দশম শ্রেণির (১৫) এক ছাত্রীকে রাতে বাড়ি থেকে ‘চুরি’ করে নিয়ে ধর্ষণ করে এক যুবক। রাতভর ধর্ষণের পরে তাকে রাস্তার পাশে একটি বাগানে ফেলে রেখে চলে ওই যুবক। সকালে স্থানীয় লোকজন মেয়েটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। কিশোরীর জ্ঞান ফিরে এলে ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হয়। পরে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে ধর্ষকের সঙ্গেই ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার সরমহল গ্রামে শুক্রবার সকালে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, সরমহল গ্রামের রশিদ খানের ছেলে আল আমিন খান (২৬) স্থানীয় ওই স্কুলছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি হয়নি কিশোরী। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আল আমিন তার দুই মামাতো ভাইকে নিয়ে মেয়েটির বাড়ি যায়। ‘কৌশলে’ দরজা খুলে কিশোরীকে তুলে নিয়ে সরমহল গ্রামের জোড়া কালভার্ট এলাকায় রাতভর ধর্ষণ করে। কিশোরী জ্ঞান হারালে রাস্তার পাশে একটি বাগানে তাকে ফেলে চলে যায় আল আমিন। শুক্রবার সকালে অজ্ঞান অবস্থায় দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে যায়। জ্ঞান ফেরার পর ওই কিশোরী পরিবারের কাছে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে।
বিষয়টি জানাজানি হলে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে আল আমিন ও তার পক্ষের লোকজন মেয়েটির পরিবারকে চাপ সৃষ্টি করে। আল আমিনের পরিবার স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য তদবির শুরু করে। নানা চাপের মুখে মেয়েটির পরিবার ধর্ষণের ঘটনা পুলিশকে জানায়নি।
এ সুযোগে বেলা ১২টার দিকে সরমহল গ্রামে আল আমিনের বাড়িতে মেয়ে পক্ষের লোকজন নিয়ে বৈঠক করেন স্থানীয় নারী ইউপি সদস্যর স্বামী টিপু হাওলাদার, সরমহল গ্রামের সোহেল ফরাজী, রোকন, সোহেল ও দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন। এক পর্যায়ে ধর্ষণের ঘটনার জন্য উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে ওই কিশোরীকে বিয়ে করতে রাজি হয় আল আমিন।
পরে স্থানীয় এক কাজী ডেকে দুই লাখ টাকা দেনমহর ধার্য করে বিয়ে সম্পন্ন হয় তাদের। এ সময় মেয়ের নামে ৫ শতাংশ জমি দলিল করে দেওয়ার জন্য আল আমিন লিখিত চুক্তি করেন। আল আমিন পেশায় ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক। তার বাবা রশিদ খান সরমহল গ্রামের একজন কৃষক।
মেয়েটির বিয়ের বয়স না হওয়ায় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও বিয়ের তারিখ দেখায়নি কাজী মো. জহিরুল ইসলাম। বিয়ে পড়ানোর একটি ছবি কালের কণ্ঠের প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। বিয়ের কাজী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, মৌখিকভাবে কথাবার্তা হয়েছে। এখনো বিয়ে পড়ানো হয়নি, কারণ মেয়ের বয়স হয়নি। বয়স সম্পন্ন হলে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হবে।
এ ব্যাপারে সরমহল গ্রামের টিপু হাওলাদার বলেন, দুই পক্ষই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিষয়টি জানান। সবাই মিলে ছেলে মেয়ের বিয়ের কথা বললে, উভয় পরিবার রাজি হয়ে যায়। পরে কাজী ডেকে তাদের বিয়ের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। মেয়ের বিয়ের বয়স হতে ৪ মাস বাকি আছে। বয়স হলে গেলে রেজিস্ট্রিশনে তারিখ দেওয়া হবে।
নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মেদ বলেন, এ রকমের কোনো ঘটনা আমার জানা নেই। ধর্ষণ বা বিয়ের বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।