
এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম আচমকাই ৪০-৫০ টাকা প্রতি কেজি বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা দিশেহারা। দাম বৃদ্ধি প্রায় ৫০% এরও বেশি, যা সাধারণ ক্রেতাদের জন্য চরম চাপ সৃষ্টি করছে।
মূল কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে, আমদানি বন্ধ এবং দেশে বর্তমানে মৌসুম না হওয়া। তবে চট্টগ্রাম কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন (ক্যাব) এই দামের তাড়াহুড়া সিন্ডিকেটের কারসাজি হিসেবে দেখছে।
ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, “আমদানির অনুমতি দীর্ঘদিন ধরে নেই। এতদিন দাম কম ছিল, হঠাৎ দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গেল—এটা স্পষ্ট, এখানে সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, এই সুযোগে চক্রটি পকেট ভারী করছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশে যখন সংকট তৈরি হবে, তখনই আমদানি অনুমতি দিতে হবে। বারোমাসি পেঁয়াজ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে হবে। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের ব্যবস্থা করতে হবে। বাজারে তদারকি জোরদার হলে অপরাধীদের ধরা পড়ত এবং কৃষকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।”
চট্টগ্রামের সাধারণ ক্রেতারা এ মুহূর্তে দৈনন্দিন খাবারের জন্য পেঁয়াজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে কষ্টে পড়েছেন, এবং বাজারে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় ভবিষ্যতে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন।
তবে কৃষি অধিদফতর বলছে, উৎপাদন ভালো হওয়ায় দেশে এতদিন আমদানি পেঁয়াজের চাহিদা ছিল না। প্রায় ৯০% পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। ফলে বিদেশ থেকে পেঁয়াজও এসেছে খুব কম। এ সুবাধে হঠাৎ পেয়াঁজের দাম বেড়ে গেছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
সূত্রমতে, দেশের অন্যতম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে খুচরা বাজার- সবখানেই এখন ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। কিন্তু চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই মানভেদে খুচরা বাজারে ১১০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাইকারি বাজারে দাম ১০০ টাকার আশপাশে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। সবমিলিয়ে খুচরা বাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। এ কারণেই বেড়েছে দাম। নভেম্বরজুড়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। কেননা আগামী ডিসেম্বরে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হবে।
এখনো দেশি পেঁয়াজ দিয়ে বাজার চলছে বলে জানিয়েছেন খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস। তিনি বলেন, বাজারে এখন আমদানি পেঁয়াজ নেই। দেশীয় পেঁয়াজই বিক্রি হচ্ছে। আমদানির অনুমতি মিললে হয়তো দাম কিছুটা কমবে।
দাম বাড়ায় ক্রেতারা সাময়িক কষ্টে পড়লেও আমদানি না হলে দেশের কৃষকেরা অবশ্য লাভবান হবেন মনে করছেন আড়তদাররা। তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে। এবার কৃষকেরা ভালো দাম পেয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, কৃষকেরাও লাভবান হবেন।
বহু বছর ধরে দেশের বাজার ছিল আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। আমদানির বেশিরভাগই আসতো পাশের দেশ ভারত থেকে। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছর থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ায় সরকার। সেটির সুফল মিলেছে। চট্টগ্রামেও বেশ ভালো পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে এখন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য বলছে, গত অর্থবছরে জেলায় পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে ৯১ হেক্টর জমিতে। আর উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি-১০২ হেক্টর। লক্ষ্য অনুযায়ী আবাদ হলে ৭৯২ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এ বছর চট্টগ্রামে উৎপাদন হওয়া পেঁয়াজ দিয়েই এ অঞ্চলের বাজারের চাহিদা মিটবে।
বাজারে সাধারণ ডিসেম্বর মাসে আগাম পেঁয়াজ বা মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসে। এরপর জানুয়ারিতে রাজবাড়ি ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ বাজারে এসে যায়। সেটি সরবরাহের মধ্যেই মেহেরপুর, জামালপুরসহ অন্যান্য জেলার পেঁয়াজও বাজারে আসে। গত বছর থেকে এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার পেঁয়াজও।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



