বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ইন্টারনেট একটি আবেগহীন জগৎ। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিশেষ করে যুব সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। অধিকাংশ শিক্ষার্থীই রাতের দুই-তৃতীয়াংশ সময় জেগে থাকে। ফলে মাথা ব্যথা, ক্ষুধা মন্দা, নিদ্রাহীনতার মতো ব্যাধি দেখা দেয়। ডিজিটাল পর্দার ব্যবহার শিশুর সমাজিক বিকাশেও বাধাগ্রস্ত করে।
বুধবার (৬ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এ. আর. মল্লিক লেকচার হলে ডিজিটাল পর্দায় সময় কাটানোর শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকি বিষয়ক বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক শাকিল আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে আছি। বাংলাদেশে ১৬৮ মিলিয়ন মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর কাছে ১৯০ মিলিয়ন মোবাইল রয়েছে। পুরো পৃথিবী ট্রেডিশনাল মিডিয়া থেকে ডিজিটাল মিডিয়ায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। ইন্টারনেট একটি আবেগহীন জগৎ। আমরা মোবাইল, কম্পিউটারসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের মাধ্যমে লেখাপড়াসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজ করে থাকি। ৩ ঘন্টার বেশি ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করা স্বাস্থ্য ঝুঁকির আওতায় পড়ে। ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের অতিরিক্ত ব্যবহার শারীরিকভাবে ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাথা ব্যথা, ক্ষুধা মন্দা,চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়।
তিনি বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা মোবাইল ব্যবহারের সময় ঘাড় বাঁকা করার ফলে ঘাড়ে ৬০ পাউন্ড চাপ পড়ে। এর ফলে ঘাড়ে ব্যথাসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। এটাকে টেক্সট নেক সিম্পটম বলা হয়। কখনো কখনো ব্যবহারকারীর হাতের মধ্যে ঝিনঝিন করে। চোখ ব্যথা করে। হাতের আঙুলের ঘোড়ায় ব্যথা হয়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সময় ঘাড় সোজা রাখতে হবে, দুই ঘন্টার কম ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে। একসময় মানুষ জ্যোৎস্না রাতে ঘুরতে যেতে পারত। আলো দূষণের ফলে এখন আর চাঁদের আলোয় তা সম্ভব হয় না। এখন মানুষ কৃত্রিম আলো ছাড়া চলতে পারে না। ১ মিলিয়ন বছরের অভ্যাস আমরা ১৫ বছরে পরিবর্তন করে ফেলেছি।’
অধ্যাপক শাকিল আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল পর্দায় বেশি সম ব্যয় করার ফলে, রাতে দেরিতে ঘুম আসে, সকলে দেরিতে ঘুম ভাঙে, এমনকি নিদ্রাহীনতায়ও ভুগতে হয়। একজন মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য সকালের সূর্যের আলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলো মানসিক অবসাদ কমায়।’
ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে হবে, যথাসম্ভব সরাসরি যোগাযোগ করার চেষ্টা করতে হবে , ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা। ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার না করা, বাচ্চাদের হাতে মোবাইল না দেওয়া।’
এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমরান জাহান বলেন, ‘আজকের বক্তৃতাটি আমাদের পাঠ্যক্রমের বাইরে একটি বিষয়। আজকাল ছেলে-মেয়েদের শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আমরা দেখতে পাই ক্লাসে এসে শিক্ষার্থীরা ঘুমাই। কারণ তারা রাতে ঘুমায় না। সময়মতো ঘুমাতে যায় না, ঘুম থেকে সময়মতো উঠতেও পারে না। অধিকাংশরাই রাত ১২টার পর ঘুমায়।অতিরিক্ত ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহারের ফলে তাদের ঘুমে সমস্যা হয়।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।