বঙ্গোপসাগরের গর্জন। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ হঠাৎই বেড়ে যাচ্ছে, গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ছে। দূর থেকে শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের ক্রুদ্ধ আওয়াজ। এই দৃশ্য বাংলাদেশের উপকূলবাসীর কাছে অপরিচিত নয়। ঘূর্ণিঝড় – প্রকৃতির এক ভয়াবহ রূপ, যার সামনে পড়লে প্রস্তুতিই একমাত্র ভরসা। ১৯৭০ এর ভয়াল ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা, আম্ফান – প্রতিটি নামই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় প্রাণহানির মর্মান্তিক ইতিহাস। কিন্তু প্রতিবারই আমরা শিখেছি, প্রস্তুত থাকাটাই পারে জীবন বাঁচাতে। এই লেখা শুধু তথ্য দেয় না, এটি একটি ঘূর্ণিঝড়ে নিরাপদ থাকার গাইড, আপনার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য একটি জীবনরক্ষাকারী রোডম্যাপ।
ঘূর্ণিঝড়ে নিরাপদ থাকার গাইড: জীবন বাঁচাতে এই পদক্ষেপগুলো জরুরি
ঘূর্ণিঝড় শুধু বাতাস বা বৃষ্টি নয়; এটি জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস, বিদ্যুৎ বিপর্যয়, এবং দীর্ঘমেয়াদি সংকটের সমন্বয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM) এর মতে, “প্রস্তুতি” শব্দটির মধ্যেই নিহিত আছে বেঁচে থাকার ৯০% সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। তাই এখনই সময় প্রস্তুতি নেওয়ার, কালকের জন্য অপেক্ষা নয়।
প্রাক-ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি: সময় থাকতেই যা করণীয় (কমপক্ষে ৭২ ঘন্টা আগে)
আশঙ্কার খবর শুনলেই শুরু করুন। প্রতিমুহূর্তই মূল্যবান।
জরুরি তথ্য সূত্রের সাথে সংযুক্ত থাকুন:
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD): তাদের ওয়েবসাইট (www.bmd.gov.bd) এবং বিশেষ বুলেটিন নিয়মিত চেক করুন। “ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সংকেত” (১ থেকে ১০ নম্বর) বুঝে নিন। ৮, ৯, ১০ নম্বর সতর্কতা মানে অতি ভয়ংকর ঝড় আসন্ন।
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM): স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি (UDMC), ইউনিয়ন পরিষদ, এবং DDM এর অফিসিয়াল চ্যানেল থেকে নির্দেশনা পান।
- রেডিও/টিভি: স্থানীয় রেডিও স্টেশন (বিটিআরসি, বাংলাদেশ বেতার) এবং টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলের বিশেষ অনুষ্ঠান অনুসরণ করুন।
- মোবাইল অ্যালার্ট: সরকারি জরুরি মেসেজ সার্ভিসে নিবন্ধিত থাকুন (যেখানে উপলব্ধ)।
জরুরি প্রস্তুতি কিট (সারভাইভাল কিট) তৈরি করুন:
- পানি: প্রতিজন সদস্যের জন্য কমপক্ষে ৩ দিনের খাবার পানি (প্রতিদিন ৪ লিটার হিসাবে)। সিল করা বোতলে সংরক্ষণ করুন।
- অ-নষ্টশীল খাবার: বিস্কুট, চিড়া, মুড়ি, শুকনো খাবার, ক্যানড ফুড (ওপেনার সহ), চিনি, লবণ। শিশু, বয়স্ক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সদস্যের জন্য বিশেষ খাবার।
- জরুরি ওষুধ ও ফার্স্ট এইড: নিয়মিত সেব্য ওষুধ (উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্টের), পেইনকিলার, অ্যান্টিবায়োটিক মলম, ব্যান্ডেজ, গজ, স্যালাইন, ওরস্যালাইন, জীবাণুনাশক, মশারি।
- জরুরি নথিপত্র: জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন, ভোটার আইডি, জমির দলিল (ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে), কিছু নগদ টাকা (ছোট নোট), ব্যাংক কার্ড/বইয়ের ফটোকপি।
- জরুরি সরঞ্জাম: টর্চলাইট (অতিরিক্ত ব্যাটারি সহ), ব্যাটারিচালিত রেডিও, মোবাইল ফোন (পাওয়ার ব্যাংক/চার্জার সহ), সুইচ ব্লেড, দড়ি, প্লাস্টিকের শিট, হুইসেল।
- ব্যক্তিগত জিনিস: চশমা, হিয়ারিং এইড (ব্যাটারি সহ), স্যানিটারি ন্যাপকিন, সাবান, টুথপেস্ট/ব্রাশ, তোয়ালে।
- শিশু ও শিশুর যত্ন: শিশুর খাদ্য, দুধের বোতল, ডায়াপার, ওষুধ, খেলনা।
- মূল্যবান জিনিস: প্রয়োজনীয় গয়না, ছোট আকারের মূল্যবান সামগ্রী (ওয়াটারপ্রুফ পাত্রে)।
- গুরুত্বপূর্ণ: এই কিট একটি সহজে বহনযোগ্য ব্যাগে (বাকপ্যাক বা ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগ) রাখুন এবং সবার জানা এমন নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
আশ্রয়কেন্দ্রের পরিকল্পনা:
- নিকটতম সাইক্লোন শেল্টার চিহ্নিত করুন: ইউনিয়ন পরিষদ, স্কুল, কলেজ বা সরকারি ভবনগুলোই সাধারণত শেল্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। DDM এর ওয়েবসাইট বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আপনার এলাকার শেল্টারের তালিকা ও অবস্থান জেনে নিন। ম্যাপে পথচিহ্নিত করুন।
- বিকল্প পথের পরিকল্পনা: প্রধান রাস্তা বন্ধ হলে কোন বিকল্প পথে শেল্টারে যাবেন?
- পরিবহন: কিভাবে যাবেন? পায়ে হেঁটে, রিকশা, নৌকা? প্রয়োজনীয় জ্বালানির ব্যবস্থা আছে কি?
- পোষা প্রাণী: বেশিরভাগ সরকারি শেল্টারে পোষা প্রাণী নেওয়া যায় না। তাদের জন্য নিরাপদ বিকল্প (আত্মীয়ের বাড়ি, উঁচু স্থান) ভাবুন।
বাড়ি ও আশেপাশের প্রস্তুতি:
- ঝুঁকিপূর্ণ গাছ/ডাল কাটুন: বাড়ির চারপাশে ভেঙে পড়তে পারে এমন গাছের ডালপালা আগেই কেটে ফেলুন।
- জানালা-দরজা সুরক্ষিত করুন: কাঠের শিক বা শক্ত বোর্ড দিয়ে জানালা-দরজা শক্ত করে বেঁধে দিন। স্টর্ম শাটার থাকলে লাগিয়ে নিন।
- ছাদ ও চাল মজবুত করুন: দুর্বল টিন, বাঁশ, খড় ইত্যাদি শক্ত করে বেঁধে নিন বা সম্ভব হলে সরিয়ে ফেলুন।
- জরুরি সরঞ্জাম নিরাপদে রাখুন: বৈদ্যুতিক মিটার, গ্যাসের চুলা, জেনারেটর (যদি থাকে) উঁচু ও নিরাপদ স্থানে রাখুন। গ্যাসের লাইন বন্ধ করার উপায় শিখে রাখুন।
- বাগান/আঙিনা পরিষ্কার: উড়ে যেতে পারে এমন হালকা জিনিস (ফুলের টব, খেলনা, প্লাস্টিকের চেয়ার) ঘরের ভিতরে বা শক্ত করে বেঁধে রাখুন।
- কৃষি ও পশুসম্পদ: ফসল সম্ভব হলে আগেই কেটে সংরক্ষণ করুন। গবাদিপশুকে উঁচু ও মজবুত বাঁধনে বেঁধে রাখুন, পর্যাপ্ত খাদ্য-পানি দিন।
- পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিকল্পনা আলোচনা করুন:
- জরুরি যোগাযোগ: যদি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, কোথায় কিভাবে মিলিত হবেন? একজন দূরের আত্মীয়কে (যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাইরে থাকে) কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ব্যক্তি হিসেবে ঠিক করুন।
- ভূমিকাভিত্তিক দায়িত্ব: কে জরুরি কিট বহন করবে? কে শিশু বা বয়স্কদের দেখবে? কে আশ্রয়কেন্দ্রের পথ চিনবে?
- শিশুদের শিক্ষা: তাদের শেখান কেন শেল্টারে যেতে হবে, জরুরি নম্বরগুলি কী, এবং বাবা-মায়ের কথা শোনার গুরুত্ব।
ঝড়ের সময়ে নিরাপদ থাকার কৌশল: আশ্রয়কেন্দ্রে বা বাড়িতে
যখন ঝড় আঘাত হানে, তখন প্রতিটি সিদ্ধান্ত জীবনমরণের প্রশ্ন।
যদি আপনি সাইক্লোন শেল্টারে থাকেন:
- শান্ত থাকুন এবং নির্দেশনা মেনে চলুন: শেল্টার ম্যানেজমেন্ট কমিটির নির্দেশনা কঠোরভাবে পালন করুন। ভিড় বা আতঙ্কিত না হয়ে শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।
- জরুরি কিট কাছাকাছি রাখুন: প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হাতের নাগালে রাখুন।
- জানালা/দরজা থেকে দূরে থাকুন: ভাঙা কাচ বা উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি এড়াতে কেন্দ্রীয় অংশে থাকুন।
- বিদ্যুৎ সতর্কতা: শেল্টারে সাধারণত জেনারেটর থাকে, কিন্তু অতিরিক্ত লোডে শর্ট সার্কিট হতে পারে। বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
- স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন: টয়লেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন, সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। ময়লা জমতে না দেওয়ার চেষ্টা করুন। ওরস্যালাইন পান করুন ডিহাইড্রেশন রোধে।
- অন্যদের সাহায্য করুন: প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী এবং শিশুদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
- রেডিও চালু রাখুন: ব্যাটারিচালিত রেডিওতে সর্বশেষ আবহাওয়া সংবাদ ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা শুনুন।
যদি বাড়িতে থাকতে বাধ্য হন (শেষ অবলম্বন হিসেবে):
- সবচেয়ে মজবুত কক্ষে আশ্রয় নিন: ভিতরের দিকের জানালাবিহীন ঘর, সিঁড়ির নিচের জায়গা, বা শক্ত কাঠামোর বাথরুম নিরাপদ হতে পারে।
- জানালা/দরজা থেকে অনেক দূরে থাকুন: সম্ভব হলে মাটিতে শুয়ে পড়ুন, মাথা হাত দিয়ে বা বালিশ দিয়ে ঢাকুন। শক্ত টেবিল বা খাটের নিচে আশ্রয় নিন।
- বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন: প্রধান সুইচ অফ করে দিন। গ্যাসের লাইন বন্ধ করুন।
- জরুরি কিট হাতের কাছে রাখুন: টর্চলাইট, পানি, ওষুধ কাছেই রাখুন।
- জলোচ্ছ্বাসের এলাকায়: সম্ভব হলে বাড়ির সবচেয়ে উঁচু তলায় চলে যান। গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির কাছে যাবেন না।
- কক্ষের কেন্দ্রে অবস্থান: বাইরের দিকের দেয়াল ভেঙে পড়ার ঝুঁকি বেশি।
ঝড় পরবর্তী করণীয়: সাবধানতা ও পুনরুদ্ধার
ঝড় থেমে গেলেই বিপদ শেষ হয় না। ভাঙাচোরা বাড়ি, বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে থাকা, দূষিত পানি, রোগবালাই – নতুন ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হয়।
- অধিকর্তৃপক্ষের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত শেল্টার ছাড়বেন না: বাইরের পরিস্থিতি নিরাপদ কিনা তা শুধুমাত্র স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ইউনিয়ন পরিষদ, পুলিশ, ডিএমএম) ঘোষণা করতে পারে। রেডিওতে শুনুন।
- বাড়ি ফেরার পথে চরম সতর্কতা:
- ভাঙা বৈদ্যুতিক তার, বিশেষ করে পানিতে ডোবা তার থেকে দূরে থাকুন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
- ক্ষতিগ্রস্ত ভবন, সেতু, রাস্তা এড়িয়ে চলুন। ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকে।
- চলাচলের পথে গভীর পানি থাকলে সতর্ক থাকুন। অদৃশ্য গর্ত বা স্রোত থাকতে পারে।
- বাড়ি পরীক্ষা:
- প্রবেশের আগে বাড়ির বাইরের কাঠামো ভালোভাবে দেখুন। দেয়ালে বড় ফাটল, ছাদ ঝুলে পড়া, গ্যাস লিকের গন্ধ আছে কিনা লক্ষ্য করুন।
- সম্ভব হলে দিনের আলোতে বাড়ি পরিদর্শন করুন।
- ভেতরে ঢুকে প্রথমেই প্রধান বৈদ্যুতিক সুইচ চালু করবেন না। লিক আছে কিনা গ্যাসের চুলা/লাইন চেক করুন।
- পানি ও খাদ্য সতর্কতা:
- কখনই বন্যার পানি বা সন্দেহজনক উৎসের পানি পান করবেন না। ডায়রিয়া, কলেরার মতো রোগ ছড়াতে পারে।
- শুধুমাত্র বোতলজাত পানি বা বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পানি ফুটিয়ে বা ওয়াটার পিউরিফায়ার ট্যাবলেট (পটাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর) ব্যবহার করুন।
- ভেজা বা দূষিত খাবার খাবেন না। ক্যানড ফুড ভালোভাবে ধুয়ে খুলুন।
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
- বাড়ি ও আশেপাশ পরিষ্কার করুন, ময়লা-আবর্জনা পুড়িয়ে বা গর্তে পুঁতে ফেলুন।
- স্ট্যাগনেন্ট পানি (জমে থাকা পানি) ফেলে দিন বা মশার ওষুধ ছিটান, ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়ার ঝুঁকি এড়াতে।
- টয়লেট ও রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত করুন।
- জরুরি সাহায্য ও তথ্য:
- আহত হলে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মেডিকেল ক্যাম্প বা হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
- খাদ্য, পানি, চিকিৎসা সাহায্যের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করুন।
- জরুরি নম্বর মনে রাখুন:
- জাতীয় জরুরি সেবা: ৯৯৯
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM) হটলাইন: স্থানীয় কার্যালয় বা ওয়েবসাইটে চেক করুন।
- স্থানীয় থানা, ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল নম্বর হাতের কাছে রাখুন।
- মানসিক স্বাস্থ্য: ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে ভয়, দুঃখ, হতাশা, অনিদ্রা খুব স্বাভাবিক। পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে কথা বলুন। বিশেষ করে শিশুদের প্রতি মনোযোগ দিন। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যকর্মী বা কাউন্সেলরের সাহায্য নিন।
বিশেষ দুর্বল গোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত সতর্কতা
- শিশুরা: তাদের হাত ধরে রাখুন, শেল্টারে বা বাড়িতে। ভয় পেলে বোঝানোর চেষ্টা করুন। জরুরি কিটে তাদের খাবার, ওষুধ, পানি, ডায়াপার, খেলনা রাখুন।
- বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তি: তাদের সরানোর জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সাহায্য নিন। হুইলচেয়ার, ওয়াকার, প্রয়োজনীয় ওষুধ অগ্রাধিকার দিন। শেল্টারে তাদের জন্য সহজলভ্য স্থান নিশ্চিত করুন।
- গর্ভবতী ও স্তন্যদাত্রী মায়েরা: পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি, পুষ্টিকর খাবার ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন। প্রয়োজনীয় প্রসবপূর্ব/প্রসবোত্তর ওষুধ হাতে রাখুন। নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পথ আগে থেকেই জেনে রাখুন।
- পোষা প্রাণী: তাদের নিরাপত্তারও দায়িত্ব আপনার। শেল্টারে না নিতে পারলে পর্যাপ্ত খাবার-পানি দিয়ে উঁচু ও নিরাপদ স্থানে বেঁধে রাখুন (যদি বাড়ি ছাড়তে হয়)।
জেনে রাখুন (FAQs)
১. ঘূর্ণিঝড় সতর্কতা সংকেত (১-১০) মানে কী? আমি কী করব?
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (BMD) ১ থেকে ১০ নম্বর সংকেত দিয়ে ঝড়ের অবস্থান, গতিবেগ ও সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বোঝায়। ৪ নম্বর মানে বন্দরে ঝড়ো হাওয়া, মাছ ধরার নৌকা সমুদ্রে না যাওয়া। ৬, ৭, ৮ নম্বর মানে বিপদজনক থেকে অতি বিপদজনক অবস্থা, উপকূলে আঘাত হানতে পারে, প্রস্তুতি নিন, শেল্টারে যাওয়ার প্রস্তুতি। ৯ ও ১০ নম্বর মানে প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় সরাসরি আঘাত হানতে পারে, অবিলম্বে শক্তিশালী কংক্রিট শেল্টারে চলে যান। সবসময় BMD এর সর্বশেষ বুলেটিন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
২. আশ্রয়কেন্দ্রে কী নিয়ে যেতে পারি? কী নিয়ে যাওয়া নিষেধ?
নিতে পারবেন: জরুরি প্রস্তুতি কিট (খাবার পানি, শুকনো খাবার, ওষুধ, টর্চ, রেডিও, নথি, শিশুর প্রয়োজনীয় জিনিস), হালকা কম্বল বা চাদর, ব্যক্তিগত ওষুধ, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন। নিষেধ: বড় স্যুটকেস/বাক্স, মূল্যবান সামগ্রী (চুরির ভয়), ধারালো অস্ত্র, মাদকদ্রব্য, কেরোসিন/গ্যাস সিলিন্ডার, অপ্রয়োজনীয় ভারী জিনিস। শেল্টারে স্থান সংকুলান ও নিরাপত্তার জন্য শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় জিনিস নিন।
৩. আমার বাড়ি খুব মজবুত। শেল্টারে না গেলে কি হবে?
অনেক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ও (যেমন সিডর, আম্ফান) পাকা বাড়ি ধ্বংস করেছে। শেল্টারের মূল সুবিধা হলো:
- গাঠনিক শক্তি: বিশেষভাবে নির্মিত জলোচ্ছ্বাস ও ঝড় প্রতিরোধী।
- উচ্চতা: বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা।
- সামগ্রিক নিরাপত্তা: উড়ন্ত ধ্বংসাবশেষ, ভাঙা কাচ, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঝুঁকি কম।
- জরুরি সহায়তা: খাদ্য, পানি, প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগ।
সরকারি নির্দেশনা (DDM) পরিষ্কার: ৮, ৯, ১০ নম্বর সংকেত জারি হলে অবশ্যই শক্ত কংক্রিট শেল্টারে যেতে হবে। নিজের ও পরিবারের জীবনের ঝুঁকি নেবেন না।
৪. ঘূর্ণিঝড়ের পর বিশুদ্ধ পানি পাব কোথায়? খাবার কীভাবে নিরাপদ রাখব?
ঝড়ের পর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, দূষিত হয়। পান করবেন না: নলকূপের পানি (যদি না নিশ্চিত হন যে পানির স্তর দূষিত হয়নি), পুকুর/নদীর পানি, বন্যার পানি। নিরাপদ পানি: বোতলজাত পানি, সরকারি/এনজিও সরবরাহকৃত বিশুদ্ধ পানি, বা পানি ফুটিয়ে (কমপক্ষে ১ মিনিট গরম ফুটন্ত অবস্থায়) বা পটাশ (ওয়াটার পিউরিফিকেশন ট্যাবলেট) ব্যবহার করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ইউনিসেফ প্রায়ই এই ট্যাবলেট বিতরণ করে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করুন, ভেজা বা সন্দেহজনক খাবার ফেলে দিন। ক্যানড ফুড খোলার আগে ধুয়ে মুছে নিন।
৫. আমার বাড়ির ক্ষতি হয়েছে, সাহায্য পাব কীভাবে?
প্রথমে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যোগাযোগ করুন। ক্ষয়ক্ষতি সমীক্ষা (Damage and Needs Assessment – DNA) করতে তারা কর্মী পাঠায়। সরকারি ত্রাণ (খাদ্য, নগদ অর্থ, নির্মাণ সামগ্রী) পাওয়ার প্রক্রিয়া এখান থেকেই শুরু হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর (DDM) এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাও (রেড ক্রিসেন্ট, ইউনিসেফ, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম) ত্রাণ কার্যক্রম চালায়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় নাম নিশ্চিত করুন এবং প্রাপ্ত তথ্য (নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি) সুরক্ষিত রাখুন।
৬. মোবাইল নেটওয়ার্ক চলে গেছে, জরুরি যোগাযোগ কীভাবে করব?
ঘূর্ণিঝড় পরবর্তীতে টাওয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হলে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়। বিকল্প উপায়:
- ব্যাটারিচালিত রেডিও: সরকারি বুলেটিন ও নির্দেশনা শোনার প্রধান মাধ্যম।
- স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সাথে সরাসরি যোগাযোগ: ইউনিয়ন পরিষদ অফিস বা ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খবর নিন।
- স্যাটেলাইট ফোন (যদি থাকে): বড় সংস্থা বা কর্তৃপক্ষের কাছে থাকতে পারে।
- শারীরিক বার্তাবাহক: প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের মাধ্যমে খবর পাঠানো (যদি দূরত্ব কম ও নিরাপদ হয়)।
- জরুরি নম্বর চেষ্টা করুন (৯৯৯): যদি কোন টাওয়ার কাজ করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।