ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম: আজ সকাল ৮টায় শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে শেষ সময়ে এসে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতাদের নিজেদের পক্ষে মাঠে নামানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ কোথাও কোথাও নিজেদের অবস্থান পরিস্কার করলেও কোথাও রয়েছেন অপ্রকাশ্য। ফলে সাধারণ ভোটারদের মাঝেও এ নিয়ে এক ধরনের দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
নগরীর মূল চারটি আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তরা যেমন আওয়ামী লীগের কোননা কোন পদবীধারী, তেমনি স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা আওয়ামী লীগের পদে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এতে আওয়ামী সমর্থক ভোটাররা দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এতে ছোট খাট বিপত্তিও ঘটে চলছে বিভিন্ন এলাকায়। তবে এ পর্যন্ত বড় আকারের কোনো ঘটনা না ঘটলেও আশঙ্কা থেকেই গেছে।
এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবাই আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃত্বের সমর্থন নিজেদের পক্ষে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। এতে কোনো কোনো নেতা উভয় সংকটে পড়েছেন বলে জানা গেছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা হওয়ায় এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা।
চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর ও পাহাড়তলী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম। মনজুর আলম আওয়ামী লীগের পদবীধারী কোনো নেতা না হলেও তিনি পারিবারিকভাবেই দীর্ঘদিন আওয়ামী আদর্শের ভাবধারার ছিলেন। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে তিনি ইতিপূর্বে চারবার ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম নাগরিক ঐক্য কমিটির ব্যানারে তিনি এক মেয়াদে সিটি করপোরেশনের মেয়রও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচনে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের বিপরীতে রাজনৈতিক আদর্শ পরিত্যাগ করে বিএনপির সমর্থন নিয়েও হেরে যান। এরপর তিনি আর কখনও বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কিন্তু দলীয় সমর্থনের বাইরে একজন দানশীল ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। তাই প্রকাশ্য না হলেও ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগ চট্টগ্রাম মহানগর নেতৃবৃন্দের বড় একটি অংশ মনজুর পক্ষে কাজ করছেন বলে বিশেষ সূত্রে জানা গেছে।
তার বিপরীতে বর্তমান এমপি মো. মহিউদ্দিন বাচ্চু দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের আহবায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তিনমাস আগে চট্টগ্রাম-১০ আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। তবে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রক্ষা করেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এবার তার পক্ষে সরাসরি কাজ করতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা অনেকটা অনীহা প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। মহিউদ্দিন অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত এই নেতা দলীয় মনোনয়ন পেলেও দলীয় সমর্থন পুরোপুরি লাভ করতে না পারায় বিপাকে রয়েছেন কিছুটা।
একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে আরেক যুবলীগ নেতা ফরিদ মাহমুদ। ফরিদ মাহমুদ ও মহিউদ্দিন বাচ্চু একই গুরুর শিষ্য হিসেবে পরিচিত হলেও গত কয়েক বছর ধরে তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ও রাজনৈতিক আধিপথ্যের কারণে বিশাল দূরত্ব তৈরি হয়েছে। পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে ফরিদ মাহমুদের একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তাই তিনিও অনেক আওয়ামী সমর্থিত ভোটারের ভোট লাভ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম ১১-(বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া গত তিনবারের সংসদ সদস্য এম এ লতিফের পক্ষেও নগর আওয়ামী লীগের নেতারা গা লাগিয়ে কাজ করছেন না। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রথম সারির কোনো নেতা মাঠে কিংবা নেপথ্যে না থাকায় সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবার আসনটিতে পরিবর্তন আসতে পারে বলে মনে করছেন খোদ আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীরা। জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তার পিছু না ছাড়লেও তিনি অনেকটা মরিয়া হয়ে ওঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীদের সমর্থনলাভের জন্য। তার পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে প্রকাশ্যে কাজ করতে দেখা যায়নি। তবে নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী গত বুধবার তার পক্ষে প্রকাশ্যে গণসংযোগে নেমেছেন।
জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউল হক সুমন কেটলি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগ নেতাদের অধিকাংশই সুমনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন বলে বিষয়টি এখন আর গোপন নেই। বিশেষ করে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ মাঠে নেমে গেছেন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই । এই আসনের আওতাধীন ৭ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও পতেঙ্গ এবং বন্দর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা প্রতিদিন সুমনের পক্ষে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট চাইতে দেখা গেছে। তারা প্রত্যেকে তাদের অবস্থানের বিষয়টি গণমাধ্যমে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচার করে যাচ্ছেন। নানা কারণে লতিফের পক্ষে না থেকে আ জ ম নাছির উদ্দিনও সুমনের পক্ষে রয়েছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এমনকি নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি মাহতাব উদ্নি চৌধুরীও অনেকটা প্রকাশ্যে তার পক্ষে মাঠে রয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসনে জোটগত কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রত্যাহার করে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠকে। এর বিপরীতে শক্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অনড় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও দীর্ঘ ১০ বছরের চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। তিনি দীর্ঘদিন নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। ফলে দলীয় সমর্থনলাভের জন্য তিনিও মরিয়া হয়ে ওঠেছেন। কোননা কোনো কারণে সোলায়মান আলম শেঠের কাছে তার পরাজয় হলে ভবিষ্যতে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের জন্য এটা কলঙ্ক হয়ে থাকবে- এমনটাও ভাবছেন ছালামের অনুসারীরা।
আবার সোলায়মান আলম শেঠও জোটগত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের পূর্ণ সমর্থন তার পক্ষে রাখার জন্য বিভিন্ন কৌশলে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পার্টির প্রভাবশালী এই প্রেসিডিয়াম সদস্য তার ‘ক্যারিশমেটিক’ কর্ম-পরিকল্পনা দিয়ে আওয়ামী সমর্থন ও স্থানীয় সাধারণ ভোটারের মন জয় করতে পারলে ভাগ্যে এমপি পদটা জুটে যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এছাড়া বিএনপি ও জামায়াত অনুসারী নেতা-কর্মীদের ভোটও তার পক্ষে রাখার জন্য কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে মাঠজরিপে শোনা যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।