সম্প্রতি গুগল কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে নতুন চমক নিয়ে হাজির হয়েছে। এ চমকের নাম ‘দ্য উইলো কোয়ান্টাম চিপ’। বাস্তব দুনিয়ার সমস্যা সমাধানে ‘বিলো থ্রেশহোল্ড’ নামে একটি মাইলফলক অর্জন করেছে এই চিপ। কোয়ান্টাম এরর কারেকশনে এই বেঞ্চমার্কের কথা প্রথম বলেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানী পিটার শোর, ১৯৯৫ সালে। এ অর্জনের মাধ্যমে প্রায় ৩০ বছরের অপেক্ষা শেষ হলো। এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বখ্যাত নেচার জার্নালে।
শুধু তাই নয়। এ কোয়ান্টাম চিপ ৫ মিনিটের কম সময়ে যে পরিমাণ কম্পিউটেশনের কাজ করতে পারে, দুনিয়ার সবচেয়ে দ্রুতগামী সুপারকম্পিউটারের সে পরিমাণ কাজ করতে লাগবে ১০ সেপ্টিলিয়ন বছর। এর মানে ১০২৫ বছর—এককথায়, মহাবিশ্বের বয়সের চেয়েও বেশি।
গুগল কোয়ান্টাম এআইয়ের প্রধান ও প্রতিষ্ঠাতা হার্টমুট নেভেন লিখেছেন, ‘গুগলের এ পথচলা শুরু হয়েছিল আজ থেকে ১০ বছর আগে। ২০১২ সালে আমি যখন গুগল কোয়ান্টাম এআইয়ে যোগ দিই, তখন লক্ষ্য ছিল কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে কার্যকর ও বড় পরিসরে কার্যক্ষম কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি করা, যাতে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে অগ্রগতির মাধ্যমে সমাজকে এগিয়ে নেওয়া যায়।’ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সবচেয়ে বড় প্রয়োগকারী প্রকৃতি স্বয়ং। এ কথার প্রতি ইঙ্গিত করে হার্টমুট এটিকে বলেছেন প্রকৃতির ‘অপারেটিং সিস্টেম’।
আসলে কী অর্জন করল গুগলের এই কোয়ান্টাম চিপ? বিষয়টা একটু খোলাসা করা যাক। সাধারণ কম্পিউটারে তথ্যের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয় বিট। প্রতিটি বিটের মান হতে পারে ০ বা ১-এর কোনো একটি। ১ বলতে বোঝায় ‘হ্যাঁ-বোধক’ কিছু বা যন্ত্রটি চালু আছে, বা যৌক্তিক কার্যকারণটি সত্য। ০ মানে এর বিপরীত; বন্ধ বা মিথ্যা বা না-বোধক কিছু বোঝায়। কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ে তথ্য প্রসেস করতে এই বিটের বদলে ব্যবহৃত হয় কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট। এর মান একই সঙ্গে একাধিক দশায় থাকতে পারে। ফলে কম্পিউটার একসঙ্গে অনেক কাজ করতে পারে।
এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা ছিল, কিউবিট শুধু একাধিক দশায়ই থাকে না, এটি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে তথ্য আদানপ্রদানও করে। এর ফলে কম্পিউটেশন সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণ করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তখন কম্পিউটেশনে ভুল হয়। কিউবিটের সংখ্যা যত বেশি, দেখা যায় ভুলের মানও তত বেশি।
নেচার-এ প্রকাশিত গবেষণায় গুগল দেখিয়েছে, উইলোতে যত বেশি কিউবিট ব্যবহার করা হচ্ছে, ভুলের মান তত কমছে। ফলে গোটা সিস্টেমটি আরও বেশি কোয়ান্টাম ব্যবস্থা হয়ে উঠছে। ৩×৩, ৫×৫ ও ৭×৭ গ্রিডের এনকোড করা কিউবিট নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, প্রতিবারে এরর বা ভুলের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসছে। ভিন্নভাবে বললে, সূচকীয় হারে কমছে ভুলের পরিমাণ। এটিকেই কম্পিউটারবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হচ্ছে ‘বিলো থ্রেশহোল্ড’, অর্থাৎ কিউবিটের মান বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভুলের হার কমানো।
শুধু তাই নয়, এটিই প্রথম কোনো সুপারকন্ডাকটিং কোয়ান্টাম সিস্টেমে রিয়েল-টাইম এরর কারেরকশন। অর্থাৎ সুপারকন্ডাকটর বা অতিপরিবাহী দিয়ে তৈরি কোয়ান্টাম সিস্টেমে তাৎক্ষণিক ভুল শুধরে নেওয়া। বাস্তবে ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাতে এটি আবশ্যক। নাহয় কম্পিউটেশন হতে হতেই কাজটা ভুল হয়ে যাবে, ফলে পাওয়া যাবে ভুল উত্তর। এই সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে গুগলের উইলো চিপ প্রথম সত্যিকার ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। এ ছাড়া ৫ মিনিটেরও কম সময়ে ১ সেপ্টেলিয়ন (মানে ১-এর পর ২৫টা শূন্য) কম্পিউটেশন করার সক্ষমতা তো রয়েছেই। তবে এখনো যেতে হবে বহু দূর।
বাস্তব দুনিয়ায় যে সব অ্যালগরিদম বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগে, যেমন ড্রাগ আবিষ্কার, শক্তি সংরক্ষণ বা এআইয়ের অগ্রগতির জন্য অপ্টিমাইজ করা (প্রক্রিয়াটাকে ন্যূনতম পরিমাণ রিসোর্স ব্যবহার করে দ্রুততম উপায়ে করার পর্যায়ে নিয়ে আসা) ইত্যাদি কাজে ব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠতে হবে উইলোকে। এককথায় বললে, বাস্তব ও প্রায়োগিক সমস্যা সমাধানে ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম কম্পিউটার হয়ে উঠতে হবে। গুগল জানিয়েছে, এবারে সে লক্ষ্য সামনে রেখেই এগোবে তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।