জুমবাংলা ডেস্ক: এরিক দ্য রেড নামক এক ভাইকিং আইসল্যান্ড থেকে হত্যার দায়ে নির্বাসিত হয়ে অচেনা পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। আইসল্যান্ড থেকে পশ্চিমের পথ ছিল অনেকটাই দুর্গম। ঘন দাড়িওয়ালা, ফ্যাঁকাসে লাল চুলের এরিক হাঁটতে হাঁটতে ১৮০ মাইল দূরে এমন একটি জায়গায় পৌঁছান যেখানে তখনও কোনো ইউরোপীয় বসতি গড়ে ওঠেনি। এরিক একটি বিস্তীর্ণ সবুজ তৃণভূমি দেখতে পান। অঞ্চলটি সবুজ হওয়ায় সর্বপ্রথম তিনিই এর সেই নাম দেন গ্রিনল্যান্ড।
এরপর বহুকাল কেটে যায়। ধীরে ধীরে (৯৮৫ থেকে ১৪৮০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে) বিস্তীর্ণ সবুজ ভূমিতে ভাইকিংসের একটি ছোট বসতি গড়ে ওঠে। দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলে চাষাবাদও করেছেন তারা। কিন্তু হঠাৎ ১৪৮০ সালের পর তারা রহস্যজনকভাবে হারিয়ে যান।
বিজ্ঞানী এবং ইতিহাসবিদরা প্লেগ নামক সংক্রামক রোগ, খরা, জলদস্যুদের আক্রমণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য তাদের হারিয়ে যাওয়াকে দায়ী করেন। তবে নতুন একটি গবেষণা তাদের হারিয়ে যাওয়ার মূল রহস্য নিয়ে আলোকপাত করেছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে গবেষণার বরাতে বলা হয়েছে, ভাইকিংসরা গ্রিনল্যান্ড থেকে হয়তো চলে যান ক্রমবর্ধমান সমুদ্রসীমা বিস্তার ও বন্যার ভয়ে। বসতি স্থাপনের চার শতাব্দী ধরে তাদের চারপাশ থেকে পানি ১০ ফুটেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আর্থ সায়েন্সের ডক্টরাল শিক্ষার্থী ও গবেষণার প্রধান লেখক মারিসা বোরেগিন বলেন, অন্যান্য কিছু কারণ, যেমন- পরিবেশগত, সামাজিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মতো বিষয়ের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। বেশ কয়েকটি কারণ মিলিয়ে ভাইকিংসরাই বিস্তীর্ণ সবুজ ভূমিটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। বর্তমানে আমরা তাদের সময়ের সমুদ্রপৃষ্ঠের পরিবর্তনের প্রভাব আরো ভালোভাবে বুঝতে পারছি।
নতুন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভাইকিংদের বসবাসের সময়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০.৮ ফুট (৩.৩ মিটার) পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এটি বিংশ শতাব্দীর গড়ের প্রায় দুই থেকে ছয় গুণ বেশি। সেই সময়ে গ্রিনল্যান্ডে ভাইকিং বসতির প্রায় ৭৯ বর্গমাইল (২০৪ বর্গকিলোমিটার) প্লাবিত হয়, যা তাদের বসতির ৭৫ শতাংশ। এসব অঞ্চলে আজও ভাইকিংদের অনেক ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূ-বিজ্ঞানী রিচার্ড অ্যালি বলেন, গ্রিনল্যান্ডে ভাইকিংদের টিকে থাকার পরিবেশ সত্যিই কঠিন ছিল। তারা যখন সেখানে ছিল তখন পরিস্থিতি আরো খারাপ হচ্ছিল। তারা সমুদ্রের পাশের ছোট ছোট জায়গাগুলোতে আটকা পড়েছিল।
রিচার্ড অ্যালি বলেন, বিভিন্ন কারণে স্থানীয় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিবর্তিত হতে পারে। প্রথমত, বরফের চাদরে ঢাকা ভাইকিংদের নিকটবর্তী অঞ্চল গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপক পরিবর্তন হওয়া। তাদের জমি বরফের চাদরে ঢেকে যাচ্ছিল। মধ্যযুগীয় উষ্ণ যুগে জলবায়ু পরিবর্তনের সময় ভাইকিংরা গ্রিনল্যান্ড ত্যাগ করে। দ্বিতীয়ত, বরফের চাদরটি এত বড় ছিল যে সমুদ্রের পানিও সেই চাদরের কাছাকাছি পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল।
সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের অধ্যাপক ম্যাকগভার্ন বলেন, আমি মনে করি ১২৮০ সালের পর গ্রিনল্যান্ডে একটি ‘নিখুঁত ঝড়ের’ প্রভাব পড়েছিল, তার দীর্ঘ প্রভাব ভাইকিংদের ওপর পড়েছে।
পৃথিবীর অতীত জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করা বিশেষজ্ঞ (প্যালিওক্লাইমেটোলজিস্ট) বোয়াং ঝাও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন সম্ভবত ভাইকিংদের অন্যান্য চলমান সমস্যাগুলোকেও বাড়িয়ে তোলে। কেননা একটি নির্দিষ্ট কারণকে দায়ী করা ঠিক হবে না। জলবায়ু-সম্পর্কিত কারণগুলো অন্যান্য কারণের (যেমন- হাতির দাঁতের বাণিজ্য) তাদের জীবনযাত্রার অবস্থার অবনতি ঘটায়।
গবেষণার প্রধান লেখক বোরেগিন বলেন, বর্তমানেও আমরা যেসব উদ্বেগের মুখোমুখি হয়েছি, ভাইকিংদের সমস্যাগুলোকেও তার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কারণ আধুনিক মানুষ অন্যান্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের শীর্ষে অবস্থান করছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মুখোমুখি হচ্ছে। তবে আমাদের আজ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার সুযোগ রয়েছে, যা ভাইকিংদের হাতে ছিল না।
ভূ-বিজ্ঞানী রিচার্ড অ্যালি বলেন, আজ যারা ক্রমবর্ধমান সমুদ্রের কাছাকাছি বাস করছেন, তারাও নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখেন। যেভাবে ভাইকিংরা মানিয়ে নিয়েছিল। তারা চলে যাওয়ার আগে কয়েক শতাব্দী ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সেখানে বসবাস করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।