জুমবাংলা ডেস্ক : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেও গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.০১ শতাংশ, আর জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি, বে-টার্মিনাল প্রকল্প ও মাতারবাড়ী বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর অডিটরিয়ামে বন্দরের ১৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান তিনি।
চেয়ারম্যান বলেন, কভিড অতিমারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পরও বন্দরের কার্যক্রমে তেমন প্রভাব পড়েনি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) কনটেইনার হ্যান্ডলিং গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫.০১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৫.৯৬ শতাংশ। এ ছাড়া বর্তমানে জাহাজের গড় অবস্থান সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে। কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার এক থেকে দুই দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে, অনেক ক্ষেত্রে অন-এরাইভাল বার্থিং পাচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির ধারাবাহিকতার প্রতিফলন।
তিনি বলেন, মার্চ ২০২৫-এ রপ্তানি আয়ে মার্চ ২০২৪-এর চেয়ে ১১.৪৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩৭ হাজার ১৯১.৩২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০.৬৩ শতাংশ বেশি। এই রপ্তানির বেশির ভাগই চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের গতি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিযোগী বিশ্বে টিকতে হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।
পাঁচ বছর পর পাঁচ মিলিয়ন টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরে টার্মিনাল ও বে-টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এ মাস দেশ ও বন্দরের জন্য সৌভাগ্যের। ২০২৯ সালে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর অপারেশনে চলে যাবে।
বন্দর ও কাস্টমের সমন্বয়ে সুফল পাওয়ার কথা জানিয়ে এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, বন্দর ও কাস্টমকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়।
এর সুফল দেখতে পাচ্ছেন। নিলামে গতি এসেছে। বন্দরে ইউএসএইডের অর্থায়নে রেফার কনটেইনার ইয়ার্ড ও কোল্ড স্টোরেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অটোমেশনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ই-টিকিটিং চালু করায় সব সিস্টেমে চলে আসছে। মেরিটাইম সিঙ্গেল উইন্ডো চালু করছি। এতে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। পেমেন্ট ডিজিটাল হয়ে যাবে।
ডিজিটালাইজেশন ও ডি-কার্বোনাইজেশনের বিকল্প নেই। জুনের মধ্যে বন্দরের পুরো কার্যক্রম অটোমেশন করে ফেলব। গ্রিন মেরিটাইম করিডর হবে চট্টগ্রাম বন্দর। মাতারবাড়ী, বে-টার্মিনাল, লালদিয়া হবে গ্রিন পোর্ট। এই টার্মিনালগুলো চালু হলে নতুন শিপিং রুট খুলে যাবে। আমাদের তরুণ প্রজন্ম বড় সম্ভাবনা। তাদের কর্মসংস্থান করতে হবে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার হবে সিঙ্গাপুর। বিনিয়োগকারী প্রস্তুত। নিরাপত্তা, আস্থা, সুন্দর পরিবেশ চান তাঁরা। মেরিটাইম ও পোর্ট সিকিউরিটি নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চান।’
রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বে-টার্মিনালের কনটেইনার টার্মিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পিপিপি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গত ২০ এপ্রিল বে-টার্মিনালের ডিপিপি একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া বুধবার বে-টার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। আশা করছি, চট্টগ্রাম বন্দরের বে-টার্মিনাল প্রকল্প আগামী ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুকের সঞ্চালনায় সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও চট্টগ্রাম বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর কাওছার রশিদ, সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।