চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে নভোযান পাঠাবে ভারত। ২০২৮ সালে ‘চন্দ্রযান-৪’ নামে এ নভোযান উৎক্ষেপণের কথা জানিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। এ যাত্রায় ভারতকে সহযোগিতা করবে জাপানের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জাক্সা। এ মিশনে থাকবে না কোনো মানুষ। রোবটিক ল্যান্ডারের সাহায্যে চাঁদ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
গত শতাব্দীতে মানুষ চাঁদ থেকে সরাসরি নমুনা সংগ্রহ করেছে। ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো ১১ মিশনে নীল আর্মস্ট্রং প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পা রাখেন। তিনি ও বাজ অলড্রিন ফেরার সময় নিয়ে আসেন চাঁদের মাটি ও পাথর। এরপর মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নভোচারীরা আরও ৫ বার চাঁদে গেছেন।
প্রতিবারই কিছু না কিছু নমুনা নিয়েই পৃথিবীতে ফিরেছেন তাঁরা। তবে এখন প্রযুক্তি উন্নত হয়েছে। ফলে মানুষ পাঠানোর চেয়ে অনেক কম খরচে রোবটিক ল্যান্ডারের সাহায্যে ভিনগ্রহ বা উপগ্রহ থেকে চাইলেই নমুনা সংগ্রহ করা যায়। সে কাজটাই করতে যাচ্ছে ভারত। তারা যে ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষ পাঠাতে চায়, এটা তারই সূচনা বলে জানিয়েছেন ইসরোর চেয়ারম্যান এস. সোমনাথ।
সব ঠিক থাকলে বছর চারেক পর, ২০২৮ সালে চন্দ্রযান-৪ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবরতণ করবে। দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি পানি ও বরফ সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে প্রায় ৩ কেজি চাঁদের নমুনা সংগ্রহই এর লক্ষ্য। বর্তমানে ভারত সরকার যতগুলো বড় বড় প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে, এটা তার মধ্যে অন্যতম। এই মিশনের বাজেট ধরা হয়েছে ২ হাজার ১০০ কোটি রুপি বা প্রায় ২৫ কোটি মার্কিন ডলার।
ইসরোর চেয়ারম্যান সোমনাথ বলেছেন, ‘অবশ্যই এ কাজ রুশ ও মার্কিনিরা আগে করেছে। তবে এখনো এটা সফলভাবে সম্পন্ন করা বেশ চ্যালেঞ্জিং এবং ব্যয়বহুল। আমরা আগেও দেখিয়েছি, কীভাবে কম খরচে চাঁদে গিয়ে আবার ফিরে আসা যায়।’
এই মিশনে মহাকাশযানটিতে মোট ৫টি মডিউল থাকবে। এগুলো উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহৃত হবে ইসরোর সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট এলভিএম-৩। তবে এ মিশনের চ্যালেঞ্জিং দিক হচ্ছে, মোট দুটি রকেটের সাহায্যে মডিউলগুলো উৎক্ষেপণ করা হবে। একটি রকেট ল্যান্ডার এবং নমুনা সংগ্রহকারী যান বহন করবে। বাকি তিনটি মডিউলের জন্য লাগবে আরও একটি রকেট। এই মডিউল তিনটি থাকবে চাঁদের কক্ষপথে।
প্রথম রকেটের সাহায্যেই উৎক্ষেপিত ল্যান্ডার ও নমুনা সংগ্রহকারী যান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে। নমুনা সংগ্রহ করে চাঁদের কক্ষপথে এসে দ্বিতীয় রকেটের সঙ্গে ডক করবে প্রথম রকেটটি। এটাই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ এ মিশনে। এ জন্য অবশ্য ২০২৫ সালের শুরুতে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের স্পেস ডকিং এক্সপেরিমেন্ট চালু করবে ইসরো।
এ মিশনের কিছু কিছু অতি প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি হচ্ছে ভারতেই। যেমন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে নমুনা সংগ্রহকারী রোবটিক বাহু তারা নিজেরাই তৈরি করবে। পাশাপাশি চাঁদের পৃষ্ঠের কয়েক মিটার গভীরের নমুনা সংগ্রহের জন্য দরকার হবে শক্তিশালী ড্রিলিং মেশিনের মতো কিছু। সেটাও ভারত তৈরি করবে নিজ দেশে।
বর্তমানে ভারতের পাশাপাশি অনেক দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর বরফে থাকতে পারে প্রাণ। সে চেষ্টায় ব্যর্থ হলেও রকেটের জ্বালনির জন্য চাঁদের ওই অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে রয়েছে বিপুল পরিমাণ হিলিয়াম, যা জ্বালানি হিসেবে কাজে লাগবে। ২০২৬ সালে চাঁদের মাটিতে ফের মানুষ পাঠাবে নাসা। এই অভিযানের নভোচারীরাও নামবেন দক্ষিণ মেরুতে।
ঠিক কোথায় অবতরণ করা যায়, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। শুরুতে সম্ভাব্য ১৩টি অঞ্চল শনাক্ত করেছিল নাসা। এখন সেখান থেকে ৪টি কমিয়ে মোট ৯টি স্থান সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখা হয়েছে। চীনও এই দশকের মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মানুষ পাঠানোর তোড়জোড় করছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, চাঁদের এই অঞ্চল নিয়ে এখন সবার আগ্রহ। সেখানে এই মিশনের মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে ভারত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।