পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মনে নতুন করে উদ্বেগ ছড়িয়ে দিয়েছে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র খবরে। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম এবং কিছু সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে একটি অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে চলেছে, যার নাম হতে পারে ‘শক্তি’। এই প্রতিবেদনের পরই জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে, ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (IMD) স্পষ্ট জানিয়েছে, এই ধরণের ঘূর্ণিঝড়ের কোনো পূর্বাভাস তারা দেয়নি।
Table of Contents
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে IMD-র আপডেট
‘ঘূর্ণিঝড় শক্তি’ সম্পর্কে বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া খবর সম্পর্কে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে IMD। আবহাওয়া দফতরের পক্ষ থেকে একটি অফিসিয়াল বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মে মাসের ১৩ তারিখে তারা শুধুমাত্র আন্দামান সাগরের ওপর একটি ঘূর্ণাবর্তের উপস্থিতি উল্লেখ করেছিল, যা ঘূর্ণিঝড় নয়। ঘূর্ণাবর্ত এবং ঘূর্ণিঝড় এই দুইয়ের মধ্যে বড় পার্থক্য রয়েছে। ঘূর্ণাবর্ত হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের উচ্চতর স্তরে একটি ঘূর্ণায়মান নিম্নচাপ ক্ষেত্র, যা পরবর্তীকালে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বা নাও পারে।
আবহাওয়া দফতর আরও জানায়, কিছু সংবাদমাধ্যম অনুমান নির্ভর খবর প্রচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করছে এবং এতে সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতাও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছে, যদি এই ধরণের ভুল প্রতিবেদন বারবার প্রকাশিত হয়, তাহলে তারা সংবাদমাধ্যমগুলিকে আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য প্রদান বন্ধ করতে বাধ্য হবে।
আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র বাস্তবতা
বর্তমানে, পূর্ব উত্তরপ্রদেশ এবং সংলগ্ন বিহার অঞ্চলের ওপর প্রায় ০.৯ কিমি উচ্চতায় একটি ঘূর্ণাবর্ত সক্রিয় রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে প্রবল গরম ও আর্দ্রতা জনিত অস্বস্তির পরিস্থিতি বজায় থাকবে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত। বিচ্ছিন্নভাবে একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে, উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় বজ্রঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা করা হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গ উভয় এলাকাতেই কালবৈশাখী, বজ্রপাত এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান, ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার নাম হতে পারে ‘শক্তি’। এটি ভারতের ওড়িশা উপকূল ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী এলাকায় আঘাত হানতে পারে, এমন সম্ভাবনাও ব্যক্ত করেন তিনি। তবে এই তথ্যটি সম্পূর্ণভাবে অনুমাননির্ভর এবং এই পর্যায়ে কোনো সরকারি সংস্থা তা নিশ্চিত করেনি।
মূল তথ্যগুলো এক নজরে:
- IMD জানিয়েছে, বর্তমানে ‘শক্তি’ নামে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস নেই।
- ১৩ মে’র বুলেটিনে শুধুমাত্র একটি ঘূর্ণাবর্তের কথা বলা হয়েছে।
- ঘূর্ণাবর্ত এবং ঘূর্ণিঝড় এক নয়; প্রথমটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বা নাও পারে।
- মৌসুমী বায়ুর অগ্রগতির সময়ে এই ধরনের আবহাওয়া পরিবর্তন স্বাভাবিক।
একজন পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে, নিশ্চিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। অনুমান নির্ভর বা বিভ্রান্তিকর খবর থেকে সতর্ক থাকা উচিত।
উল্লেখ্য, আবহাওয়া সংক্রান্ত সরকারি তথ্যের জন্য IMD-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস।
আরও পড়ুন: কলকাতায় গরমের সতর্কতা
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের পূর্বাভাস
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ নিয়ে আসা বিভ্রান্তিকর খবরে উদ্বেগ না ছড়িয়ে বরং প্রমাণভিত্তিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে সতর্কতা গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
FAQs
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ সত্যিই আসছে কি?
IMD-র মতে, এই মুহূর্তে ‘শক্তি’ নামে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস নেই। কিছু সংস্থা অনুমান করেছে এর সম্ভাবনা, তবে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
ঘূর্ণাবর্ত মানে কি ঘূর্ণিঝড়?
না, ঘূর্ণাবর্ত মানেই ঘূর্ণিঝড় নয়। এটি একটি নিম্নচাপ ক্ষেত্র, যা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বা নাও পারে।
কবে নাগাদ ঘূর্ণিঝড় শক্তি তৈরি হতে পারে?
আনুমানিক ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে এটি তৈরি হতে পারে বলে কিছু আবহাওয়াবিদ অনুমান করছেন। তবে সরকারিভাবে এখনো নিশ্চিত নয়।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে?
সরকারি নির্দেশিকা মেনে চলা, জরুরি জিনিসপত্র প্রস্তুত রাখা, এবং আবহাওয়া আপডেট নিয়মিত অনুসরণ করাই সেরা উপায়।
আবহাওয়া আপডেট কোথা থেকে পাব?
IMD-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ভরসাযোগ্য সংবাদমাধ্যম থেকে আপডেট পাওয়া যায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।