জুমবাংলা ডেস্ক: চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে নতুন করে ৮২ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হলে জেলায় মোট আক্রান্ত ৫৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সংক্রমণ হার ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রিপোর্টে এতথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, গতকাল বৃহস্পতিবার সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে নগরীর সাতটি ল্যাবে চট্টগ্রামের ৫৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে নতুন ৮২ জন বাহকের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৬০ জন এবং দশ উপজেলার ২২ জন। ফলে জেলায় মোট আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৫৩ হাজার ৫৩ জনে। সংক্রমিতদের মধ্যে শহরের বাসিন্দা ৪২ হাজার ৩১৭ জন ও গ্রামের ১০ হাজার ৭৩৬ জন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে সীতাকু-ে ৬ জন, আনোয়ারা ও সাতকানিয়ায় ৩ জন করে, বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও রাঙ্গুনিয়ায় ২ জন করে এবং রাউজান মিরসরাই, পটিয়া ও বোয়ালখালীতে ১ জন করে রয়েছেন।
গতকাল মৃত্যুবরণকারী চার জনের মধ্যে শহরের ৩ জন ও গ্রামের ১ জন। জেলায় এখন মোট মৃতের সংখ্যা ৬০৮ জনে দাড়ালো। এর মধ্যে শহরের ৪৩৮ জন ও গ্রামের ১৭০ জন। সুস্থতার সনদ দেয়া হয় ১৮১ জনকে। ফলে জেলায় মোট আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৯ হাজার ৫৪৮ জনে। এদের ৫ হাজার ৬৭৫ জন হাসপাতালে ও ৩৩ হাজার ৮৭৩ জন বাসায় চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে গতকাল যুক্ত হন ২৫ জন, ছাড়পত্র নেন ৬৯ জন। বর্তমানে ১ হাজার ২৯০ জন কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গতকালের ৪ জনসহ চলতি মে মাসের ২৭ দিনে চট্টগ্রামে ৮৪ করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ৮ জন মারা যান ৮ মে। মৃত্যুশূন্য ছিল দুই দিন, একজন করে মারা যান চারদিন। গত এপ্রিল মাসে তিনদিন মৃত্যুশূন্য ছিল। পুরো মাসে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়। গতকাল আক্রান্তের চেয়ে আরোগ্য লাভকারীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। নতুন আইসোলেশনের চেয়ে করোনামুক্তির ছাড়পত্র নেওয়ার সংখ্যাও দ্বিগুণের বেশি।
এদিকে, এবার নয় দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ১৮ মে এগারো দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট সংক্রমিত ৫২ হাজার পার হয়। এর আগে, ৭ মে ১৩৬ জনের সংক্রমণের মধ্য দিয়ে সাত দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার পূর্ণ হয়ে ৫১ হাজার অতিক্রম করে। ৩০ এপ্রিল ১৮৫ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হলে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৯০ জনে। এর আগে ৪৯ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে, ২৫ এপ্রিল। এদিন চট্টগ্রামে ২০৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হয়ে মোট আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ হাজার ৯৫ জনে।
২১ এপ্রিল ২৭৮ জনের নমুনায় ভাইরাস শনাক্ত হলে করোনা রোগীর সংখ্যা তিন দিনে ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে যায় (৪৮ হাজার ১৩৯ জন)। ১৮ এপ্রিল ৪৭ হাজার অতিক্রম করে চার দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। দুই দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে মোট আক্রান্ত ৪৬ হাজার ছাড়িয়ে যায় ১৪ এপ্রিল। তিনদিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে ১২ এপ্রিল জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৫ হাজার ২৯১ জনে। এর আগে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার অতিক্রম করেছিল ৯ এপ্রিল। এ সময়ে পরপর পাঁচবার তিনদিনে করোনা রোগীর হাজারপূর্তি হয়। ৪৩ হাজার পার হয় ৭ এপ্রিল ও ৪২ হাজার অতিক্রম করে ৫ এপ্রিল। ২ এপ্রিল ৪০ থেকে ৪১ হাজারে যেতেও সময় লাগে ৩ দিন। অথচ, ৪০ হাজার পূর্ণ হয়েছিল ৩১ মার্চ, পাঁচ দিনে এক হাজার পূর্ণ হয়ে। ৩
৯ হাজার ছাড়িয়েছিল ২৬ মার্চ, তাও পাঁচ দিনে। এর আগে ৩৮ হাজার পূর্ণ হয় ২২ মার্চ, ছয় দিনে। ৩৭ হাজার পূর্ণ হয় ১৭ মার্চ, ৭ দিনে। ৩৬ হাজার পূর্ণ হয় ১০ মার্চ, ১০ দিন সময় নিয়ে। এর আগে ১ মার্চ ৩৫ হাজার পূর্ণ হয়। সে সময় এক হাজার পূর্ণ হতে ১৪ দিন লেগেছিল। ১৬ ফেব্রুয়ারি ৩৪ হাজার অতিক্রম করার সময় ১ হাজার পূর্ণ হয় ১৫ দিনে। ৩১ জানুয়ারি ১৬ দিনে ১ হাজার পূর্ণ হয়ে ৩৩ হাজার অতিক্রম করে, যা গত কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ে হাজার পূর্ণ হওয়ার কাল।
ল্যাবভিত্তিক রিপোর্টে দেখা যায়, ফৌজদারহাটস্থ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২৮৬ টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে শহরের ৮ টি ও গ্রামের ৬ টির রেজাল্ট পজিটিভ আসে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ল্যাবে ১৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় গ্রামের ৬ জনসহ ৩০ জনের নমুনায় ভাইরাস থাকার প্রমাণ মেলে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ল্যাবে ৬৯ টি নমুনার মধ্যে শহরের ২ টি জীবাণুবাহক চিহ্নিত হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) ল্যাবে ১৮ নমুনায় গ্রামের একটিসহ ৪ টিতে ভাইরাস পাওয়া যায়।
নগরীর একমাত্র বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসা কেন্দ্র আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালের রিজিওনাল টিবি রেফারেল ল্যাবরেটরিতে (আরটিআরএল) ৫২ টি নমুনা পরীক্ষা করা হলে শহরের ১৭ টি ও গ্রামের ৬ টিতে করোনার জীবাণু শনাক্ত হয়।
বেসরকারি চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে ১৮ জনের নমুনার মধ্যে শহর ও গ্রামের ৩ জন করে এবং মেডিকেল সেন্টারে ১১ জনের নমুনায় শহরের ৩ জন আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হন। এদিন চট্টগ্রামের কোনো নমুনা কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়নি। এছাড়া, বেসরকারি ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরি শেভরন ও ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল এবং সরকারি পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো নমুনা পরীক্ষা হয়নি।
রিপোর্ট বিশ্লেষণে ল্যাবভিত্তিক সংক্রমণ হার পাওয়া যায়, বিআইটিআইডি’তে ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ, সিভাসু’তে ২২ দশমিক ৫৫, চবি’তে ২ দশমিক ৯০, চমেকে ২২ দশমিক ২২, আরটিআরএলে ৪৪ দশমিক ২৩ শতাংশ, আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৩ দশমিক ৩৩ ও মেডিকেল সেন্টারে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।