নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলায় বিপুল সেবাপ্রার্থী থাকলেও সেই তুলনায় নেই সহকারী কমিশনার (ভূমি) বা এসি ল্যান্ড অফিস ও জনবল। অফিস-জনবলের সংকটে কাঙ্ক্ষিত ভূমিসেবা পাচ্ছেন না স্থানীয়রা। এ কারণে ভীষণ ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আহরণও।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর সদর উপজেলা ও মহানগরী এলাকায় প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। সিটি করপোরেশন জনসংখ্যার ঘনত্ব ও আয়তনের কারণে সেবার মান বাড়াতে মহানগরী এলাকাকে ৮টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে ভাগ করে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশন সেবা দিতে মহানগরী ও সদর উপজেলায় ৩টি সাবরেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এসবের মধ্যে গাজীপুর সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার ২০০, সদর দ্বিতীয় যুগ্ম সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ১ হাজার ২৫০ এবং টঙ্গী সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ২ হাজারের বেশি দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশাল এই জনগোষ্ঠীকে ভূমিসেবা দেওয়ার জন্য এসি ল্যান্ড অফিস রয়েছে মাত্র দুটি (গাজীপুর সদর ভূমি অফিস ও টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল অফিস)।
স্থানীয়দের দাবি, দুটি এসি ল্যান্ড (সহকারী কমিশনার-ভূমি) অফিস ও স্বল্প জনবল দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে সেবা দেওয়া কঠিন কাজ। এ কারণে জমির নামজারি, জমা ভাগ, খাজনা আদায়, বিবিধ মামলা (মিস কেস) নিষ্পত্তি, নতুন পরচা তৈরির জন্য তাঁদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবাপ্রার্থীদের। তাঁরা এসি ল্যান্ড অফিস ও জনবল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।
টঙ্গী সার্কেলের এসি ল্যান্ড সাইদুজ্জামান হিমু বলেন, মহানগরীর গাছা থানা, কাশিমপুর থানা, টঙ্গী পূর্ব থানা ও টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা নিয়ে টঙ্গী রাজস্ব সার্কেল অফিস গঠিত। এ সার্কেলের অধীনে তিনটি ইউনিয়ন ভূমি (তহসিল) অফিস রয়েছে। তাঁর সার্কেলে মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার থেকে ১,২০০ নামজারির আবেদন জমা পড়ে।
সদরের এসি ল্যান্ড মঈন খান এলিস বলেন, সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও নগরীর কোনাবাড়ী, বাসন, পুবাইল ও সদর মেট্রো থানা এলাকায় সদর ভূমির অফিসের অন্তর্ভুক্ত। এই অফিসের অধীনে সাতটি ইউনিয়ন ভূমি (তহশিল) অফিস রয়েছে। এই অফিসে প্রতি মাসে গড়ে আড়াই হাজারের বেশি নামজারির আবেদন জমা পড়ে।
গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন বলেন, গাজীপুর সিটি এলাকা এবং সদর উপজেলার অর্ধকোটির বেশি মানুষের ভূমিসেবা দেওয়ার জন্য দুজন এসি ল্যান্ড খুবই অপ্রতুল। এটি যে কেউ বুঝতে পারে। তাহলে সরকারের নীতিনির্ধারকেরা কেন বুঝতে পারছেন না? মানুষ বিভিন্ন ভূমিসংশ্লিষ্ট সেবা নিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় জনবল ও স্বচ্ছতা বাড়িয়ে ভূমিসেবা আরও সহজ করার দাবি জানান।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. কায়সার খসরু বলেন, মানুষকে ভূমিসেবা দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জটিল কাজ। এ কাজের সঙ্গে সরকারি স্বার্থ ও রাজস্ব আদায় জড়িত। সবকিছু দেখে যাচাই করে মানুষকে সেবা দিতে হয়। এ কাজে একটি ভুল হলে তা নিষ্পত্তি করতে বহু বছর লেগে যায়। একের জমি অন্যকে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার ভয়ানক জালিয়াতি বন্ধেও সঠিক নামজারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব কাজ এসি ল্যান্ডকে করতে হয়। যদি ভূমিসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জনবল বাড়ানো হয় এবং আরও একাধিক অফিস (রাজস্ব সার্কেল) প্রতিষ্ঠা করে নতুন এসি ল্যান্ড নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে এসব সমস্যা সমাধান সম্ভব এবং মানুষও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাবে।
জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন গাজীপুর সদর ও মহানগরী এলাকায় ভূমিসংক্রান্ত সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে মানুষের বিপুল চাহিদার তুলনায় এসি ল্যান্ড অফিস ও জনবল কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখানে আরও ৩-৪ জন এসি ল্যান্ড এবং প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা প্রয়োজন। নতুন আরও কয়েকটি ভূমি রাজস্ব সার্কেল চালু করা হলে এখানে জনগণকে আরও অনেক বেশি ভালো ও উন্নত ভূমিসেবা দেওয়া সহজ হবে।’
বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ার কারণে জনসংখ্যা ও কাজের চাপ বেড়েছে, এ কথা ঠিক। ভূমিসেবার কাজের চাপও বেড়েছে। মাঠ প্রশাসন থেকে এ-সংক্রান্ত প্রস্তাব পেলে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনব। আশা করি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ জনস্বার্থে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।’
গাজীপুরে রাতভর অভিযান, টঙ্গীর ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ শাহরিয়ার সহ আটক ৬
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।