ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ : ইস্তেগফার’ শব্দের অর্থ কৃত পাপকর্মের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আল্লাহর অসংখ্য মহান গুণাবলির একটি হলো ক্ষমা। আল্লাহ তাআলা ‘গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতিশয় দয়ালু। আর সব সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমার মানসিকতা পোষণ করা।
যদিও ইসতেগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা কিন্তু আল্লাহ তাআলা বান্দার ইসতেগফারে রেখেছেন অনেক উপকার ও ফজিলত। কী সেসব ফজিলত?
ইসতেগফার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি প্রিয় আমল। তিনি সব সময় নামাজের সালাম ফেরানোর পর ইসতেগফার পড়তেন। হাদিসে পাকে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন নামাজের সালাম ফেরাতেন, তখন সর্ব প্রথম যে শব্দ তার পবিত্র জবান থেকে বেরত হতো, তাহলো- আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ।’
ইসতেফার পড়ার সময়ের অনুভূতি ইসতেগফার পড়ার সময় মুমিনের মনে এ অবস্থা বিরাজ করবে যে- হে আল্লাহ! আমাদের থেকে আপনার ইবাদতের (নামাজের) হক আদায় হয়নি। না জানি কত ভুল কত বিচ্যুতি এই ইবাদতে (নামাজে) সংঘটিত হয়েছে। হে আল্লাহ! আমরা (নামাজের সালাম ফেরানোর পর পর সর্বপ্রথম সেই সব ভুল-ত্রুটির জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাই, যা এই নামাজে সংঘটিত হয়েছে।’
কুরআনে ইসতেগফার
কুরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ইসতেগফার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যারা আল্লাহর নির্দেশ মেনে ইসতেগফারের আমলে নিজেদের নিয়োজিত করেছে, তারাই মুস্তাজাবুদ দাওয়ায় পরিণত হয়েছে। তারা আল্লাহর কাছে কোনো জিনিস চাইলে মহান আল্লাহ তাআলা তা বান্দাকে দান করেন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-
১. তখন তুমি তোমার রবের সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করো এবং তার কাছে ক্ষমা চাও নিশ্চয়ই তিনি তওবা কবুলকারী।’ (সুরা নসর : আয়াত ৩)
২. আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও; নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৬)
৩.‘আর তুমি ক্ষমা চাও তোমার এবং মুমিন নর-নারীর ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য।’ (সুরা মুহাম্মদ : আায়ত ১৯)
৪. ‘সুতরাং বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ইসতেগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা কর; নিশ্চয়ই তিনি মহাক্ষমাশীল। (ইসতেগফার করলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দ্বারা সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন জান্নাত তথা বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদ-নদী। (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
৫. ‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
৬.হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এরপর তার কাছে তওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৫২)
৭. ‘আর আল্লাহ এমন নন যে, তাদেরকে আজাব দেবেন এ অবস্থায় যে, তুমি তাদের মাঝে বিদ্যমান এবং আল্লাহ তাদেরকে আজাব দানকারী নন এমতাবস্থায় যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করছে।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৩৩)
৮. ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রর্তেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের উপর বড় এক দিনের আজাবের ভয় করছি।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৩)
হাদিসে ইসতেগফার
হাদিসের অনেক বর্ণনায় ইসতেগফার করার কথা এসেছে। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও প্রতিদিন ১০০ বার ইসতেগফার করতেন।
১. হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমরা এক মজলিশে গণনা করতাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একশত বার বলতেন-উচ্চারণ : ‘রাব্বিগফিরলি; ওয়া তুব আলাইয়্যা; ইন্নাকা আংতাত তাউয়্যাবুর রাহিম।’অর্থ : হে আমার রব! তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার তওবা কবুল কর; নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াশীল।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)
২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সে সত্বার শপথ! যার হাতে আমার জীবন; যদি তোমরা গুনাহ না কর তবে আল্লাহ তাআলা তোমাদের নিয়ে যাবেন এবং এমন এক সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন; যারা গুনাহ করবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (মুসলিম)
৩. হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন একজন ব্যক্তি সম্পর্কে, যে গুনাহ করে তওবা করে; পুনরায় গুনাহ করে। আবার তওবা করে আবার গুনাহ করে। আবার গুনাহের কাজে মশগুল হয় এবং আবার তওবা-ইস্তিগফার করে। এ রূপ করতে থাকা ব্যক্তির কি অবস্থা হবে? হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, তার কর্তব্য হলো সর্বদা তওবা-ইস্তিগফার করতে থাকা। কেননা তওবা-ইস্তিগফার অব্যাহত থাকলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে যাবে। শয়তান বলবে, এ ব্যক্তিকে গুনাহর কাজে সর্বদা মশগুল রাখতে আমি অক্ষম।
৪. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে তওবা করতে থাক। কেননা আমি নিজে দৈনিক ১০০ বার তওবা করি।
মুমিন মুসলমানের উচিত, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ইসতেগফার করা। রিজিকে বরকতসহ কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদাগুলো পাওয়ার চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে বেশি বেশি ইসতেগফারের আমল করার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নায় ঘোষিত ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।