লাইফস্টাইল ডেস্ক : হাত, কাপড় ও ঘরের বিভিন্ন স্থান সঠিকভাবে ধুয়ে রাখার মাধ্যমে ক্ষতিকর জীবাণুর বিস্তার রোধ করা যায়। তবে বেশিরভাগই মানুষ বিষয়টা মাথায় রাখেন না।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক জনস্বাস্থ্য মূলক সংগঠন ‘রয়্যাল সোসাইটি ফর পাবিলক হেল্থ (আরএসপিএইচ)’য়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, “ঘরের নোংরা স্থানগুলো পরিষ্কার করার পরিবর্তে মানুষের উচিত কীভাবে ক্ষতিকর জীবাণুর বংশবিস্তার বন্ধ করা যায় যে বিষয়ে বেশি মনোযোগী হওয়া।”
সঠিক সময়ে হাত, কাপড়, দেয়াল, মেঝে ইত্যাদি পরিষ্কার করা ঘরের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার জন্য বিশেষ জরুরি। তবে প্রতি চারজনের মধ্যে একজন মানুষ এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন না, যা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বিষয়।
‘প্রয়োজনের চাইতে বেশি পরিষ্কার’ বলে কোনো কিছু নেই। আর সঠিক পরিচ্ছন্নতাই জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচার প্রধান উপায়।
আরএসপিএইচ’য়ের এই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, “সাধারণ মানুষের ধুলাবালি, জীবাণু, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদির মধ্যকার তফাৎ নিয়ে কিছুটা ভুল ধারণা রয়েছে।
দুই হাজার মানুষের অংশগ্রহণে করা এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২৩ শতাংশ শিশুর ক্ষতিকর জীবাণুর সংস্পর্শে আসা উচিত, যাতে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়ে গড়ে ওঠে।”
তবে এই জরিপে নেপথ্যের বিশেষজ্ঞরা বলেন, “এই ধারণার একটি ক্ষতিকর দিক রয়েছে, যার কারণে শিশুরা মারাত্বক ক্ষতিকর জীবাণুর আক্রমণের শিকার হতে পারে। তাই মানুষের উচিত বিশেষ কিছু স্থান নির্দিষ্ট সময়ে পরিষ্কার করা, যাতে মারাত্বক ক্ষতিকর জীবাণু সেখানে বাসা বাঁধতে না পারে।”
ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা যখন জরুরি
খাবার কাটাকুটি ও রান্নার পর, শৌচাগার ব্যবহারের পর, ঘর মোছার পর, ময়লা কাপড় পরিষ্কারের পর, হাঁচি, কাশি দেওয়া এবং নাক পরিষ্কার করার পর, পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলাধুলা করার পর, ঘরের ময়লা ডাস্টবিনে ফেলা এবং ডাস্টবিন খালি করার পর, সংক্রমণের শিকার হওয়া কারও পরিচর্যার পর নিজের হাত পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি।
এছাড়াও কাঁচা খাবার রান্নার পর রান্নাঘরের কাটাকুটির স্থান, চপিং বোর্ড পরিষ্কার করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জীবাণুতে ভরা কোনো কিছু পরিষ্কারের পর তা মোছার কাপড়, ব্রাশ ইত্যাদি ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। ঘরের মেঝে, আসবাবপত্র ইত্যাদি ধুলার কারণে হয়ত দেখতে নোংরা মনে হয়, কিন্তু তাতে থাকা জীবাণু তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়।
পরিচ্ছন্নতা যেভাবে ব্যাক্টেরিয়া দূরে রাখে
যুক্তরাজ্যের ‘ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি’র মতে, “কোনো সমতল স্থান, তৈজসপত্র পরিষ্কার করতে উষ্ণ সাবান পানি ব্যবহার করলে তা ব্যাকটেরিয়া ধুয়ে ফেলে। তবে ব্যাকটেরিয়া মারতে চাইলে পানির তাপমাত্রা হতে হবে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস’য়ের বেশি এবং সময়ও লাগবে।
পরিষ্কার করতে যা ব্যবহার করা উচিত
‘ডিটারজেন্ট’, ‘ডিসইনফেক্ট্যান্ট’ এবং ‘স্যানিটাইজার’ এই তিন ধরনের পণ্য ব্যবহার করা হয় পরিষ্কার করার কাজে।
‘ডিটারজেন্ট’ পরিষ্কার করে বাইরের অংশ, দূর করে আঠালো ময়লা, তবে তা ব্যাকটেরিয়াকে মারতে পারে না।
‘ডিসইনফেক্ট্যান্ট’ ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে, তবে আঠালো কিংবা দৃশ্যমান ধুলাবালির মাঝে তা খুব একটা কার্যকর হয় না।
পরিষ্কার করা এবং জীবাণু দূর করা দুই কাজেই ‘স্যানিটাইজার’ ব্যবহার করা যায়।
প্রথমে ‘স্যানিটাইজার’ দিয়ে নোংরা স্থানটি মুছে নিতে হবে, যা দূর করবে ধুলাবালি, খাবারের অবশিষ্টাংশ কিংবা আঠালো ময়লা। পুনরায় সেখানে ‘স্যানিটাইজার প্রয়োগ করলে দূর হবে জীবাণু।
খাবার রান্নার পর রান্নাঘর পরিষ্কার করতে কাপড়ের পরিবর্তে কাগজের তোয়ালে ব্যবহার করা ভালো। এতে মোছার কাপড় জীবাণুতে সংক্রমিত হওয়া থেকে বাঁচবে।
লন্ডন স্কুল অফ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিকাল মেডিসিন’য়ের অধ্যাপক স্যালি ব্লুমফিল্ড বলেন, “পরিষ্কার করা আর জীবাণু মুক্ত রাখার মধ্যকার পার্থক্যটা সাধারণ মানুষের বুঝতে হবে। ঘর পরিষ্কার করা মানে শুধু ধুলাবলি ও ‘মাইক্রোবস’ দূর করা। কিন্তু ঘর জীবাণু মুক্ত রাখতে হলে সঠিক সময়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো কার্যকরভাবে পরিষ্কার করতে হবে। যাতে খাবার তৈরি, শৌচাগার ব্যবহার এবং পোষা প্রাণীর মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমিত হতে না পারে।
‘রয়্যাল সোসাইটি ফর পাবলিক হেলথ’য়ের ‘ট্রাস্টি’ এবং ‘ফুড হাইজিন’ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক লিসা অ্যাকারলি বলেন, “ঘরের বাইরে গিয়ে বন্ধু, পরিবার এবং পোষা প্রাণীর সঙ্গে খেলা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসার দারুণ একটি পন্থা, যা তৈরি করবে শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে খেয়াল রাখতে হিতে বিপরীত হওয়ার ব্যাপারিটাও। কারণ সেটাও যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পারলে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সহজ হবে এবং উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসাও ব্যহত হবে না।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।