সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বিপুল পরিমাণ—গ্যালাক্সি পরিসরের মহাজাগতিক তরঙ্গ শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন, এ মহাজাগতিক তরঙ্গের ধাক্কা কাঁপিয়ে দিয়েছে আমাদের জানা সব গ্যালাক্সিকে। তবে এটি শুধুই জনপ্রিয় বিজ্ঞানের পরিভাষায় কাব্য করে বলা।
বাস্তবে বিষয়টি হলো, গ্যালাক্সি পরিসরের এ মহাজাগতিক তরঙ্গ ছুটে এসেছে আমাদের জানা প্রায় সব গ্যালাক্সির মধ্য দিয়ে। বোঝার সুবিধার্থে সরলীকরণ করে বলা যায়, তরঙ্গটি ছুটে এসেছে মহাজাগতিক এক মহাজাল ধরে—এ জালে জড়িয়ে রয়েছে আমাদের জানা প্রায় সব গ্যালাক্সি।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা। কারণ, এ তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে হয়তো জানা যেতে পারে, মহাবিশ্বের বিশালাকার বস্তুগুলো আসলে কীভাবে গঠিত হয়েছে, আকৃতি পেয়েছে মহাবিশ্বের অসীম বিশালতায়।
এ শক ওয়েভ শনাক্ত করেছেন দ্য ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া ও ইতালির বোলোনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল জ্যোতির্বিজ্ঞানী। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি, প্রখ্যাত সায়েন্স জার্নালে।
রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে তোলা হাজারো ছবি একত্রিত করে এ শক ওয়েভ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মহাবিশ্বের সবচেয়ে বড় কাঠামোগুলোর মাঝে পদার্থের সংঘর্ষের ফলে তৈরি এ শক ওয়েভ একধরনের মৃদু রেডিও-প্রভা তৈরি করে। এ প্রভাই ধরা পড়েছে ছবিগুলোতে।
কথা হলো, মহাজাগতিক এ জাল আসলে কী? বা জনপ্রিয় বিজ্ঞানের ভাষায় সহজ করে বোঝাতে যে মহাজাগতিক জালের কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে কী দিয়ে তৈরি? মহাবিশ্বে সবচেয়ে বিপুল পরিমাণে পাওয়া যায় হাইড্রোজেন। আর বিজ্ঞানীদের ধারণা, মহাবিশ্বের বেশিরভাগ ভরের জন্য দায়ী ডার্ক ম্যাটার। ‘মহাজাগতিক জাল’ মানে হাইড্রোজেন ও ডার্কম্যাটার দিয়ে তৈরি একধরনের মহাজাগতিক সংযোগ সূত্র। আসলে বোঝানো হচ্ছে, এ দুটোই ছড়িয়ে আছে সবখানে—এর মাধ্যমেই যেন যুক্ত মহাবিশ্বের সব গ্যালাক্সি।
এ জালের বিভিন্ন শাখা বা সংযোগ সূত্র যেখানে মিলে যায়—বুঝতেই পারছেন, সেখানে ভরগুলো জমে গেছে। তার মানে, ধরে নেওয়া যায়, ঠিক এ জায়গাগুলোতেই তৈরি হয় গ্যালাক্সিরা। আর কাছাকাছি হাজারো গ্যালাক্সি মিলে গঠিত হয় একেকটি ক্লাস্টার বা গ্যালাক্সিপুঞ্জ। নতুন এই গবেষণাটি মহাজাগতিক জালের শাখায় ছড়িয়ে থাকা রহস্যময় চৌম্বকক্ষেত্রের প্রকৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে।
গবেষণাপত্রটির প্রধান লেখক ও অস্ট্রেলিয়ার ক্রাউলির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি রিসার্চের জ্যোতির্বিজ্ঞানী টেসা ভার্নস্ট্রোম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘গ্রহ ও নক্ষত্র থেকে শুরু করে গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানেও চৌম্বকক্ষেত্র বিদ্যামান। তবে মহাজাগতিক চৌম্বকক্ষেত্রের অনেক বিষয় আমাদের এখনো অজানা। অনেক কিছুই আমরা এখনো বুঝতে পারি না। বিশেষ করে এরকম পরিসরের বড় চৌম্বকক্ষেত্রের জন্য কথাটি আরও সত্য।’
মহাবিস্ফোরণের পর বিশৃঙ্খল শিশু মহাবিশ্বে কণা-প্রতিকণকাদের নিয়ত সংঘর্ষ ও ধ্বংস-পুনঃসৃষ্টির খেয়াল তৈরি হয় পদার্থ। এরকম পদার্থ স্তুপাকারে জমে জমে তৈরি হয়েছিল মহাজাগতিক জাল।
গবেষকরা ৬ লাখ ১২ হাজার ২৫টি গ্যালাক্সিপুঞ্জজোড় থেকে এই বেতার তরঙ্গায়িত ছবিগুলো সংগ্রহ করেন। এজন্য তাঁরা ব্যবহার করেন গ্লোবাল ম্যাগনেটো-আয়নিক মিডিয়াম সার্ভে, প্ল্যাঙ্ক লিগ্যাসি আর্কাইভ, ওভেনস ভ্যালি লং ওয়েভথেন তরঙ্গদৈর্ঘ্য অ্যারে এবং মারচিসন ওয়াইডফিল্ড অ্যারে থেকে প্রাপ্ত তথ্য। বাহ্যিক প্রভাব এড়িয়ে শক ওয়েভ থেকে মৃদু রেডিও প্রভাকে স্পষ্ট করে তোলা সম্ভব হয় এসব ছবিকে এক করার মাধ্যমে।
এখন যেহেতু এ তরঙ্গের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তাই বিশাল চৌম্বকক্ষেত্রের প্রকৃতি বোঝার জন্য তথ্যগুলো কাজে লাগানো যাবে। মহাবিশ্বের গঠনে এই চৌম্বকক্ষেত্রের রয়েছে বিশাল ভূমিকা। এ সম্পর্কে যতো জানা যাবে, ততই স্পষ্ট হবে মহাবিশ্বের জন্মরহস্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।