চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণ কাট্টলীতে অবস্থিত বাসন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রূপন কুমার পালের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক নিয়োগের পর এমপিওভুক্তি, ছাড়পত্র প্রদান, এমনকি সরকারি প্রকল্পে কক্ষ বরাদ্দের ক্ষেত্রেও অর্থ দাবি করার অভিযোগ করেছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সর্বশেষ মঙ্গলবার তার অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা।
এমপিওর নামে ৬০ হাজার টাকা দাবি
২০২৪ সালে এনটিআরসিএর মাধ্যমে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পাওয়া তিনজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক রূপন পাল তাদের এমপিওভুক্তির জন্য ৬০ হাজার টাকা করে ঘুষ দাবি করেন। শিক্ষকরা বিষয়টি অস্বীকার করলে তিনি বলেন, ‘টাকা না দিলে এমপিও পেতে ১ বছর লেগে যাবে, কম্পিউটার অপারেটরের চার্জও দিতে হবে।’ মানসিক চাপে পড়ে শিক্ষকরা শেষে ৩৫ হাজার টাকা দেন। অথচ, এসব টাকা বিদ্যালয়ের কোনো অফিসিয়াল রেকর্ডে নেই।
বিষয়টি তারা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। যার অনুলিপি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয়েছে।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জুমবাংলাকে বলেন, প্রধান শিক্ষক কর্মচারীসহ আমাদের ৬ জনের এমপিওভুক্তির জন্য ৬০ হাজার টাকা দাবি করেছেন। অন্যথায় এমপিও ১ বছর পিছিয়ে যাবে বলেও জানান তিনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ৩৫ হাজার টাকা করে দিয়েছি।
অতিরিক্ত টাকা ছাড়া মিলে না ছাড়পত্র
শুধু শিক্ষকরাই নন, অভিভাবকরাও অভিযোগ করছেন অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়ে। নবম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া নিশাত বন্যা, সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী প্রকৃতি দাশসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, শিক্ষার্থী ছাড়পত্র (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিতে গিয়ে প্রধান শিক্ষক তাদের কাছ থেকে ৩ হাজারের অধিক টাকা করে দাবি করেন। তারা জানান, টাকা না দিলে ছাড়পত্র আটকে রাখা হতো। তারা বিষয়টি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
সরকারি শুমারিতেও কক্ষ বরাদ্দের নামে ‘ঘুষ’ দাবি
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘অর্থনৈতিক শুমারি–২০২৪’ প্রকল্পে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারিত ছিল বাসন্তী বালিকা স্কুল। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সরকারি কাজে কক্ষ বরাদ্দ দিতে অস্বীকৃতি জানান বলে বিদ্যালয়ের সভাপতিকে লিখিতভাবে জানান অর্থনৈতিক শুমারীর পাহাড়তলী থানা সমন্বয়কারী সুজন দাশ।
অভিযোগে তিনি লিখেন, এক পর্যায়ে আইটি কর্মকর্তা এসে সরাসরি কক্ষ চাইলেও তিনি কক্ষ বরাদ্দ দিতে পারবেন না বলে জানান। পরে তিনি বাধ্য হয়ে নিজ বেতন থেকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে কক্ষ বরাদ্দ নেন।
একই চিত্র দেখা যায় ফাইনাল অপারেশনেও। এবারও তিনি সরাসরি টাকা ছাড়া অনুমতি দেননি। পরে বিষয়টি জানানো হয় তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি, অতিরিক্ত সহকারী বিভাগীয় কমিশনার জামশেদুল আলমকে। তার হস্তক্ষেপে মিলেছিল সেই কক্ষ।
জাল ভাউচার ও কেন্দ্র ফি আত্মসাতের অভিযোগ
শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, বিদ্যালয়ে ক্রয় কমিটি থাকলেও তিনি নিজে জিনিসপত্র কিনে এনে জাল ভাউচার বানিয়ে স্কুল ফান্ড থেকে কয়েকগুণ বেশি টাকা তুলে নিচ্ছেন।এছাড়া ২০২৪ ও ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ফি থেকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১০% টাকা বিদ্যালয়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা করা হয়নি। এই অর্থও আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক রূপন কুমার পাল বলেন, অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভুয়া ও ষড়যন্ত্রমূলক। অভিযোগগুলো যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে, তখন বিদ্যালযের সভাপতি ছিলেন অতিরিক্ত সহকারী বিভাগীয় কমিশনার। অভিযোগগুলো তখন দেওয়া হয়নি কেন? অভিযোগ সত্য হলে তো তখন আমার চাকরিই চলে যেত।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জসীম উদ্দীন বলেন, “আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। একটা তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে এ ধরনের কোন অভিযোগ আসেনি। আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা খতিয়ে দেখব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।