জুমবাংলা ডেস্ক : রাতের নীরবতা আমাদের আত্মার এক অনন্য প্রশান্তি দেয়। দিনের ব্যস্ততা শেষে যখন শরীর ক্লান্ত, তখন মন চায় একটু প্রশান্তি, একটু সান্ত্বনা। এই প্রশান্তির এক অন্যতম উপায় হলো ঘুমানোর আগে জিকির করা। মহান আল্লাহর নাম স্মরণে আমাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়, জীবন পায় বরকত।
ঘুমানোর আগে জিকির: বরকত ও শান্তির চাবিকাঠি
ঘুমানোর আগে জিকির করা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুশীলন নয়, এটি এক প্রকার আত্মিক থেরাপি। রাসূল (সা.)-এর হাদীস থেকে জানা যায়, তিনি প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আল্লাহর নাম স্মরণ করতেন এবং তাঁর উম্মতদেরও তা করতে বলতেন।
কিছু নির্দিষ্ট জিকির রয়েছে, যেগুলো ঘুমানোর আগে পড়লে রাতে বরকত ও শান্তি নেমে আসে। যেমন:
- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার: প্রতি শব্দ ৩৩ বার করে পড়া সুন্নত। এটি ঘুমানোর আগের মূল জিকির হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছে।
- আয়াতুল কুরসি: ঘুমানোর আগে এটি পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ফেরেশতা রাতভর পাহারা দেন।
- সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস: এই সূরাগুলো তিনবার করে পড়ে নিজের শরীর ও পরিবারের উপর ফুঁ দিলে তা শয়তানের খারাপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
এই জিকিরগুলো শুধু যে রাতে শান্তি আনে তা নয়, বরং এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর নিকটতা বৃদ্ধি পায়। মন ও দেহে আসে প্রশান্তি, আর ঘুম হয় মধুর ও নিরবিচার।
ঘুমের আগের জিকিরে আধ্যাত্মিক ও মানসিক উপকারিতা
বর্তমানে মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও হতাশা আমাদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। ঘুমের আগে কিছুক্ষণ জিকির করা একপ্রকার মানসিক বিশ্রাম। এটি শুধু বিশ্বাসের অংশ নয়, বরং সায়েন্স বলছে, মাইন্ডফুলনেস, মন্ত্রচর্চা ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ঘুমের মান উন্নত করে।
যখন একজন ব্যক্তি নিরব মনে আল্লাহর নাম স্মরণ করেন, তখন তার হৃদয় ধীরগতি লাভ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে কেউ নিয়মিত জিকির করলে তার স্ট্রেস হরমোন করটিসল কমে যায়। ফলে ঘুম আসে সহজে, এবং গভীরভাবে।
জিকিরের উপকারিতাগুলো নিম্নরূপ:
- শান্ত মন: দিনের চিন্তা ও উদ্বেগ কমে যায়।
- শারীরিক বিশ্রাম: দেহ ও মন শান্ত হওয়ায় ঘুম দ্রুত আসে।
- আত্মিক উন্নতি: ঈমান মজবুত হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
- নিরাপত্তা: আল্লাহর স্মরণে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ভালো ঘুম মানেই ভালো স্বাস্থ্য। আর ভালো ঘুমের শুরু হতে পারে কিছু ভালো জিকিরের মাধ্যমে।
প্রিয় রাসূল (সা.)-এর রাতে পড়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিকির
হাদীস থেকে পাওয়া জিকিরসমূহ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘুমানোর আগে বিভিন্ন দোয়া ও জিকির পড়তেন, যেমন:
- بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ أَمُوتُ وَأَحْيَا – “হে আল্লাহ! তোমার নামেই আমি মরি ও জীবিত হই।”
- اللَّهُمَّ قِنِي عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ – “হে আল্লাহ! তোমার শাস্তি থেকে আমাকে রক্ষা কর সেই দিন যখন তুমি তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান করবে।”
এই দোয়া ও জিকিরগুলো প্রতিরাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আমাদের কেবল নিরাপত্তা দেয় না, বরং আত্মিক উন্নয়নে সহায়ক।
জিকিরের সময় ও নিয়ম
ঘুমানোর আগে অজু করে বিছানায় যাওয়া সুন্নত। তারপর ডান দিকে শুয়ে জিকির শুরু করা উত্তম। ছোট ছোট জিকির হলেও মনোযোগ দিয়ে পড়া জরুরি। এই নিয়মগুলোর মাধ্যমে জিকিরের প্রভাব অনেকগুণ বেড়ে যায়।
আপনি চাইলে রাতের নিরিবিলি মুহূর্তে ধ্যানের মতো পরিবেশে জিকির করতে পারেন। মনকে স্থির করে একাগ্রতায় আল্লাহর নাম স্মরণ করলেই অনুভব করবেন এক গভীর প্রশান্তি।
এই নিয়মিত অনুশীলন আপনার ঘুমকে বরকতময় করবে এবং জীবনকে করবে আরো প্রশান্তিময়। ঘুমানোর আগে জিকির আমাদের মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার এক অপরিহার্য চাবিকাঠি।
জেনে রাখুন-
ঘুমানোর আগে কোন কোন জিকির পড়া সুন্নত?
ঘুমানোর আগে ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার পড়া, আয়াতুল কুরসি এবং তিন কুল পড়া সুন্নত।
ঘুমের আগে জিকির পড়লে কি মানসিক চাপ কমে?
হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে জিকির করলে করটিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমে যায়, ফলে মন শান্ত হয়।
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে কী হয়?
আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে আল্লাহ একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেন যিনি রাতভর পাহারা দেন।
জিকির কি শুধুই ধর্মীয় কাজ?
না, এটি মানসিক ও আত্মিক উন্নতির একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবেও বিবেচিত।
শিশুদের জন্য কি ঘুমের আগে জিকির উপকারী?
অবশ্যই, শিশুদের ঘুমানোর আগে সহজ জিকির শেখালে তা তাদের মনে প্রশান্তি আনে ও ধর্মীয় চেতনা গড়ে তোলে।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.