নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সোমবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৩টা থেকে বিক্ষোভকারীদের হামলা, লুটপাট ও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চট্টগ্রামের ১০টি থানা। ওই দিনের সহিংসতা ও গুলিতে আহত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে ভাংচুর করে অস্ত্র ও পুলিশ জাদুঘরের মূল্যবান অনেক স্মারক লুটপাট করেছে দুর্বৃত্তরা। এর বাইরে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিসহ আরো কিছু সরকারি বেসরকারি স্থাপনায় ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
থানায় হামলা ও আগুন দেয়া ১০টি থানার মধ্যে নগরীর ৬টি থানায় ভাঙচুর এবং চারটি থানায় আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কোতোয়ালী, আকবরশাহ, পতেঙ্গা ও পাহাড়তলি থানা। ভাঙচুর করা হয়েছে ডবলমুরিং, সদরঘাট, ইপিজেড, বন্দর, হালিশহর ও চান্দগাঁও থানা।
সদরঘাট ও আকবরশাহ থানার বেশ কয়েকটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আকবরশাহ থানা থেকে লুট করা হয়েছে অস্ত্র ও মালামাল। ভাঙচুর করা হয়েছে নগরের দুই নম্বর গেটের জেলা পুলিশ সুপার অফিস ও মনসুরাবাদ জেলা পুলিশ লাইন্সে।
নগর পুলিশের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা জানান, সিএমপির কয়েকটি থানায় আগুন দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে। একাধিক দফা হামলা করা হয়েছে সিএমপি সদর দফতরে। কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তবে কী পরিমাণ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন তাদের নির্দিষ্ট তথ্য আমরা জানি না। লুটপাট করা হয়েছে থানাগুলোতে।
জানা যায়, সরকার পতনের পরপরই একদল দুর্বৃত্ত হামলা করে নগরের পতেঙ্গা থানায়। দুর্বৃত্তরা এক পর্যায়ে থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়।
পতেঙ্গা থানার ওসি মাহফুজুর রহমান জানান, একদল লোক বেলা আড়াইটার দিকে থানায় হামলা চালায়। তারা এক পর্যায়ে থানায় ঢুকে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা যে যেদিকে পারে থানা থেকে বের হয়ে যায়। লুঠপাট করা হয়েছে থানায়। আমি নিজেই নিরাপদ স্থানে সরে আসতে বাধ্য হয়েছি।
ওইদিন বিকেল তিনটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত হামলা চালায় পাহাড়তলি থানায়। তারা থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। চালানো হয় লুটপাট। নিজেদের বাঁচাতে পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে যায়।
বেলা পাঁচটার দিকে আগুন দেওয়া হয় কোতোয়ালি থানায়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা থানা থেকে বের হয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা লুটপাট চালায় থানায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছিল।
থানা গুলোতে হামলার পাশাপাশি বেলা সাড়ে পাঁচটায় একদল দুর্বৃত্ত দামপাড়া নগর পুলিশের সদর দফতরে হামলার চেষ্টা করে। তারা মুল ফটক ঘিরে পুলিশ জাদুঘরে ভাংচুর চালায়। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছোড়ে।
সরকার পতনের খবর শোনার পরপরই দুনম্বর গেট জেলা পুলিশ সুপার অফিস থেকে পুলিশ কর্মকর্তারা নিরাপদে সরে যায়। সন্ধ্যায় একদল দুর্বৃত্ত পুলিশ সুপার অফিসে ইট পাটকেল ছুড়ে দরজা জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে।
এর আগে বেলা পাঁচটায় কোতোয়ালি থানায় আগুন দেয়ার পর ওইদিনও দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রাম জেলা কারাগারের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল কারাকর্তৃপক্ষ। হামলকারীদের দাবি সব বন্দীকে বের করে দিতে হবে। এ সময় কারাকর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও রাবারবুলেট ছুড়ে।
এদিকে সোমবারের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধসহ দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। চমেক হাসপাতালে দুইদিনের ভর্তি হয়েছেন ১৯৪ জন। এদের অধিকাংশ গুলিবিদ্ধ ছিল।
মঙ্গলবার বিকেলে দুইজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার তসলীম উদ্দিন।
বৃহস্পতিবার বেলা দুইটার দিকে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির ভেতরে প্রবেশ করে বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংগঠন (জাসাস) চট্টগ্রাম জেলার কয়েকজন নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাংচুর করে।
এদিকে শুক্রবার (৯ আগস্ট) জুমার নামাজের পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার অভ্যন্তরে বন্দীরা বিদ্রোহের চেষ্টা করেছে। এ সময় বাইরে বন্দীদের স্বজনরা কারা ফটকে জড়ো হয়ে কারারক্ষিদের উপর হামলা চালিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। কারারক্ষিরা গুলি ছুঁড়লে কয়েকজন হামলাকারী আহত হন বলে জানা গেছে।
ইসলামী ব্যাংকে সর্ববৃহৎ ঋণ জালিয়াতি, ৩৪০০ কোটি টাকা এস আলমের পকেটে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।