেশিনের আওয়াজ আর রাতের নিঃশব্দ একাগ্রতা—এই দুই চিত্রে ভাগ হয়ে আছে বাবলি খাতুনের জীবন। পোশাক কারখানার সাধারণ কর্মী হলেও তিনি ব্যতিক্রম এক পথচলায় রয়েছেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে গড়ে তুলছেন নিজের স্বপ্নের ভিত্তি। উচ্চশিক্ষার প্রতি তার অদম্য আকাঙ্ক্ষা আজ অনেক নারী শ্রমিকের জন্য অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছে।
সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার মেয়ে বাবলি খাতুন বর্তমানে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি পোশাক কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কর্মরত। সেইসঙ্গে তিনি স্নাতক পড়ছেন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে।
গার্মেন্টসে ৮-১০ ঘণ্টার পরিশ্রমের পরও বাবলির কাছে দিন শেষ হয় না। রাত বাড়লেই শুরু হয় পড়ার লড়াই। কোচিং কিংবা টিউটরের সাহায্য ছাড়াই ইউটিউবের টিউটোরিয়াল আর নোটের ওপর ভরসা করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। পরীক্ষার সময় ছুটি নিয়ে পাড়ি জমান নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে, পরীক্ষা শেষে ফেরেন কাজের জায়গায়।
তাঁর এই কঠিন পথচলার পেছনে আছে জীবনের বাস্তবতা ও দায়বদ্ধতা। এইচএসসি পরীক্ষার পর বাবার ব্যবসায়িক বিপর্যয়ে পরিবার নিয়ে চলে আসেন গাজীপুরে। পরিবারকে টানতে গার্মেন্টসে যোগ দেন। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কখনো ফিকে হয়নি। বরং কঠিন জীবনযাপনই তাকে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করেছে।
“নারীরা গার্মেন্টসে কাজ করতে এসে জীবিকার তাগিদে অনেকেই পড়াশোনা ছেড়ে দেন। দীর্ঘদিন কাজ করেও তারা নিজেদের বদলে ফেলতে পারেন না, পদোন্নতি পান না, নেতৃত্বে যেতে পারেন না। কারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতার অভাব তাদের আত্মবিশ্বাস কেড়ে নেয়,” বলেন বাবলি খাতুন।
তিনি আরও বলেন, “আমি বিশ্বাস করি—চাইলেই সম্ভব। কাজের চাপ থাকবে, ক্লান্তি আসবে, কিন্তু ইচ্ছাশক্তি থাকলে পথও বেরিয়ে আসবে। আমি যেমন চেষ্টা করছি, অন্যরাও পারেন। শিক্ষার সঙ্গে অভিজ্ঞতা থাকলে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবেই।”
বাবলি খাতুন মনে করেন, নারীর উন্নয়নে পরিবার ও কর্মক্ষেত্রের সমর্থন অত্যন্ত জরুরি। পরিবার পাশে থাকলে কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া অনেক সহজ হয়। তার কথায়, “আমার পরিবার শুরু থেকেই পাশে ছিল। প্রতিষ্ঠান থেকেও সহানুভূতি পেয়েছি। সবাইকে বলব—নারী হলে ভেঙে পড়বেন না, বরং নিজেকে গড়ুন। শিক্ষার আলো একদিন আপনাকেও পথ দেখাবে।”
বাবলির মতো নারীরা আজও শ্রমজীবী সমাজে ‘বাতিঘর’ হয়ে উঠছেন। কঠিন বাস্তবতায়ও থেমে না থেকে যারা শিক্ষার আলোয় নিজেকে আলোকিত করতে চান, তাদের জন্য বাবলি খাতুন এক সাহসী প্রতিচ্ছবি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।