ইরানের পেট্রোলিয়াম ও এলপিজি রফতানিতে সহায়তার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ৫০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি ও জাহাজকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। এর মধ্যে একটি জাহাজ বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর অবস্থায় রয়েছে। মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের দাবি, এই জাহাজটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল পরিবহন করেছে।
মার্কিন অর্থ বিভাগীয় সংস্থা ওএফএসি গত বৃহস্পতিবার নতুন এই নিষেধাজ্ঞা জারি করে। সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইরানের নগদ অর্থ প্রবাহ কমানো এবং ওয়াশিংটনের ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীর অর্থায়ন বন্ধ করার বৃহত্তর উদ্যোগের অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা জাহাজ ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইরানের এলপিজির দুটি চালান ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে পৌঁছেছে। তবে এলপিজি ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ বাংলাদেশের সরবরাহে তেমন প্রভাব ফেলবে না। এলপিজি অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আমিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশ সরাসরি ইরান থেকে এলপিজি আমদানি করে না। অন্য দেশ থেকে এলপিজি কেনা হয়, সেখানে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য হচ্ছে কিনা, তা আমরা জানি না। তাই সরবরাহে প্রভাব সীমিত হবে।”
নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক স্লোগাল এনার্জি ডিএমসিসি এবং মারকান হোয়াইট ট্রেডিং ক্রুড অয়েল অ্যাবরোড কোম্পানি এলএলসি। এ সংস্থা দুটির বিরুদ্ধে ২০২৪ সাল থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানের এলপিজি চালান পাঠাতে সহায়তার অভিযোগ রয়েছে। ওএফএসি জানিয়েছে, একাধিক চালান বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ব্যবহারকারীদের কাছে পৌঁছেছে।
মার্কিন অর্থ বিভাগের তথ্য বলছে, ২০২৫ সালের শুরুর দিকে পানামা পতাকাবাহী (এরিলিন শিপিং ইনকের মালিকানাধীন) গ্যাস ডিওর জাহাজ অকটেন এনার্জি এফজেডসিও নামের প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশে ১৭ হাজার টনের বেশি ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে। ওই প্রতিষ্ঠানকে এখন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০২৪ সালের শেষ দিকে কোমোরোস পতাকাবাহী আদা (আইএমও ৯০০৮১০৮, আগে নাম ছিল ক্যাপ্টেন নিকোলাস) জাহাজ বাংলাদেশে কিছু ক্রেতার কাছে ইরানি এলপিজি সরবরাহ করে। সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক সি শিপ ম্যানেজমেন্ট এলএলসির মালিকানাধীন ওই জাহাজটিকে সর্বশেষ মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় ‘অবরুদ্ধ সম্পদ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
গত বছরের ১৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বিএলপিজি সোফিয়া নামের ছোট জাহাজে এলপিজি খালাসের সময় ক্যাপ্টেন নিকোলাসে আগুন ধরে যায়। প্রায় ৩৪ হাজার টন এলপিজি বহনকারী জাহাজটি পরে আইনি জটিলতায় কয়েক মাস আটকে ছিল। আলোচনার পর চলতি বছরের ৫ সেপ্টেম্বর জাহাজটিকে পুনরায় গ্যাস স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়।
ভেসেল-ট্র্যাকিং তথ্য অনুযায়ী, এটি এখনও চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা অবস্থায় রয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার তালিকায় কোনো বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান বা সরকারি সংস্থার নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এসব চালানের কথা উল্লেখের মাধ্যমে বাংলাদেশকেও এখন ওয়াশিংটনে সম্প্রসারিত নজরদারি ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থার আওতায় দেখা হচ্ছে।
মার্কিন আইনে বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ লেনদেনে জড়িত বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো ‘সেকেন্ডারি স্যাংশনের’ ঝুঁকিতে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশাধিকার হারানোর মতো কঠোর পদক্ষেপও।
প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?
দেশে বার্ষিক এলপিজির চাহিদা ১৩ লাখ টনের বেশি। এর প্রায় পুরোটা বেসরকারি কোম্পানি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করে। সরকারিভাবে ২০ হাজার টন এলপি গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এলপিজি আমদানি ও বিপণনের সঙ্গে ছোট-বড় প্রায় ৩০টি কোম্পানি জড়িত। তারা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করে থাকে।
তবে গত বছর কয়েকটি দেশী ও বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গোপনে ইরান থেকে এলপিজি আমদানির অভিযোগ উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ইরান থেকে এলপিজি আমদানি করে প্রথমে ইরাকে নিয়ে যায়। ইরাকি বন্দর থেকে পণ্য লোড করে। তথ্য গোপন করে ভুয়া নথি দেখিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। সেসব খবরে বলা হয়, তিনটি এলপিজি কোম্পানি পৃথক বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে কয়েকটি ভুয়া ট্রেডারের মাধ্যমে ইরান থেকে এলপিজি আমদানি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতেই মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞা আসলো।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, নিষেধাজ্ঞার ফলে বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহে সম্ভাব্য বিঘ্ন, ব্যাংকিং ও পেমেন্ট জটিলতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনৈতিক চাপে পড়ার সম্ভাবনা, বাণিজ্যিক সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।