সকাল সাতটা। ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে আলমগীর ভাইয়ের চোখে ঘুম নেই। গতকাল স্কুলের ফি জমা দিতে না পারায় মেয়ের চোখে জমে থাকা লজ্জার জল এখনো তার বুকে গরম ছুরির মতো বিঁধছে। পাশের ঘর থেকে স্ত্রীর কাশির শব্দ ভেসে আসে—ফুসফুসের ইনফেকশনের ওষুধ কেনার টাকাও হাতে নেই। চাকরি যাওয়ার পর থেকে এই এক বছরে পরিবারটিকে কী দিয়েছেন তিনি? অপমান, অনিশ্চয়তা আর দেনার বোঝা। এমনই হাজারো আলমগীর ভাইয়ের মুখোমুখি বাংলাদেশ। কিন্তু জানেন কি? আপনার সেই অব্যবহৃত সেলাই মেশিন, রান্নার হাতেখড়ি, বা ফোনের ক্যামেরাই হতে পারে সংকট থেকে মুক্তির সোপান। ঘরোয়া ইনকাম সোর্স শুধু পকেটে টাকা রাখে না, আত্মসম্মান ফিরিয়ে দেয়, স্বপ্ন দেখার সাহস জোগায়। এই লেখায় আমরা খুঁজে বের করব, কীভাবে সামান্য পুঁজি, আপনারই দক্ষতা আর ঘরের কোণকে কাজে লাগিয়ে গড়ে তুলতে পারেন আয়ের স্রোত—যা পাল্টে দেবে আপনার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
ঘরোয়া ইনকাম সোর্স: কেন এখন সময়ের অপরিহার্য প্রয়োজন?
২০২৩ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (BBS) তথ্য মতে, দেশে বেকারত্বের হার ৫.৩% ছাড়িয়েছে, যা যুবসমাজের মধ্যে প্রায় ১০.৬%। গত এপ্রিলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন চিত্রটি আরও ভয়াবহ: বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে ২,০০০ মানুষ চাকরি হারাচ্ছেন। কিন্তু এই সংকটই জন্ম দিচ্ছে অভূতপূর্ব সম্ভাবনার—ঘরে বসে আয়ের সুযোগ তৈরি হচ্ছে বিশাল আকারে। কুমিল্লার রেশমা আক্তারের গল্প ভাবুন। স্বামী প্রবাসে, দুই সন্তান আর শ্বশুরবাড়ির দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে তিনি হারিয়েছিলেন নিজের পরিচয়। ২০২২ সালে ফেসবুকে হোমমেড পিঠা বিক্রি শুরু করে আজ তার মাসিক আয় ৪০,০০০ টাকা। রাজশাহীর প্রতিবন্ধী যুবক সজীব, যার হাঁটাচলায় সমস্যা, এখন ইউটিউবে গ্রাফিক ডিজাইন টিউটোরিয়াল দিয়ে মাসে ২৫,০০০ টাকা আয় করেন। এরা কোনো ব্যতিক্রম নন; বাংলাদেশে ৩৭% ফ্রিল্যান্সার এখন কাজ করছেন গ্রামীণ এলাকা থেকে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে।
ঘরোয়া আয়ের প্রাসঙ্গিকতা শুধু আর্থিক নয়—এটা সামাজিক বিপ্লব। যখন একজন গৃহিণী সাবলীলভাবে বলতে পারেন, “আমার আয় আমার সিদ্ধান্ত”, তখন পরিবারে নারীর মর্যাদা বদলে যায়। যখন একজন প্রবীণ নাগরিক পেনশনের ওপর নির্ভর না করে অনলাইনে কনসালট্যান্সি দেন, তখন তার আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। ঘরোয়া ইনকাম সোর্সের তিনটি মৌলিক সুবিধা:
- স্থানিক স্বাধীনতা: ঢাকার যানজটে সময় নষ্ট না করে, সিলেটের চা বাগানের পাশে বসেও আয়
- সময়ের নিয়ন্ত্রণ: সন্তানের স্কুল ড্রপ বা বাবা-মায়ের ডাক্তার ভিজিট—সবই সামলানো যায়
- মানসিক স্বস্তি: চাকরি হারানোর ভয়, বসের বকাঝকা থেকে মুক্তি
বাস্তব উদাহরণ: খুলনার মিতা পারভীন। ২০২০ সালে লকডাউনে স্বামীর রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেলে, তিনি বাড়ির ছাদে শুরু করেন অর্গানিক সবজি চাষ। আজ তার “গ্রিন টেরেস” সরবরাহ করে স্থানীয় স্টার হোটেলগুলোতে, মাসিক আয় ৭০,০০০+ টাকা। তার সাফল্যের চাবিকাঠি? স্থানীয় চাহিদা বুঝে সঠিক পণ্য বেছে নেওয়া।
সহজে আয় বাড়ানোর ১০টি ঘরোয়া উপায়: হাতের কাছে থাকা সম্পদকে সোনায় পরিণত করুন
আপনার বিশেষ দক্ষতা বা রিসোর্স কী? নিচের তালিকা থেকে বেছে নিন আপনার জন্য উপযুক্ত পথ:
১. হোম ক্যাটারিং: রান্নার হাতাকে আয়ের হাতিয়ারে রূপান্তর
রাজধানীর গুলশানে বসে নুসরাত জাহান তার রসগোল্লা বিক্রি করেন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে। শুরুতে শুধু পরিচিতদের মধ্যে, এখন তার সাপ্তাহিক অর্ডার ১০০+। কীভাবে শুরু করবেন?
- ধাপ ১: বিশেষ একটি আইটেম বেছে নিন (যেমন: কুমিল্লার বিখ্যাত বিরিয়ানি, সিলেটের সাতকরা, বা ডায়াবেটিক ফ্রেন্ডলি মিষ্টান্ন)
- ধাপ ২: ফুড গ্রেড প্যাকেজিং ও হাইজিন নিশ্চিত করুন (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের গাইডলাইন মেনে চলুন)
- ধাপ ৩: ফেসবুক পেজ খুলে আকর্ষণীয় ফটো শেয়ার করুন, স্থানীয় ফুড গ্রুপে জয়েন করুন
স্টার্টআপ খরচ: মাত্র ২,০০০-৫,০০০ টাকা (প্রাথমিক রান্নার সরঞ্জাম ও প্যাকেজিং)
গড় মাসিক আয়: ১৫,০০০ – ৮০,০০০ টাকা (আইটেমের ডিমান্ড ও বিপণনের উপর নির্ভরশীল)
২. হ্যান্ডিক্রাফট ও হোম ডেকর: শিল্পীর স্পর্শে অর্থ সৃষ্টি
নাটোরের গ্রামে বসে শামীমা আক্তার তৈরি করেন নকশিকাঁথা। ডারাজ, ক্রিয়েটিভ বাংলাদেশের মতো প্ল্যাটফর্মে বিক্রি হয় তার পণ্য। গত ঈদে একাই ৩০টি কাঁথা বিক্রি করে আয় করেন ৪৫,০০০ টাকা।
- ট্রেন্ডিং আইটেম: মাটির হ্যান্ডিক্রাফটেড ফ্লাওয়ার ভেস, জুট ব্যাগ, নারিকেল শেলের ডেকোর
- বাজারজাতকরণ: স্থানীয় হাটে স্টল, ফেসবুক লাইভ বিক্রয়, বা Etsy-তে আন্তর্জাতিক বিক্রয়
বিশেষ টিপ: বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (BSCIC) থেকে নিবন্ধন করুন, পাবেন প্রদর্শনীর সুযোগ
৩. ফ্রিল্যান্সিং: ইন্টারনেট সংযোগই আপনার অফিস
রংপুরের দীনেশ, যার পরিবার কখনো কল্পনাও করেনি যে ল্যাপটপেই আয় সম্ভব, এখন Upwork-এ ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করে মাসে ৬০,০০০ টাকা আয় করেন। শুরুর জন্য জরুরি:
- স্কিল ডেভেলপমেন্ট: Coursera, 10 Minute School-এর ফ্রি/পেইড কোর্স
- পোর্টফোলিও বিল্ডিং: Fiverr-এ ছোট প্রজেক্ট নিয়ে শুরু করুন
- ক্লায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট: সময়মত ডেলিভারি দিতে Trello বা Google Tasks ব্যবহার করুন
টপ ৫ ডিমান্ডেড স্কিল: ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং, গ্রাফিক ডিজাইন, ভয়েস-ওভার, ভিডিও এডিটিং
সতর্কতা: Freelancer.com বা Upwork-এ অ্যাকাউন্ট খুলতে $20-50 খরচ হতে পারে। কখনোই “গ্যারান্টিড ইনকাম” বলে কাউকে এডভান্স পেমেন্ট করবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্স আয় দেশে আনতে পারবেন পেমেন্ট গেটওয়ে (Payoneer, PayPal) বা ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে।
৪. বাড়ির ছাদে খামার: সবুজ সোনার চাষ
ঢাকার মোহাম্মদপুরে জাকির হোসেনের ৮০০ বর্গফুট ছাদে এখন হাইড্রোপনিক সবজির খামার। লেটুস, টমেটো, স্ট্রবেরি—বিক্রি করেন স্থানীয় সুপার শপে। মাসে আয় ৩৫,০০০ টাকা।
- সহজ পদ্ধতি: ভার্টিক্যাল গার্ডেনিং (বাঁশের র্যাক বা PVC পাইপ ব্যবহার করে)
- লো-কস্ট আইডিয়া: মাশরুম চাষ (মাত্র ১৫ দিনে ফলন), বা মাছ-সবজির সমন্বিত চাষ (একুয়াপনিক্স)
- সরকারি সহায়তা: কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (DAE) “উদ্ভাবনী কৃষি প্রযুক্তি” প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ
৫. টিউশন/অনলাইন কোচিং: জ্ঞানের বিনিময়ে আয়
চট্টগ্রামের হাসিনা আপা, যিনি ২০ বছর স্কুলে ইংরেজি পড়িয়েছেন, এখন Zoom-এ ব্যাচ তৈরি করে মাসে ১২,০০০ টাকা আয় করেন।
- টার্গেট গ্রুপ: PSC/JSC/SSC পরীক্ষার্থী, IELTS অ্যাপ্লিকেন্ট, বা কর্পোরেট ইংলিশ ট্রেনিং
- মার্কেটিং: লোকোল ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট, বা YouTube-এ ফ্রি ক্লাসের টিজার
ইনোভেটিভ আইডিয়া: বিশেষ দক্ষতা (যেমন: মাইক্রোসফ্ট এক্সেল, কোডিং বেসিক) শেখানোর শর্ট কোর্স
৬. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট: স্ক্রলিংকে আয়ে পরিণত করুন
দিনাজপুরের কলেজ ছাত্র রবিন, Instagram Reels বানিয়ে স্থানীয় দোকানগুলোর প্রোমোশন করেন। মাসে ৫-৬টি ক্লায়েন্ট থেকে আয় ২০,০০০ টাকা।
- শুরু করুন: ক্যানভা দিয়ে বানান ফ্রি গ্রাফিক্স, CapCut দিয়ে ভিডিও এডিট করুন
- ক্লায়েন্ট খুঁজুন: ফেসবুকের “ডিজিটাল মার্কেটিং বাংলাদেশ” গ্রুপে অ্যাকটিভ হোন
টুলস: Hootsuite (সোশ্যাল মিডিয়া শিডিউলিং), Google Analytics (পারফরম্যান্স ট্র্যাকিং)
৭. হোম এসেম্বলি কাজ: সিম্পল টাস্ক, স্টেডি ইনকাম
গাজীপুরের গৃহবধূ সায়মা, স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির জন্য স্মার্টফোন চার্জার এসেম্বল করেন। দৈনিক ৪-৫ ঘন্টা কাজে মাসিক ১০,০০০ টাকা।
- কোথায় পাবেন কাজ: ন্যাশনাল সার্ভিস (নেস) প্রকল্প, বা স্থানীয় শিল্প এস্টেট
- প্রয়োজনীয়তা: সাধারণ হাতের দক্ষতা, ধৈর্য
সতর্কতা: কখনোই এডভান্স টাকা দিয়ে কাজের অফার গ্রহণ করবেন না।
৮. ব্লগিং/অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং: প্যাশনকে কারেন্সিতে
খাদিজা, একজন মা, তার “বাংলা মা ও শিশু” ব্লগে শিশুর যত্ন বিষয়ক টিপস দেন। Amazon অ্যাফিলিয়েট লিংক থেকে মাসে ৮,০০০ টাকা আয়।
- প্ল্যাটফর্ম: Blogger (ফ্রি), বা WordPress (কাস্টমাইজেশন সুবিধা)
- মনিটাইজেশন: Google AdSense, বা স্থানীয় ব্র্যান্ডের স্পনসরশিপ
ট্রাফিক বৃদ্ধির উপায়: SEO অপটিমাইজেশন, Pinterest-এ পিন শেয়ার
৯. টেলিকমিউটিং: ঘরে বসে কর্পোরেট জব
বরিশালের ইকবাল, যার চাকরি গিয়েছিল COVID-এ, এখন ঢাকার একটি সফটওয়্যার ফার্মের জন্য রিমোট কাস্টমার সার্ভিস এজেন্ট। বেতন ৩৫,০০০ টাকা।
- চাকরি প্ল্যাটফর্ম: Bdjobs.com, LinkedIn
- প্রস্তুতি: স্টেবল ইন্টারনেট, শান্ত পরিবেশ, মাইক্রোফোন
সাক্ষাৎকার টিপ: ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করুন, পেশাদার পোশাক পরুন
১০. রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিং: আবর্জনাকে অর্থে রূপান্তর
সাভারের জাহাঙ্গীর পুরনো টায়ার দিয়ে তৈরি করেন গার্ডেন পট। স্থানীয় নার্সারিতে বিক্রি হয় মাসে ১০০+ পিস।
- লো-ইনভেস্টমেন্ট আইডিয়া: প্লাস্টিক বোতল থেকে ফ্লাওয়ার পট, পুরনো শাড়ি থেকে কুশন কভার
- বিক্রয় পয়েন্ট: Aarong, বা ফেসবুক মার্কেটপ্লেস
পরিবেশগত প্রভাব: আপনি আয় করছেন, আর পৃথিবী বাঁচাচ্ছেন—ডাবল বেনিফিট!
সফলতার গল্প: যাদের জীবন বদলে দিয়েছে ঘরোয়া ইনকাম সোর্স
মৌসুমীর জয়গান: কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী মৌসুমী, যার স্বামী দিনমজুর, পাঁচ বছর আগে শুরু করেছিলেন হাঁস-মুরগির খামার। আজ তার খামারে ৫০০+ পোল্ট্রি, স্থানীয় হোটেলগুলোতে সরবরাহ করেন ডিম ও মাংস। মাসিক আয় ৫০,০০০ টাকা। তার মন্তব্য: “স্বাবলম্বী হওয়ার স্বাদই আলাদা। আজ আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখি।”
আরিফের ডিজিটাল রেভোলিউশন: নোয়াখালীর আরিফ, যার পা নেই, শিখলেন গ্রাফিক ডিজাইন। এখন Fiverr-এ লোগো ডিজাইন করে মাসে ৩০,০০০ টাকা আয় করেন। তার ক্লায়েন্ট আমেরিকা, কানাডা থেকে। তার কথায়: “ঘরে বসে আয় আমাকে শারীরিক সীমাবদ্ধতা ভুলিয়ে দিয়েছে।”
রোখেয়ার রান্নাঘর থেকে রেভিনিউ: সিলেটের রোখেয়া শুরু করেছিলেন মাত্র তিনটি হোমমেড আচার দিয়ে। আজ তার “সিলেটি কিচেন” ব্র্যান্ডের ৫০+ পণ্য বিক্রি হয় দেশজুড়ে। ঈদের সময় মাসিক বিক্রি ৫ লাখ টাকা! তার সাফল্যের মন্ত্র: “কখনোই কম দামে পণ্য বিক্রি করিনি। গুণগত মানই আমার ব্র্যান্ডের মূলধন।”
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা: বাধা ডিঙানোর প্রায়োগিক কৌশল
সময় ব্যবস্থাপনা: যখন সন্তান, রান্না আর আয়—সবই সমান্তরালে চালাতে হয়।
- সমাধান: Pomodoro Technique প্রয়োগ করুন (২৫ মিনিট কাজ + ৫ মিনিট ব্রেক)। পরিবারের সদস্যদের কাজে যুক্ত করুন—বাচ্চারা প্যাকেজিংয়ে সাহায্য করতে পারে।
মূলধনের অভাব: ব্যাংক লোন নেওয়া কি একমাত্র উপায়?
- সমাধান: ক্ষুদ্র ঋণ (Microfinance) নিন ASA বা BRAC থেকে। বিকল্প: প্রি-অর্ডার সিস্টেম (অগ্রিম টাকা নিয়ে পণ্য তৈরি)।
বাজার প্রতিযোগিতা: হাজারজন একই পণ্য বিক্রি করলে আপনারটা আলাদা হবে কীভাবে?
- কৌশল: USP (Unique Selling Proposition) তৈরি করুন। যেমন: “১০০% অর্গানিক হালিম মসলা” বা “ব্রেস্ট ক্যান্সার সারভাইভারদের তৈরি হ্যান্ডিক্রাফট”।
ডিজিটাল লিটারেসির অভাব: ইন্টারনেটে মার্কেটিং বুঝতে সমস্যা?
- সমাধান: ডিজিটাল বাংলাদেশ ট্রেনিং সেন্টারে বিনামূল্যে কোর্স করুন। YouTube-এ বাংলা টিউটোরিয়াল দেখুন।
গুরুত্বপূর্ণ লিংক: বাংলাদেশ সরকারের মূসক পোর্টাল – এখানে আপনার ব্যবসা নিবন্ধন করুন, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নিন।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা: ঘরোয়া আয়কে কীভাবে টেকসই করবেন?
শুধু মাসিক আয় নয়, বিনিয়োগ করতে শিখুন। মাত্র ছয় মাস টিউশনের আয় জমিয়ে নোয়াখালীর সালমা কিনেছেন একটি সেলাই মেশিন। এখন তিনি পোশাক তৈরির কাজও যোগ করেছেন। টেকসই উন্নয়নের জন্য:
- আয়ের সোর্স ডাইভারসিফাই করুন: শুধু হোম ক্যাটারিংয়ের উপর নির্ভর না করে, প্যাকেজিং ডিজাইন বা রেসিপি ই-বুক বিক্রি করুন।
- টেকনোলজি অ্যাডপ্ট করুন: অটোমেশন টুলস (যেমন: WhatsApp Business API) ব্যবহার করে অর্ডার ম্যানেজ করুন।
- নেটওয়ার্ক গড়ুন: স্থানীয় মহিলা উদ্যোক্তাদের সাথে গ্রুপ তৈরি করুন, পণ্যের বিনিময় করুন।
- সেভিংস ক্যালকুলেটর: প্রতি মাসে আয়ের ১০% আলাদা করে রাখুন সম্প্রসারণের জন্য।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশেষ সুযোগ: সরকারের “মুজিব ইকোনমিক স্টিমুলাস প্যাকেজ” থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা নিতে পারেন ৫% সুদে ঋণ। এছাড়া, ICT বিভাগের “হোমেস্টেড ইনকাম প্রোগ্রাম” এ প্রশিক্ষণ ও গ্র্যান্টের সুবিধা।
ঘরোয়া ইনকাম সোর্সের ভবিষ্যৎ: ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্স মার্কেট পৌঁছাবে $১ বিলিয়নে। গ্রামীণফোনের রিপোর্ট বলছে, ৬২% তরুণ এখন পার্টটাইম হোমবেসড ইনকাম সোর্স খুঁজছেন।
জেনে রাখুন
প্রশ্ন: কোন ঘরোয়া ইনকাম সোর্সে সবচেয়ে কম বিনিয়োগ লাগে?
উত্তর: ফ্রিল্যান্সিং বা কন্টেন্ট রাইটিংয়ে প্রয়োজন শুধু ইন্টারনেট সংযোগ ও বেসিক কম্পিউটার জ্ঞান। Coursera-র ফ্রি কোর্স দিয়ে শুরু করতে পারেন। মাসিক আয় নির্ভর করবে স্কিল লেভেলের উপর।
প্রশ্ন: ঘরে বসে আয়ের জন্য কি ট্যাক্স দিতে হয়?
উত্তর: বাংলাদেশে বার্ষিক আয় ৩ লক্ষ টাকার নিচে হলে আয়কর দিতে হয় না। তবে ব্যবসা নিবন্ধন (ট্রেড লাইসেন্স) এবং ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক যদি মাসিক বিক্রি ৮০,০০০ টাকার বেশি হয়।
প্রশ্ন: অনলাইন আয়ের টাকা কীভাবে ব্যাংকে আনব?
উত্তর: Payoneer, PayPal বা Skrill একাউন্ট খুলে বিদেশি ক্লায়েন্ট থেকে টাকা নিন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্স আয় আনতে কোনো রেস্ট্রিকশন নেই। টাকা রেমিট হলে স্থানীয় ব্যাংক একাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে।
প্রশ্ন: মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ঘরোয়া আয়ের উপায় কোনটি?
উত্তর: হোম ক্যাটারিং, হ্যান্ডিক্রাফট, বা টেলিটিউশন নিরাপদ অপশন। অনলাইন কাজে গোপনীয়তা রক্ষা করুন: আলাদা ইমেইল আইডি ব্যবহার করুন, ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার এড়িয়ে চলুন।
প্রশ্ন: ঘরে বসে আয় কি সত্যিই স্থায়ী হয়?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি আপনি কাস্টমার রিলেশন, কোয়ালিটি কন্ট্রোল ও মার্কেট ট্রেন্ড নিয়ে ক্রমাগত শিখতে থাকেন। টেকসই আয়ের জন্য ব্র্যান্ডিং জরুরি।
প্রশ্ন: বয়স ৫০+ হলে কী ঘরোয়া আয়ের সুযোগ পাবেন?
উত্তর: অবশ্যই! অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে শুরু করুন কনসালটিং (যেমন: ক্যারিয়ার গাইডেন্স), হোম গার্ডেনিং ট্রেনিং, বা ঐতিহ্যবাহী রেসিপির ওয়ার্কশপ।
আপনার হাতের নাগালেই রয়েছে স্বনির্ভর হওয়ার চাবিকাঠি। ঘরোয়া ইনকাম সোর্স শুধু টাকার জোগান দেয় না, গড়ে দেয় আত্মবিশ্বাসের দুর্গ। আলমগীর ভাইয়ের গল্পে ফিরে যাই—সে আজ তার স্ত্রীর ওষুধ কিনেছে সেই সেলাই মেশিন দিয়ে, যে বছরজুড়ে ধুলো খাচ্ছিল। আপনারও যে জিনিসটি অব্যবহৃত পড়ে আছে, সেটাই হতে পারে ভাগ্য বদলের হাতিয়ার। সময় এসেছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার: অপেক্ষা করবেন, নাকি আজই শুরু করবেন? একটি সুইচ অন করুন, একটি ফেসবুক পেজ খুলুন, বা বীজ বপন করুন ছাদে। কারণ, স্বাবলম্বী হওয়ার প্রথম শর্ত হলো—শুরু করা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।