ড. মো. রাকিবুল ইসলাম : ভাষা সৃষ্টির ইতিহাস থেকে জানা যায় প্রাচীন সুমেরু সভ্যতায় প্রথম লিখিত ভাষার ব্যবহার শুরু হয়। আধুনিক ইতিহাসবিদরা মনে করেন খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে সেখানকার অধিবাসীরা সুমেরীয় ভাষায় কথা বলত। এর আগে আকারে-ইঙ্গিতে, মাটিতে দাগ কেটে বা ছবি এঁকে মানুষ মনের কথা প্রকাশ করত। সুমেরীয়রাই প্রথম ব্রোঞ্জ-এর পাত্রে খোদাই করে ভাষার লিখন পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করে। ইংরেজিতে এটি ‘proto-writing’ (খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের শুরুতে এর ব্যবহার শুরু হয়) নামে পরিচিত। ভাষাসৃষ্টির পর থেকে মানুষের গল্প বলার একটি মাধ্যম তৈরি হয়ে যায়। লোকমুখে বিভিন্ন গল্প মানুষের আনন্দ-বিনোদনের অবলম্বন হয়ে ওঠে। এসব গল্প মুখে-মুখে প্রচারিত হয়ে লোকসাহিত্যের জন্ম দেয়। লিখন-পদ্ধতি আবিষ্কারের পর লোকসাহিত্য ধীরে-ধীরে লেখ্যরূপ পায়। এভাবে মানুষের গল্প বলা ও শোনার আদিম ইচ্ছা থেকে কালক্রমে জন্ম হয় আধুনিক সাহিত্যের।
ভাষা ও সাহিত্যের মতো চলচ্চিত্রের ইতিহাস এতো পুরাতন নয়। বলা যায় এটি শিল্পের একটি নবীন শাখা। তবে চিত্রে গতিময়তা আনার প্রচেষ্টা গুহাচিত্রের আমল থেকেই শুরু হয়েছে। ধারণা করা হয় পুরাতন প্রস্তরযুগে, প্রায় সাড়ে সতের হাজার বছর আগে প্রাচীন স্পেনের আলতামিরা গুহাচিত্রে ধাবমান বাইসন্ এঁকে ছবিকে গতিময় করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এটিই বিশ্বের প্রথম চলচ্চিত্র সৃষ্টি-প্রয়াসের প্রামাণ্য দলিল। এরও অনেক আগে থেকে মানুষ তার চোখের সামনে প্রত্যহ ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি হুবহু চিত্রে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। বহু দিনের বহু লোকের চেষ্টার ফলে স্থিরচিত্রের গতিময় রূপ থেকে চলচ্চিত্রের সার্থক নির্মাণ মাত্র একশ বছরের কিছু অধিককাল আগের ঘটনা। কিন্তু এই অল্প সময়ে মানুষ ও সমাজের ওপর এর প্রভাব ব্যাপকতা লাভ করে। তাই, অল্প সময়েই একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্র স্বীকৃতি লাভ করেছে।
চলচ্চিত্র একটি মিশ্রশিল্প। ক্যামেরা এর প্রধান উপায় বা বাহন। কারিগরি দিক ছাড়া কাহিনি বা প্লট এর প্রধান উপাদান। সাহিত্যের মতো চলচ্চিত্রের সাফল্য-ব্যর্থতা শুধুমাত্র কাহিনির ওপর নির্ভর করে না। সামগ্রিক সফলতা নির্ভর করে অভিনয়, পরিচালনা, সম্পাদনা ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহারে। সাহিত্যের প্রধান বাহন শব্দ। একের পর এক শব্দ বুনে সাহিত্যিক তাঁর মনের ভাব প্রকাশ করেন। চলচ্চিত্রের মূল উপাদান হচ্ছে ইমেজ বা ছবি। ছবি সেখানে কথা বলে। ছবির পর ছবি সাজিয়ে চলচ্চিত্রকার একটি ঘটনা বা বিষয়কে চিত্রায়িত করেন। চলচ্চিত্র হচ্ছে সমাজের ঘটনানির্ভর জীবনপ্রণালী ও সংস্কৃতির চিত্রিতরূপ। তেমনি, সাহিত্যও একটি সমাজের ঘটনাবহুল জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতির বর্ণিতরূপ।
সাধারণ অর্থে চলচ্চিত্র মানে চলমান চিত্র। অর্থাৎ, স্থিরচিত্রের চলমান রূপ। কিন্তু একটিমাত্র স্থিরচিত্রকে প্রযুক্তির দ্বারা চলমান করলেই তাকে চলচ্চিত্র বলা যায় না। এ ক্ষেত্রে বলা যায়, যে চিত্রসমষ্টি চলে বা গতিশীল তা-ই চলচ্চিত্র। কিন্তু এতেও চলচ্চিত্রের সংজ্ঞার্থ পরিষ্কার হয় না। ধরা যাক, অনেকগুলো বিক্ষিপ্ত স্থিরচিত্রকে গতিশীল করে কয়েক মিনিট কিংবা কয়েক ঘণ্টার একটি ক্লিপ তৈরি করা হলো—তাকে কি চলচ্চিত্র বলা যাবে? এক কথায় উত্তর, যাবে না। কারণ কয়েকটি ধ্বনি মিলে যদি অর্থপূর্ণ মনের ভাব প্রকাশ না করে—তাহলে যেমন তাকে ভাষা বলা যায় না, তেমনি অনেকগুলো স্থিরচিত্র মিলে যদি কোন অর্থপূর্ণ কাহিনি তৈরি করতে না পারে, তাকেও চলচ্চিত্র বলা যায় না। এখন ধরা যাক, কোন ব্যবসায়িক পণ্যের বিজ্ঞাপনে যদি একটি অর্থপূর্ণ কাহিনি বর্ণনা করা হয়—তাহলে সেটা কি চলচ্চিত্র হবে? চলচ্চিত্রের সংজ্ঞার্থ অনুযায়ী একেবারেই না। কারণ বিজ্ঞাপনে পণ্যের প্রসারের জন্য আপাতদৃষ্টিতে একটি কাহিনি বলা হলেও তা পূর্ণ কাহিনি নয়। কাহিনির খণ্ডাংশ মাত্র।
তাহলে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, সময়ের পরিধিতে যা-ই হোক না কেন, চলচ্চিত্র হতে গেলে অনেকগুলো স্থিরচিত্র মিলে একটি পূর্ণ কাহিনি বর্ণনা করতে হবে, যা অবশ্যই অর্থপূর্ণ হবে। হোক সেটা পাঁচ মিনিটের শর্টফিল্ম বা ডকুমেন্টরি কিংবা তিন ঘণ্টার পূর্ণদৈর্ঘ্য ছায়াছবি। চলচ্চিত্রের পরিচয়জ্ঞাপক অভিধা একাধিক। মুভ করে বলে ইংরেজিতে একে বলা হয় মুভি। সিনেমাটোস্কোপে নির্মিত হতো বলে এর নামকরণ হয়েছে সিনেমা। ফিল্মে ধারণ করা হয় বলে ফিল্ম। ছবির সাহায্যে গল্প বলা হয় বলে একে ছবিও বলা হয়। এমনকি বইয়ের গল্প (সাহিত্য) থেকে চলচ্চিত্র নির্মিত হয় বলে বাংলায় কিছুকাল আগেও সিনেমাকে বই বলে শনাক্ত করা হতো।
সাহিত্যে গল্প বলা যেমন প্রাচীন বিষয়, তার চেয়েও অনেক পুরনো চিত্রের সাহায্যে গল্প বলার রীতি। প্রাচীন মানুষরা লিখতে জানত না। ভাষাও তখন সুগঠিত ছিল না। তখন চিত্রের সাহায্যে তারা মনের ভিতরের ভাব-গল্প প্রকাশ করার চেষ্টা করত। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যের প্রাচীন গুহাচিত্রে দেখা যায়, গুহাবাসীরা দেয়ালে পশুর রক্ত, চর্বি, বিভিন্ন রকমের মাটি ও গাছ-গাছড়ার রসমিশ্রিত এক ধরনের রঙ ব্যবহার করে বিভিন্ন জীবজন্তুর ছবি আঁকত। তৎকালে গুহাবাসীদের জীবিকার প্রধান উপায় ছিল পশুশিকার। শিকারে যাওয়ার প্রাক্কালে তাদের চাওয়া থাকত দেবতা যেন একটি শিকার (পশু) তাদের ভাগ্যে লিখে দেন। পাশাপাশি ভয় এবং প্রার্থনাও ছিল—তারা নিজেরাই যেন বন্য হিংস্র পশুদের শিকারে পরিণত না হয়। সঙ্গত কারণে শিকার সম্বন্ধীয় গল্পগুলোই তারা অবসর সময়ে চিত্রে বলার চেষ্টা করত।
অন্যদিকে গুহা না থাকায় প্রাচীন মিশরীয়রা ছবি আঁকত প্রার্থনাঘর, মন্দির বা কবরের দেয়ালের গায়ে। আবার, ধারাবাহিক ছবির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন গল্প বলার চেষ্টা করত। ভাষার হরফ হিসাবে ব্যবহার করত বিভিন্ন ছবিকে। ইংরেজিতে এই মাধ্যমটিকে বলা হয় ‘হাইঅরোগ্লিফিক’। তাদের আঁকা ছবিতে গল্পবলার বিষয়বস্তু ছিল গুহাবাসীদের চেয়ে ভিন্ন। ছবির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন যুদ্ধ-বিগ্রহ, শিকার, সৈন্য, মৃত রাজা-রানীর গল্প বলত। সাধারণ লোকদের ছবি এরা আঁকত ছোট করে, আর রাজা-রানীর ছবি আঁকত কয়েকগুণ বড় করে। এভাবে এরা বোঝাতে চাইত রাজারা সাধারণের চেয়ে অনেক বড়, ক্ষমতাধর আর পরাক্রমশালী।
চলচ্চিত্র মানুষের অর্থপূর্ণ মনের ভাব প্রকাশে সক্ষম। সুতরাং এটিও এক ধরনের ভাষা। বলা যায়, এটি পৃথিবীর নবীনতম ভাষা। স্থান-কালের সীমানা ছাড়িয়ে দর্শকগণ চলচ্চিত্রের সাধারণ ভাষা বুঝতে সক্ষম। অপরদিকে, সাহিত্যের ভাষা ঐ নির্দিষ্ট ভাষাজ্ঞান ছাড়া অন্য কেউ বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের ভাষা সাহিত্যের ভাষা থেকে অনেক ব্যাপক এবং সুবিধাময়। এই ভাষার ক্ষুদ্রতম একক ইমেজ বা ছবি। ক্যামেরা এর রচয়িতা। স্যালুলয়েড এর ধারক। যদিও, এই কথার সত্যতা ক্রমশ কমে আসতে শুরু করেছে। স্যালুলয়েডের জায়গা দখল নিতে শুরু করেছে বিজ্ঞানের নব-নব আবিষ্কার। আজকাল ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে সরাসরি হার্ডডিস্ক/হার্ডড্রাইভ/সফটড্রাইভ/মেমোরিকার্ডে ছবি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা যায়। সিনেমার নির্বাক-যুগে চলচ্চিত্র ছিল পুরোপুরি সর্বজনীন ভাষা। পরে শব্দযোজনা করে নির্দিষ্ট ভাষাভাষীর কাছে একে আরো বোধগম্য করে তোলা হয়েছে। তবে এর সর্বজনীনতা এখনো অক্ষুণ্ণ আছে। ভাষা জানা না থাকার পরও আফ্রিকান সিনেমা দেখে যেমন জাপানিরা বুঝতে পারে, তেমনি বাংলা সিনেমা দেখেও আমেরিকানরা বুঝতে পারে। দৃশ্যময়তার বাড়তি সুবিধার কারণে, ‘শিল্প হিসেবে সাহিত্য যদি বয়সে বা বৈচিত্র্যে জিতে যায়, চলচ্চিত্র অন্যদিক থেকে টেক্কা দেয় প্রভাবে ও বিস্তারে’।
সাহিত্যের মতো চলচ্চিত্রও মানুষের গল্প-বলার কাজটি করে থাকে। তবে, শব্দের পর শব্দ লিখে নয়, ছবির পর ছবি সাজিয়ে। প্রথমদিকে চলচ্চিত্রে হাতে-আঁকা ছবি ব্যবহার করা হত। পরে এর জায়গা দখল নেয় ক্যামেরায় তোলা স্থিরচিত্র। এই স্থিরচিত্র আবিষ্কারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। যেকোন বস্তুর হুবহু ছবি তৈরির প্রচেষ্টা সেই প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম ও চতুর্থ শতাব্দীতে চীনা দার্শনিক মো জি (Mo Di) এবং গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল পিনহোল ক্যামেরা সম্বন্ধে বর্ণনা করেন, যা পরবর্তী সময়ে স্থিরচিত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হতো। তবে চলচ্চিত্র হচ্ছে অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের যোগফল। ‘বিজ্ঞানের আধুনিক বিকাশকে একাত্ম করে, চলচ্চিত্র আধুনিকতম শিল্পমাধ্যম হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলেছে। হয়ে উঠেছে স্বতন্ত্র একটি মাধ্যম, স্বতন্ত্র একটি শিল্প।’
বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন জন চলচ্চিত্র দেখানোর চেষ্টা করলেও এ কাজে প্রথম সফল হন লুমিয়ের ব্রাদার্স। ১৮৯৫ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, ফ্রান্সের গ্র্যান্ড ক্যাফে ইন প্যারিস-এ চলচ্চিত্রের দুই আদি পুরুষ অগাস্ত লুমিয়ের এবং লুই লুমিয়ের প্রথম দর্শকদের সামনে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করেন। বিশ্বের ইতিহাসে যাত্রা শুরু হয় এক বিস্ময়কর শিল্পের। যদিও চলচ্চিত্র শুরুর প্রথম দিকে এটি ছিল শুধুই বৈজ্ঞানিক চমক। এমনকি লুমিয়ের ভাইদের কাছেও। ‘সচেতনভাবে …তাঁরা সিনেমার জন্মদানে প্রয়াসী ছিলেন না, বৈজ্ঞানিক কৌতূহল নিরসনই ছিল তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। তবু সিনেমার জন্মের পটভূমি হিসাবে এর মূল্য যেমন অপরিসীম, তেমনি চিত্তাকর্ষক।’ পর্দায় মানুষ, প্রাণী বা কোন বস্তুর গতিময়তা দর্শককে বিমোহিত করত। এই চমকের ঘোর কাটতে তাদের বেশিদিন সময় লাগল না।
সংশ্লিষ্টরা জানেন, ভাষাসৃষ্টির ইতিহাস কতো দীর্ঘ ও জটিল। কিন্তু বর্তমানে একটি শিশু যে ভাষাগোষ্ঠীতেই জন্মাক না কেন, সে তার শ্বাসকার্যের মতো স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই ভাষা আয়ত্ত করে নেয়। ‘মানুষের মধ্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিশুর বিবিধ মানসিক ও সামাজিক ধারণার মতো ভাষাও জন্মাবধি অধিগত হইয়া যায়। যেহেতেু শিশুমনের বৃদ্ধি তাহার ভাষা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে আগাইয়া যায় সেহেতু মাতৃভাষা-লাভে সে কখনই সজ্ঞান চেষ্টা করে না।’ চলচ্চিত্রের আবিষ্কারও তেমনি বহু জটিল পথ পাড়ি দিয়ে লুমিয়েরদের হাতে সফলতা পেলেও কিছুদিনের মধ্যেই তা মানুষের কাছে প্রাত্যহিক ঘটনার মতোই স্বাভাবিক হয়ে যায়। অথচ প্রথম চলচ্চিত্র প্রদর্শনের দিন দর্শকরা বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়েছিলেন। সাধারণের কাছে বিস্ময় কেটে গেলে ১৯০০ সাল নাগাদ লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন এবং বিদায় নেন চলচ্চিত্র ব্যবসা থেকে।
আবিষ্কারের শুরুতে চলচ্চিত্র ছিল পরিচালক বা ব্যবসায়ীদের কাছে শুধুই অর্থ উপার্জনের উপায়, সার্কাস বা ম্যাজিকের মতই বাণিজ্য করার নতুন উপকরণ মাত্র; অনেকটা বেচাকেনার হাটে রোজগারের পণ্য হিসেবেই এর জন্ম। ফলে, Art অর্থে শিল্প হয়ে ওঠার আগে এটি Industry অর্থে শিল্প হয়ে ওঠে। বৈজ্ঞানিক চমক কেটে গেলে চলচ্চিত্রকাররা দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে বেছে নিলেন পর্দায় ছোট ছোট কাহিনিচিত্র বা তথ্যচিত্র দেখানো। চলচ্চিত্রের শুরুতে ‘নির্বাক ছবিতে কিছু-কিছু দৃশ্য কিংবা জীবনের চলমান মুহূর্তের দৃশ্যধারণ করা হতো। তাতে মুভি যে স্থিরচিত্র থেকে আলাদা—তা স্পষ্ট হয়ে গেল। পরবর্তী সময়ে তাকে সংগঠিত করার চেষ্টা করা হলো এইজন্য যে, এই শটগুলোর মাধ্যমে যদি গল্প বলা যায়।’
চলচ্চিত্রের আদিপুরুষ লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়ও প্রথমে মনমতো যা পেতেন তা ক্যামেরায় ধারণ করে দর্শকদের কাছে উপস্থাপন করতেন। যেমন : স্টেশনে ট্রেন ঢুকছে, বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে যাচ্ছে কিংবা নাস্তার টেবিলে শিশুর দৃশ্য। পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়ের প্রয়োজনে দর্শক ধরে রাখতে তারা এক শটের মধ্যেই হাস্যরসাত্মক গল্প বলার চেষ্টা করতেন। অর্থাৎ ক্যামেরা স্থির অবস্থায় চালু করে গল্প অথবা ফিল্ম শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যেতেন, আর একই ফ্রেমে সাজানো গল্পটি তখন অভিনীত হতো। Watering the Gardener এর একটি চমৎকার উদাহরণ।
চলচ্চিত্রে গল্প-বলার এই যে প্রয়াস, তা থেকে সাহিত্যের সঙ্গে এর একধরনের বন্ধন তৈরি হয়ে গেল। এই ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র গল্পচিত্রেও দর্শকদের মন বেশিদিন তৃপ্ত রইল না। পরবর্তীকালে ফরাসি চলচ্চিত্রকার মেলিয়েঁ এক শটের গল্প বলা থেকে বহু শট বিভাজনে গল্প বলার রীতি তৈরি করেন। কাহিনিচিত্রণে বেছে নেন সিন্ড্রেলা’র মতো বিভিন্ন রূপকথার গল্প। সিন্ড্রেলাকে তিনি তিনটি ভাগে বিশটি শটে বিভক্ত করে চিত্রায়িত করেন। এরপর জুলভার্ন-এর ফ্যান্টাসিধর্মী গল্প অবলম্বনে তৈরি করেন ‘এ ট্রিপ টু দ্যা মুন’। খণ্ড-খণ্ড দৃশ্য জোড়া দিয়ে চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ গল্প বলার রীতি সেই থেকে শুরু হয়ে যায়। কিন্তু দর্শকরা চলচ্চিত্রের কাছে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে থাকল। ঠিক যেমনি সাহিত্যে বলা হয় মানুষের গল্প, মানবিকতার গল্প, জীবনের গল্প—সে রকম। তবে মনে রাখতে হবে, উভয়ের গল্প বলার পদ্ধতি আলাদা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।