মনোজ কুমার সাহা, বাসস: গোপালগঞ্জে ছোট কালভার্ট, ঘাটলা, গ্রামীণ সড়ক, গভীর নলকূপ ও কাঠের সাঁেকার মত ছোট ছোট কাজ সরকারি অর্থ সাশ্রয়ে করা হচ্ছে। অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩ এর আওতায় বাংলদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ইউনিয়ন পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসীর সহযোগিতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এসব প্রকল্প থেকে গ্রামের বিশাল জনগেষ্ঠী যোগাযোগ, সুপেয় পানি, ক্ষুদ্র সেচ, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন। এ প্রকল্পের শতভাগ টাকা প্রকল্পেই ব্যয় হচ্ছে। এতে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি ২৮ ফুট লম্বা ও ৬ ফুট চওড়া গণঘাটলার প্রক্কলিত মূল নির্ধারণ করে ১ লাখ ২৩ হাজার। এ গণঘাটলা বাংলদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড মাত্র ১ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন করছে। বাংলদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩ গণঘাটলা বাস্তবায়নে ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়। এখানে সুফলভোগী সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসী প্রদান করে ১৫ কাজার টাকা এবং ইউনিয়ন পরিষদ দেয় ৫ হাজার টাকা। এ মোট ১ লাখ টাকায় শতভাগ কাজ এখানে করা হয়। এতে একটি প্রকল্প থেকেই অন্তত ২৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এভাবে একের পর এক অর্থ সাশ্রয়ী টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা জ্যোতি প্রকাশ মল্লিক বলেন, ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে গোপালগঞ্জে অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩ শুরু হয়। গেল ২০২১-২০২২ অর্থ বছর পর্যন্ত গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৫৭ টি ছোট কালাভার্ট, গণঘাটলা, গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এতে প্রকল্প থেকে ব্যয় করা হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। গ্রামের সুবিধাভোগীরা দিয়েছেন ২৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ও ইউনিয়ন পরিষদ পরিষদ থেকে এসব প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। মোট ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, সংশ্লিষ্ট গ্রামবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তাই প্রকল্পের টাকা শতভাগ প্রকল্পেই খরচ হয়। এ কারণেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, আমরা গণঘাটলার প্রক্কলন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) দিয়ে করিয়ে থাকি। গণ ঘাটলার প্রাক্কলন ব্যয় এলজিইডি ১ লাখ ২৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করে দেয়। আমরা গণঘাটলা মাত্র ১ লাখ টাকা বাস্তবায় করি। এভাবে আমরা কালভার্ট, সড়কে ইট বিছানো, সিসি ঢালাই ও গভীর নলকূপ অর্থ সাশ্রয় করে স্থাপন করছি। গ্রামের সুফলভোগীরা এ প্রকল্পটিকে সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছে। এখান থেকে বিশাল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ভাবে উপকৃত হচ্ছেন।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ রানা মোল্লা বলেন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অংশীদারিত্বমূলক পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প-৩ ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। গভীর নলকূপের মাধ্যমে আমার ইউনিয়নের মানুষের সুপেয় পানি প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। ঘাটলা ব্যবহার করে মানুষ ওজু, গোসল করতে পারছে। এখানে মানুষ গৃহস্থালীর কাজ করছে। পাশাপাশি সংসারের প্রয়োজনীয় পানি নিতে পারছে। গ্রামীণ সড়ক মানুষের যাতায়াত সহজ করে দিযেছে। কৃষি ক্ষেত্রে কলভার্ট উপকারে আসছে। এ প্রকল্পের শতভাগ টাকা প্রকল্পের পেছনেই ব্যয় হয়। এসব উন্নয়নের সাথে পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, গ্রামের মানুষ ও ইউনিয়ন পরিষদ সংশ্লিষ্ট থাকে। তাই টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হয়। এ প্রকল্পটি অর্থ সাশ্রয় ও টেকসই প্রকল্প হিসেবে মডেল হতে পারে।
সুফলভোগী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল গ্রামের খায়রুল, শাহিন শেখ, আলমগীর হেসেন বলেন, একটি কমিটির মধ্যেমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। কমিটিতে গ্রামবাসী, পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বররা সংশ্লিষ্ট থাকে। এ কারণে প্রকল্পের কাজের মান অক্ষুন্ন থাকে। আমাদের গ্রামের জন্য প্রয়োজনীয় ছোট ছোট কাজ এ প্রকল্প থেকে করা হয়। প্রতিটি প্রকল্পে মাত্র ১ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু ক্ষুদ্র এ প্রকল্পের সুফল পাচ্ছি আমরা শত শত মানুষ। এছাড়া ক্ষুদ্র সেচ ও জলাবদ্ধাতা নিরসনে এ প্রকল্পের কালভার্ট কাজে লাগছে। ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিও জলাবদ্ধতার হাত থেকে ফসল রক্ষায় কালভার্ট ভূমিকা রাখছে।
সুফলভোগী গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সুকতাইল গ্রামের দিপু সুন্সি বলেন, আমাদের গ্রামে মাত্র ১০০ মিটার ইট বিছানোর অভাবে শত শত মানুষের যাতায়াত ব্যাহত হচ্ছিল। এমনকি গ্রামের মানুষের এ প্রকল্পে টাকা দেয়ার সঙ্গতি ছিল না। গ্রামের লোকজন হাতে হাতে কাজ করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এ থেকে এখান আমরা সুফল পচ্ছি।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক তপন কুমার মন্ডল বলেন, গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর যাতায়াত, সুপেয় পানি প্রাপ্যতা, ক্ষুদ্র সেচ সুবিধা, জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন সুবিধা দিতে সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্পটির বাস্তবায়িত বিভিন্ন প্রকল্প গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর উপকারে আসছে। এতে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।