জুমবাংলা ডেস্ক : দক্ষিণ চট্টগ্রামে অল্প সময়ের ব্যবধানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনিস্টিটিউ উদ্ভাবিত উন্নত প্রযুক্তির গ্রাফটিং পদ্ধতির গ্রীষ্মকালীন হাইব্রিড টমেটো চাষ। গ্রাফটিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত প্রতি কেজি টমেটো ১০০ টাকায় বিক্রি করে আশার আলো দেখছেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
সাতকানিয়া উপজেলার সবজিচাষি রাজামিয়া ব্যবসার পাশাপাশি গত সাত বছর ধরে শাকসবজি চাষ করছেন। এবারই তিনি সাত শতক জমিতে ১০টি বেডে গ্রাফটিং পদ্ধতির হাইব্রিড জাতের প্রায় ৭২০টি টমেটো চারা রোপণ করেছেন। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে পরিপক্ব টমেটো উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করেছেন তিনি।
চাষি রাজামিয়া বলেন, চারা রোপণের পরে তিনি দুই বেড একত্রে করে ছাউনি দিয়েছেন। সব মিলে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। তিনি জানান, তিনি এ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আগামী নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ফলন ভালো হলে এক লাখ টাকারও বেশি টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি এবার কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকার ওপরে লাভের আশা করছেন।
গ্রাফটিং পদ্ধতিতে বা জোড়কল পদ্ধতি হচ্ছে জংলি বেগুন গাছের ওপর কলমের মাধ্যমে টমেটো চারা তৈরি করা। পটিয়ায় মোট ৫০ শতক জমিতে এই পদ্ধতিতে টমেটো চাষ করা হচ্ছে। একইভাবে চন্দনাইশ উপজেলায় পাঁচ শতক করে চারটি এবং স্ব উদ্যোগে পাঁচ শতক জমিতে এই টমেটো চাষ করা হয়েছে। সাতকানিয়ায় চাষ করা হয়েছে ৪০ শতক জমিতে। এর মধ্যে তিন শতক করে ১০টি ও পাঁচ শতক করে দু’টি এবং কৃষকরা স্ব উদ্যোগে চাষ করেছেন প্রায় ১০০ শতক বা এক একর জমিতে। এখানে কৃষক পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন টমেটো।
জানা গেছে, দেশে শাকসবজির মধ্যে টমেটো ও বেগুনের কদর বেশি হওয়ায় বছরে এর চাহিদাও অনেক বেশি। এ কারণে গত কয়েক বছর ধরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এ ব্যাপারে কাজ করছে।
সবজিবিভাগ, উদ্যানতত্ত্ব গবেষণাকেন্দ্র, বারি, গাজীপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বাহাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেগুন ও টমেটো বাংলাদেশের জনপ্রিয় সবজি। কিন্তু দেশে বেগুন ও টমেটো চাষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ। প্রধানত ঢলেপড়া রোগ ও শিকড়ের গিট রোগ টমেটো ও বেগুন চাষের ব্যাপক ক্ষতি করে। উচ্চ তাপমাত্রা ও মাটিতে বেশি আর্দ্রতা থাকলে এই দু’টি রোগ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ দু’টি রোগের কারণে বেগুন ও টমেটোর ফলন ৩০-৫০ ভাগ কমে যায়। বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশে রাসায়নিক বিষ বা অন্য কোনো দমন পদ্ধতির মাধ্যমে এ রোগ দু’টি সন্তোষজনকভাবে দমন করা এখনো সম্ভব হয়নি। সে কারণে গবেষণার মাধ্যমে জংলি বেগুন গাছের ওপর কলমের মাধ্যমে বেগুন ও টমেটো গাছ তৈরি করে মাটিবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে উচ্চফলন নিশ্চিত করা যায়। এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে ইতোমধ্যে বেগুন ও আগাম টমেটো চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখা গেছে। জাপানি একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) বিজ্ঞানীরা ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে বেগুনের জোড়কলম প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেন। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এ জোড়কলম পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইং পরিচালক হাবিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, দেশে ক্রমইে গ্রীষ্মকালীন আগাম টমেটো চাষ জনপ্রিয় হচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর আবাদ হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।