আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতের গুজরাট বিধানসভায় টানা সপ্তমবারের মতো সরকার গঠন করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। সেখানে বিরোধী দল কংগ্রেসের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। তবে হিমালয়ের কোলের রাজ্য হিমাচলে বিজেপিকে হারাতে পেরেছে কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার ভারতের নির্বাচন কমিশন এই দুই রাজ্যের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের রাজ্য হওয়ায় গুজরাটের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিল সব জায়গায়। শেষ পর্যন্ত বড় ব্যবধানে কংগ্রেসকে দ্বিতীয় অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে মোদি-অমিতের দল বিজেপি। তবে বিজেপির বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ (জেপি) নাড্ডার রাজ্য হিমাচলে বিজেপির পদ্ম ফুল ফোটেনি। সেখানে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে যাচ্ছে কংগ্রেস।
এবার কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টি (আপ) ঘোষণা দিয়েছিল যে মোদির রাজ্য গুজরাটে বিজেপিকে হারিয়ে দেবে তারা। শেষ পর্যন্ত গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র প্যাটেলের কাছে দুই দলই নাস্তানাবুদ হলো।
সপ্তমবারের মতো জয় পেয়ে ভারতের রাজনীতিতে একটি বিশেষ রেকর্ড স্পর্শ করল গুজরাটের বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে টানা সাতবার ক্ষমতায় ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্ক্সবাদী (সিপিআইএম) দলের নেতৃত্বাধীন জোট বামফ্রন্টও। তবে তারা টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল, যা গুজরাট বিজেপির কিছু বেশি। ২০২৭ সাল পর্যন্ত পুরো মেয়াদ ক্ষমতায় থাকলে গুজরাটে বিজেপির শাসনকাল হবে ৩২ বছরের।
গুজরাটে ১৯৯৫ সালে প্রথমবার এককভাবে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। কিন্তু ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর তাদের সরকারের বাইরে থাকতে হয়েছিল। এরপর টানা সাতবার ক্ষমতায় থাকছে দলটি।
বৃহস্পতিবার ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা গেছে, ১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভায় বিজেপি একাই ১৫৬টির মতো আসনে জয়লাভ করেছে। সরকার গঠন করতে হলে মাত্র ৯২টি আসন দরকার। বিজেপির জেতা আসনসংখ্যা ২০১৭ সালের নির্বাচনের চেয়ে ৫০টিরও বেশি। এবার কংগ্রেস মাত্র ১৭টি আসনে জিতেছে, যা গতবারের চেয়ে ৬১টি কম। এদিকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ প্রথমবারের মতো পাঁচটি আসন দখল করেছে।
হিমাচলে হিসাব মেলেনি : ভোটগ্রহণের পর গণমাধ্যমের বিভিন্ন জরিপে বলা হয়েছিল, গত ৩৭ বছরে হিমাচল প্রদেশে কোনো দল টানা ক্ষমতা ধরে রাখতে না পারলেও এবার সেই ধারা ভাঙবে। ক্ষমতায় থেকে যাবে বিজেপি। কিন্তু সেই হিসাব উল্টে দিয়ে কংগ্রেসই ক্ষমতায় ফিরছে।
৬৮ আসনের হিমাচল বিধানসভায় কংগ্রেস ৪০টি আসন জিতেছে, যা গতবারের চেয়ে ১৯টি বেশি। আগেরবারের চেয়ে ঠিক ১৯টি কম পেয়ে বিজেপি মাত্র ২৫টি আসন দখল করতে পেরেছে। এ রাজ্যে অনায়াসে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে কংগ্রেস। কারণ হিমাচলে সরকার গঠন করতে দরকার মাত্র ৩৫টি আসন।
কংগ্রেস হিমাচল জয় করলেও গণমাধ্যমে গুজরাট বিধানসভায় তাদের হার নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রাজ্যটিতে কংগ্রেস বিজেপিকে ন্যূনতম চ্যালেঞ্জ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিধানসভায় বিরোধী দলের মর্যাদা পেতে ১০ শতাংশ আসন দরকার হয়। কংগ্রেস তা-ও পায়নি।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে কাউকে শক্তভাবে দাঁড় করাতে পারেনি কংগ্রেস। নির্বাচনের ফলে এর প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়া কংগ্রেস বিজেপির মতো মরিয়া হয়ে প্রচারণাও চালায়নি।
এ ছাড়া রাজ্যের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অনেক আসনে কংগ্রেস হেরেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে আপ ও কংগ্রেস আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় সেখানকার বিজেপিবিরোধী মুসলিম ভোটগুলো ভাগ হয়ে গেছে। এতে ওই আসনগুলোতে লাভবান হয়েছে বিজেপি। আসাদ উদ্দিন ওয়েইসির এআইএমইএম দলও অনেক আসনে মুসলিম ভোট টেনেছে, যা কংগ্রেসের পরাজয়ে ভূমিকা রেখেছে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।