বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ।
আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের তথ্য মতে ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৩ মে, রাত ৯টায় সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোখার বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৪০ কিলোমিটার, যার দমকা হাওয়ার গতিবেগ ঘণ্টায় ২৯৬ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়টির চলার গতিবেগ গত দুই দিনের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। সন্ধ্যার ৬টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টির ঘণ্টায় ২২ কিলোমিটার বেগে সামনে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রভাগ শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার উপকূল থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি বেশির ভাগ অংশই বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাবে। আমি গত ২৪ ঘণ্টায় বারবার বলছি পুরো ঘূর্ণিঝড় সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজরের ওপর দিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ওপর আঘাত হানা চতুর্থ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে মোখা। ঘূর্ণিঝড়টি ১৯০ থেকে ২১০ কিলোমিটার গতিবেগে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, আমি জানি না সেন্টমার্টিনের কী হবে। সেখানকার মানুষের কথা চিন্তা করে এখন আমি চাচ্ছি আমার পূর্বাভাস যেন ভুল হয়। আমি বলেছিলাম ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে। আমি নিজেও জানি না কত মানুষ ভেসে যাবে, কত মানুষ প্রাণ হারাবে।
এদিকে শনিবার রাতে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘূর্ণিঝড় মোখা সংক্রান্ত ১৬ নম্বর বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৬০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৫২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৫৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে ১৪ মে, রোববার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৮০ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর এবং মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ৮ থেকে ১২ ফুটের অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড়রের প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির ফলে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছিলেন, কক্সবাজার উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া এই ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য বৃষ্টি, বন্যা থেকে শুরু করে পাহাড় ধসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।