দেশজুড়ে আবারও শুরু হয়েছে উদ্বেগ—চলতি মে মাসের শেষ দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নতুন ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ আঘাত হানতে পারে। এই ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে একাধিক আবহাওয়াবিদের পর্যবেক্ষণে। সাধারণ মানুষের মাঝে শুরু হয়েছে আতঙ্ক ও প্রস্তুতির পালা।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’: কোথা থেকে শুরু, কোথায় আঘাত?
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ শব্দটি এসেছে শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবনায়। কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সম্প্রতি জানিয়েছেন, ২৩ থেকে ২৮ মে’র মধ্যে এই ঘূর্ণিঝড় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট হতে পারে। এটি ২৪ মে’র পর পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগ হয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
Table of Contents

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি) জানিয়েছে, ১৬ থেকে ১৮ মে এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে যা পরবর্তীতে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। যদি এটি বাংলাদেশের দিকে অগ্রসর হয় তবে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে তীব্র বাতাস, ভারি বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
সতর্কতা ও প্রস্তুতির সময় এখন
পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, মে মাসে বঙ্গোপসাগরে গড়ে এক থেকে দুইটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অফিসের ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত মাসিক বুলেটিনে জানানো হয়েছিল, চলতি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা থাকলেও ১-৩টি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে যার মধ্যে একটি বা দুটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে উপকূলীয় অঞ্চলের স্থানীয় প্রশাসনকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। এর মধ্যে আছে:
- ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা
- সতর্ক সংকেত প্রচারের ব্যবস্থা
- পানিবাহী নৌকা, জরুরি ওষুধ ও খাদ্য মজুদের পরিকল্পনা
বাংলাদেশের উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহ
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় জেলা সমূহ যেমন খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলাগুলো সরাসরি প্রভাবিত হতে পারে। বিশেষ করে জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা থাকা এলাকাগুলোতে আরও বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে।
সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমানোর কৌশল
ঘূর্ণিঝড় থেকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমাতে যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে তা হলো:
- কমিউনিটি রেডিও, মোবাইল ম্যাসেজিং এর মাধ্যমে পূর্বাভাস প্রচার
- পরিবার ভিত্তিক প্রস্তুতির তালিকা প্রস্তুত রাখা
- গবাদিপশু স্থানান্তরের ব্যবস্থা রাখা
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ও আবহাওয়ার পরিবর্তন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বেড়েছে। বিগত কয়েক দশকে দেখা গেছে, মে মাসে ঘন ঘন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হচ্ছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলোর পরিমাণ ও শক্তি দুটোই বেড়েছে। এ কারণে প্রতিটি দুর্যোগকে গুরুত্বসহকারে নেওয়া প্রয়োজন।
বিশ্বজুড়ে আবহাওয়ার বৈচিত্র্য এখন নানামুখী প্রভাব ফেলছে—বিশেষ করে উপকূলীয় দেশগুলোর উপর। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর যৌথ উদ্যোগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আরো জোরদার করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা
ঘূর্ণিঝড় ‘সিদ্র’, ‘আইলা’ কিংবা ‘বুলবুল’-এর অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, সময়মতো সতর্কতা ও পূর্বপ্রস্তুতি থাকলে প্রাণহানি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ থেকে সুরক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। সবাইকে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
FAQs
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কখন সৃষ্টি হতে পারে?
২৩ থেকে ২৮ মে এর মধ্যে বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা।
এটি কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে?
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী অঞ্চল দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে।
এটি কতটা ভয়াবহ হতে পারে?
আবহাওয়া অফিস এখনো নির্দিষ্ট মাত্রার তথ্য দেয়নি তবে পূর্ববর্তী ঘূর্ণিঝড়গুলো বিশ্লেষণ করলে মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রস্তুতির জন্য কী করা দরকার?
ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা, খাদ্য ও ওষুধ মজুদ, তথ্য প্রচার ব্যবস্থা জোরদার করা এবং পরিবার ভিত্তিক প্রস্তুতির তালিকা প্রস্তুত রাখা দরকার।
উপকূলবাসীদের করণীয় কী?
স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলা, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের আশেপাশে অবস্থান করা এবং নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া।
ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
এটি মে মাসের শেষ দিকে আসতে পারে, যে সময় বাংলাদেশের উপকূল ঝুঁকিতে থাকে। এটি সরাসরি জনজীবন ও অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।