জুমবাংলা ডেস্ক: মেঘনা তীরের জেলে হাবিব হাওলাদার। ইলিশ শিকার তার পেশা। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ডাঙ্গায় ছিলেন। ২৮ অক্টোবর মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়। দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদক রফিকুল ইসলাম-এর প্রতিবেদনে বিস্তারিত উঠে এসেছে।
সে রাতেই ট্রলার নিয়ে ছোটেন মেঘনায়, ইলিশের জাল ফেলেন। কিন্তু ধরা পড়ে ৫৪টি পাঙ্গাশ। যার ওজন প্রায় ৬০ মণ। পরদিন কাকডাকা ভোরে তিনি যান বরিশালের পোর্টরোড মৎস্য আড়তে। নদীর মাছ ভেবে কেজি প্রতি সাড়ে ৫০০ টাকা দরে ক্রেতারা লুফে নেন এসব পাঙ্গাশ। এছাড়া, তিনি গত দুদিনে নদীতে প্রায় ৩০ মণ পাঙ্গাশ পান। পাঙ্গাশের বিপরীতে ইলিশ পান ৩৫ মণের মতো।
হাবিব ঘরামী মেঘনা তীরের পাতারহাটের আরেক জেলে। তিনিও ইলিশের জালে তিন দিনে ৪২টি পাঙ্গাশ পান। তার জালে তিন কেজি থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের পাঙ্গাশ ওঠে। কিন্তু ইলিশ ধরা পড়ে খুবই কম। তিনি মেঘনা নদী থেকে মাছ শিকার করেছেন, তাই মাছগুলো নদীর বলে চালিয়ে দেন। শীতের শুরুর দিকে সাধারণত নদীতে পাঙ্গাশ মেলে। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার কয়েকগুণ বেশি পাঙ্গাশ পাওয়া যাচ্ছে।
আরো শত শত জেলের ইলিশের জালেও মিলছে পাঙ্গাশ। হঠাৎ ঝাঁক ধরে পাঙ্গাশ আটকে পড়ার কারণ অনুসন্ধান করতে এসব পাঙ্গাশের ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়। তারা মাছের ছবি দেখে নিশ্চিত করেন, এগুলো ঘেরের চাষের পাঙ্গাশ। সম্প্রতি উপকূলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে অতি জোয়ারের ফলে ঘের তালিয়ে গিয়ে পাঙ্গাশ নদীতে ভেসে আসে। এরা নদীর উপরিভাগে অবস্থান করায় ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের জালে ধরা পড়ছে।
বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে ১৮৪৩টি মৎস্য খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খামার তলিয়ে যাওয়ায় ৫৮৫ মেট্রিক টন বড় মাছ ভেসে যায়। প্রায় ২৫ লাখ পোনা ছড়িয়ে যায় আশপাশের খাল ও নদীতে। এতে প্রায় আট কোটি ১৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ছিল পাঙ্গাশ। তারপর রুই, কাতলা, মৃগেল ও তেলাপিয়া। সামান্য পরিমাণে অন্য মাছও ছিল।
বরিশাল পোর্টরোড মৎস্য আড়ত মাছের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার। সেখানকার ‘আব্দুল্লাহ মৎস্য আড়ত’-এর মালিক জহির শিকদার। তিনি বলেন, মা ইলিশ রক্ষা অভিযান শেষে এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০ মণ পাঙ্গাশ মোকামে এসেছে। তার মধ্যে পাঁচ থেকে আট কেজি ওজনের পাঙ্গাশের সংখ্যাই বেশি। তাজা পাঙ্গাশ কেজি প্রতি সাড়ে ৫০০ টাকা দরে এবং বরফ দেয়া পাঙ্গাশ ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। নদীর পাঙ্গাশ ভেবে ঘেরের পাঙ্গাশ মানুষ হুমড়ি খেয়ে কিনেছে। এই পাঙ্গাশগুলো ঢাকায় বিক্রি করা যেত না বলে বরিশালে কম দামে বিক্রি হয়। নদীর পাঙ্গাশের দর কেজি প্রতি অন্তত সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক মো. লোকমান আলী বলেন, মেঘনায় ইলিশের জালে প্রচুর পাঙ্গাশ ধরা পড়ছে। এগুলো ঘেরের চাষের পাঙ্গাশ। বরিশাল পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তে বিক্রির জন্য গত তিনদিনে যে পাঙ্গাশগুলো আনা হয়, তার ৯০ শতাংশই চাষের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।