জুমবাংলা ডেস্ক: পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ, অদম্য ইচ্ছা শক্তি আর ভালো লাগা থেকে শুরু করেন কৃষিকাজ। দীর্ঘ ৮ বছর কৃষিকাজ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। নিজে আত্মনির্ভশীল হওয়ার পাশাপাশি ১০-১২ জন লোকের কর্মসংস্থানও করেছেন। ঢাকা পোস্ট-এর প্রতিবেদক সোহেল হোসেন-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
তার কৃষিকাজের শুরু গোলাপ দিয়ে। তবে গোলাপে সাফল্য না আসলেও হাল ছেড়ে দেননি। নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হতাশার জাল ছিন্ন করে শুরু করেন পেঁপে চাষ। নিজের ১২ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন পেঁপের খামার। গোলাপ চাষে সাফল্য না আসলেও ভাগ্য বদলে গেছে পেঁপে চাষে।
কৃষিকাজ করে সফল হওয়ার গল্পটি মানিকগঞ্জের সিংগাইরের আজিমপুর গ্রামের সফল খামারি মোনেম আহমেদ বিপ্লবের। স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার তার। ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে কৃষি নিয়ে কাজ করার। নিজের আত্মতৃপ্তি আর ভালো লাগা থেকেই ২০১৩ সালে নিজে জমিতে শুরু করেন গোলাপের চাষাবাদ। চার বছরে গোলাপ চাষাবাদে তেমন সফল না হওয়ায় হতাশায় কিছু দিন কেটে যায়। তবে স্বপ্নবাজ মোনেম সেই হশাতার জাল ভেদ করে লক্ষ্য পৌঁছানোর জন্য শুরু করেন পেঁপের চাষাবাদ। তিল তিল করে ৫ বছরে গড়ে তুলেছেন ১২ বিঘার পেঁপে বাগান।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলার সাত উপজেলায় কম-বেশি পেঁপের চাষাবাদ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি পেঁপে আবাদ হয় সিংগাইরে। এ অঞ্চলের প্রায় ১৫ হাজার কৃষক পেঁপে চাষাবাদ করে। চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭০০ হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষাবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি। এসব পেঁপে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় কৃষি অধিদপ্তর।
সরেজমিনে পেঁপে বাগানে শ্রমিকদের সঙ্গে জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে তরুণ উদ্যোক্তা বিপ্লবকে। বাগানের আগাছা পরিষ্কার করতে ট্রাক্টর দিলে চাষ দিচ্ছেন এক শ্রমিক। অন্য এক শ্রমিক হাল চাষ শেষে জমিতে সার দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আরেকজন করছেন পেঁপে বীজতলার কাজ। বেলা ১১টার দিকে চারজন শ্রমিক শুরু করেন গাছ থেকে বিক্রি উপযোগী পেঁপে ভাঙার কাজ। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে পেঁপে ভেঙে একসঙ্গে করে ঝুঁড়িতে সাজিয়ে রাখছেন শ্রমিকরা।
পেঁপে চাষি মোনেম আহমেদ বিপ্লব বলেন, পড়ালেখা শেষ করে চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের ১২ বিঘা জমিতে প্রথমে গোলাপের চাষবাদ করি। পাঁচ বছর গোলাপ চাষে তেমন সুফল না আসায় পেঁপের আবাদ শুরু করি। প্রথম বছর আমার পেঁপের বীজটা তেমন ভালো ছিল না। এ কারণে ফলনও ভালো হয়নি। তবে পরের বছর আমি ভালো মানের পেঁপের বীজ সংগ্রহ এবং চারা উৎপাদন করি।
মোনেম বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ করতে খরচ হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা। জমি তৈরি, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মুজরি সব কিছু মিলেই এই খরচ। আর ফলন ভালো হলে এক বিঘা জমি থেকে ১৮০-২০০ মণ পেঁপের ফলন পাওয়া যায়। পাইকারি বাজারদর ভালো থাকলে ১২-১৫ টাকা কেজি দরে কাঁচা পেঁপে বিক্রি করা যায়। বছরে আমার ১০ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষে খরচ হয় পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা আর ১৮-২০ লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করি। এতে সব খরচ বাদে আমার বছরে লাভ থাকে ১৩-১৫ লাখ টাকা।
তিনি আরও বলেন, পেঁপে চাষ করে আর্থিকভাবে সচ্ছল আমি। পেঁপের পাশাপাশি পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবজির আবাদ এবং পাঁচ বিঘার একটি পুকুরে মাছের চাষও করছি। আগামীতে এখানে গবাদি পশু লালন-পালন শুরু করব। সব মিলে এখন আমার এই কৃষি প্রজেক্ট একটি সম্মিলিত কৃষি খামার। পেঁপে চাষে আমার সাফল্য দেখে আশপাশের অনেক তরুণ পেঁপে চাষ শুরু করেছে। আবার অনেকে কৃষিকাজ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। এটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। সঠিক পরিকল্পনা আর প্রবল ইচ্ছা থাকলে কৃষিতে যে কেউ সফল হতে পারে।
মোনেমের পেঁপে বাগানের শ্রমিক উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ৫-৬ বছর ধরে এই পেঁপে বাগানে কাজ করি। এখানে কাজ করে যে টাকা মুজরি পাই, তা দিয়ে সংসার চালাই। পেঁপে চাষ করে আমাগো মালিক মোনেম ভাই বেশ ভালো আছেন।
আরেক শ্রমিক মানিক ইসলাম বলেন, পেঁপে বাগানের পরিচর্যার কাজ করছি পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে। বাগানে পেঁপের ফলন ভালো করার জন্য বিভিন্ন কীটনাশক, সার, জমির আগাছা পরিষ্কারের কজি করি। এতে মুজরি হিসেবে ৫০০-৬০০ টাকা পাই। এই আয় দিয়ে বউ-পোলাপান নিয়া চলি। এখন আল্লাহ অনেক ভালো রেখেছেন।
সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. টিপু সুলতান স্বপন বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সিংগাইর উপজেলার উৎপাদিত সবজির বেশি চাহিদা রয়েছে। আর সবজি উৎপাদনে এ উপজেলার বেশ সুনামও রয়েছে। অনেক কৃষক সবজি চাষে ভালো করতে না পারলেও পেঁপে চাষে বেশ সফল হয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৫ হাজার কৃষক পেঁপে চাষাবাদ করছেন। এ বছর ৭০০ হেক্টর জমিতে তারা পেঁপের আবাদ করেছেন। এক বিঘা পেঁপে বাগান থেকে বছরে প্রায় ৩০০ মণ পেঁপে উৎপাদন করেন একজন কৃষক।
তিনি আরও বলেন, পেঁপে চাষে সফল কৃষকদের মধ্যে অন্যতম হলেন মোনেম আহমেদ বিপ্লব। তিনি পেঁপে চাষ করে নিজের ভাগ্য বদলেছেন। তাকে দেখে উপজেলার অনেকে এখন পেঁপে চাষে ঝুঁকছে। কৃষিকাজ বা পেঁপে চাষে তরুণদের বিভিন্নভাবে পরামর্শও দেন বিপ্লব। আমাদের অফিস থেকেও এই লাভজনক ফসল পেঁপে চাষাবাদে তরুণদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়।
সময়ের সেরা ১০ পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া, যা আপনার ভাগ্য বদলে দিবে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।