রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : অগ্রহায়ণের ফসলতোলা বিরান মাঠে জেঁকে বসেছিল পৌষের শীত। সেই ফাঁকা মাঠ যখন আবার সাজছিল বোরো ফসল বুনতে তার ঠিক আগেভাগে মাঘের শুরুতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাড়ির কাছেপিঠে বসছে গ্রামীণ মেলা। তেমনই গাইবান্ধা পৌরসভার দাসপাড়া এলাকায় চলছে ৫ দিনব্যাপী এক মেলা। এ মেলায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেল নাগরদোলায়। এতে উঠে শিশু-কিশোরেরা যেমন ভয় পাচ্ছিল, তেমনি মজাও পাচ্ছিল বেশ।
গাইবান্ধার আসাদুজ্জামান বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, অঘ্রানের ধান কাটার পর গ্রামের মাঠগুলো ফাঁকা হয়ে যায়। এরপর মাঘের শেষে শুরু হয় বোরোচাষ। এর আগে শীতকালে বরাবরই এ দেশের গ্রামগুলোয় নানা উপলক্ষে মেলা বসে। এখন কমে গেলেও কিছু জায়গায় অনুষ্ঠিত মেলাগুলো এ দেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
কী নেই এই মেলায়? হরেক রকমের মণ্ডা-মিঠাই থেকে শুরু করে মুড়িমুড়কির দোকান। রয়েছে লোহালক্কড়ের তৈজসপত্র, দা, বঁটি থেকে শুরু করে বাঁশবেতের গৃহস্থালী জিনিসপত্র। প্রসাধনী, নাগরদোলা, ঘোড়ার গাড়ি। মোটকথা বয়সী থেকে তরুণ-তরুণী, শিশু– সবারই দরকারি জিনিসের পসরা নিয়ে বসেছে এই মেলা।
মেলার দোকানী ময়নুল ইসলাম এসেছেন পাশের সাদুল্যাপুর উপজেলা থেকে। তিনি বলেন, ২০ বছর বন্ধ থাকার পর এবার এখানে আবার মেলা বসল। তিনি মুড়িমুড়কির দোকান করেন। বেচাবিক্রি ভালো।
আজ শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় মেলায় দর্শনার্থী তুলনামূলক বেশি। বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, তরুণ-তরুণীরা সেজেগুজে মেলায় এসেছে। শিশু-কিশোরেরা মেলাময় ছুটোছুটি করছে। এসেছেন বয়সী নারী-পুরুষেরাও।
ফুলছড়ির কালীরবাজার এলাকা থেকে এসেছেন রশিদ মিয়া। তিনি বললেন, আজকাল গ্রামীণ মেলা কমে গেছে। তাই দূর থেকেও বাচ্চাদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন।
নাগরদোলার কাছে গিয়ে দেখা গেল, শিশু-কিশোরদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। পাশেই ঘোড়ার গাড়ির কাছেও তরুণ বয়সীদের জটলা। অনেকেই এসব গাড়িতে উঠছেন।
সঞ্চিতা সরকার নামের এক কিশোরী বলল, সে আগে ঘোড়ায় উঠেছে। এখন নাগরদোলায় উঠবে। অল্প ভয় লাগলেও নাগরদোলা তার খুব মজা লাগে।
মেলা চত্বরের ভেতরে তৈজসপত্র, প্রসাধনী ও খেলনাসহ খাবারদাবারের দোকান। এখানে অনেকে দরকারি জিনিসপত্রসহ খাবারদাবার কিনছিলেন। তরুণীরা ভিড় করছিলেন প্রসাধনীর দোকানে। শিশুরা খেলনার দোকানে।
কাসা-পিতলের দোকান নিয়ে বসেছিলেন সাধন কুমার। তিনি বললেন, তিনি বিভিন্ন হাটবাজারে দোকান করলেও মেলা উপলক্ষে এখানে এসেছেন। এখানে বিক্রি-বাট্টা বেশি।
২৪ প্রহরব্যাপী হরিনাম সংকীর্তন ও রাধাগোবিন্দের অপ্রাকৃত লীলাকীর্তন উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। ১ মাঘ অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি গাইবান্ধা পৌরসভার মেয়র মতলুবর রহমান এই মেলার উদবোধন করেন। আগামীকাল শনিবার ৫ মাঘ এর সমাপনী হবে। এ উপলক্ষে আশপাশের গ্রামের হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে যেন উৎসব ছড়িয়ে পড়েছে।
পৌরসভার থানাপাড়ার বাসিন্দা ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গীতা রানী বলেন, মেলা কী উপলক্ষে আয়োজন করা হলো, সেটা বড় বিষয় নয়। বিষয় হলো, এ উপলক্ষে আশপাশের গ্রামগুলোয় আত্মীয়স্বজন বেড়াতে আসে। সবার সঙ্গে দেখা হয়। আন্তরিকতা বাড়ে, অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়। এটা এ দেশের হাজার বছরের সংস্কৃতির অংশ। এখন এই অস্থির সময়ে এ ধরনের সার্বজনীন মেলা খুব দরকার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।