স্পোর্টস ডেস্ক: লাতিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনায় ২৪ দল নিয়ে মাঠে গড়িয়েছে অনূর্ধ্ব-২০ ফিফা বিশ্বকাপ। বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট হলেও আসরকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই ফুটবলপ্রেমীদের। কারণ, এই টুর্নামেন্টের মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে তারকা হয়ে উঠেছিল দিয়েগো ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে লিওনেল মেসি, পল পগবা, আর্লিং হলান্ডের মতো ফুটবলাররা। এবারও বেশ কিছু তরুণ ফুটবলারের দিকে দেয়া যেতে পারে নজর। যারা ভবিষ্যতে হয়ে উঠতে পারেন ব্রাজিলের আগামী নেইমার, আর্জেন্টিনার মেসি, ফ্রান্সের পগবা কিংবা সেনেগালের সাদিও মানে।
২০ মে আর্জেন্টিনায় পর্দা উঠেছে যুব বিশ্বকাপের ২৩তম আসরের। ১২ জুন ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে আসরটির। এ টুর্নামেন্টটিতে ম্যারাডোনা, মেসি, পগবা এবং সবশেষ হলান্ড গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট জিতে বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিয়েছিল। সে তালিকায় এবারও যোগ হতে পারেন বেশ কিছু তরুণ ফুটবলার। এ প্রতিবেদনে তেমনই দশ জন ফুটবলারকে সংক্ষেপে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে, যারা শাসন করতে পারে আগামীর ফুটবলবিশ্ব।
আন্দ্রে সান্তোস (ব্রাজিল)
১৯ বছরের এ তরুণ ইতোমধ্যে মাঝমাঠে ফুটবলীয় দক্ষতায় বিশ্বের বুকে নিজেকে পরিচিত করেছেন আলাদাভাবে। তাকে মনে করা হতো আগামীর সার্জিও বুসকেতস। তবে সান্তোস তার প্রতিভায় ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডারকেও। গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আমেরিকান অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রাজিলকে নেতৃত্ব দিয়ে জিতিয়েছেন ট্রফি। আসরে ৬ গোল করে হয়েছেন যৌথভাবে সর্বোচ্চ গোল স্কোরারও। তার আগে ইংলিশ ক্লাব চেলসিতে ১৩ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে যোগ দিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন এ তারকা। যদিও চেলসির হয়ে এখনও তার মাঠে নামার সুযোগ হয়নি। বর্তমানে তিনি লোনে খেলছেন ব্রাজিলের ক্লাব ভাস্কো দা গামাতে।
ইয়াসের আসপ্রিয়া (কলম্বিয়া)
১৯ বছর বয়সী এ তরুণও সান্তোসের মতো খেলে থাকেন মিডফিল্ডে। এনভিগাদো অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা সবশেষ আবিষ্কার এ আসপ্রিয়া। যেখান থেকে উঠে এসে ২০১৪ সিনিয়র বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন তার স্বদেশি জেমস রদ্রিগেজ। দ্রুত গতিতে প্রতিপক্ষ শিবিরে আক্রমণ শানাতে পটু এ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। ইংলিশ ক্লাব ওয়াটফোর্ডের হয়ে গত মৌসুমে নিজের পারফরম্যান্সে সবার নজর কেড়েছিলেন তিনি। ইতোমধ্যে তার অভিষেক হয়েছে জাতীয় দলেও। গত বছর কলম্বিয়ার হয়ে ২ ম্যাচ খেলে একটি গোলও করেছেন তিনি।
তোমাসো বালদানজি (ইতালি)
অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ফুটবলপ্রেমীরা নজর রাখতে পারেন ইতালিয়ান তরুণ তোমাসো বালদানজির দিকেও। অ্যাটাকিং এ মিডফিল্ডার সিরি’আর ক্লাব এম্পোলির হয়ে ইতোমধ্যে নিজের জাত চিনিয়েছেন। ২০ বছর বয়সী এ তরুণ চলতি আসরে ২৭ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল। গত জানুয়ারিতে তার একমাত্র গোলে ইতালিয়ান জায়ান্ট ইন্টার মিলানের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল এম্পোলি। তার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ইতোমধ্যে তাকে দলে ভেড়াতে ইন্টার, এসি মিলান এবং লাজিও আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানিয়েছে তার প্রতিনিধি।
ক্যাড কাওয়েল (যুক্তরাষ্ট্র)
আমেরিকান মেজর সকার লিগে স্যান জোসে আর্থকোয়াকের হয়ে ফরোয়ার্ডে নিয়মিতই দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছেন কাওয়েল। তবে তিনি শিগগিরই পাড়ি জমাবেন ইউরোপে। বার্সেলোনা আগেই তার প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছিল। এবার তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে য়্যুভেন্তাস এবং এসি মিলানের মতো জায়ান্ট ক্লাবগুলো। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে ফরোয়ার্ডে যুক্তরাষ্ট্রের ভরসা ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ। ঘরের মাঠে ২০২৬ বিশ্বকাপের জন্য তাকে তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্র।
সাম্বা দিয়ালো (সেনেগাল)
এদিকে সাম্বা দিয়ালোকে ধরা হচ্ছে সেনেগালের ভবিষ্যৎ সাদিও মানে। ডায়নামো কিয়েভের হয়ে গত উয়েফা ইয়ুথ লিগে নজর কেড়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এ তরুণ। আসরে বায়ার্ন মিউনিখ এবং বার্সেলোনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন এ উইঙ্গার। গত মার্চে অনূর্ধ্ব-২০ আফ্রিকা কাপে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এনে দিয়েছিলেন বহুল আকাঙ্ক্ষিত শিরোপাটি। এবার তার সামনে সুযোগ আর্জেন্টিনায় দ্যুতি ছড়িয়ে নিজেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
ফ্যাব্রিসিও দিয়াজ (উরুগুয়ে)
২০ বছর বয়সী এ সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার গত দক্ষিণ আফ্রিকান চ্যাম্পিয়ন্সশিপে ৫ গোল করেছিলেন। উরুগুয়েকে তিনি শেষ পর্যন্ত রেখেছিলেন চ্যাম্পিয়নের দৌড়ে। যদিও ভাগ্যগুণে শিরোপা জিতে যায় ব্রাজিল। গুঞ্জন আছে, এ গ্রীষ্মের দলবদলে তাকে দলে ভেড়াচ্ছে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা।
জিওভানি (ব্রাজিল)
ব্রাজিলিয়ান ক্লাব পালমেইরাসে খেলা উইঙ্গার জিওভানি ড্রিবলিং দক্ষতায় নজর কেড়েছেন ফুটবল বিশ্বে। তার খেলার ধরন অনেকটা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলা ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার অ্যান্তোনির মতো। এক বছর ধরে চেলসি, নিউক্যাসল এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মতো ক্লাবগুলো তাকে দলে ভেড়াতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।
ম্যাক্সিমো পেরোনে (আর্জেন্টিনা)
আর্জেন্টাইন এ ডিফেনসিভ মিডফিল্ডারকে তুলনা করা হয় ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, ফেদে ভালভের্দের মতো তারকাদের সঙ্গে। তার প্রতিভা আঁচ করতে পেরে গত জানুয়ারিতে ম্যানচেস্টার সিটি তাকে ১০ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে দলে ভিড়িয়ে নেয়। ইতোমধ্যে ইংলিশ জায়ান্টদের হয়ে দুটি ম্যাচ খেলেছেন ২০ বছর বয়সী এ আর্জেন্টাইন। নিজ দেশে আয়োজিত বিশ্বকাপে বল পায়ে দ্যুতি ছড়িয়ে তিনি নিজেকে ম্যারাডোনা-মেসির যোগ্য উত্তরসূরি দাবি করতেই পারেন।
মার্কোস লিওনার্দো (ব্রাজিল)
ব্রাজিলের সান্তোস অ্যাকাডেমি থেকে উঠে আসা ফরোয়ার্ড মার্কোস লিওনার্দো। ইয়ুথ অ্যাকাডেমিতে গোলের বন্যা বইয়ে নজরে আসা ২০ বছর বয়সী এ ফরোয়ার্ড নিয়মিত গোল করে যাচ্ছেন সান্তোসের সিনিয়র দলেও। গত মৌসুমে তার পা থেকে এসেছিল ১৩ গোল। আর চলতি মৌসুমে করেছেন ৮ গোল। আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল স্কোরারের তালিকায় নিজের নাম লিখিয়ে তিনি ছিনিয়ে নিতে পারেন আসরের গোল্ডেন বুট।
উইলসন ওদোবার্ট (ফ্রান্স)
১৮ বছর বয়সী ফরাসি এ উইঙ্গার উঠে এসেছেন প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইয়ের ইয়ুথ অ্যাকাডেমি থেকে। যদিও তিনি বর্তমানে খেলছেন থোয়ার হয়ে। ইতোমধ্যে ক্লাবটির হয়ে ৩১ ম্যাচ খেলে ৪ গোল করেছেন ওদোবার্ট। তার সামনে সুযোগ, যুব বিশ্বকাপে দ্যুতি ছড়িয়ে ২০২৬ বিশ্বকাপের আগে ফ্রান্সের মূল দলে জায়গা করে নেয়ার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।