জুমবাংলা ডেস্ক: চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় এক যুবক শখের বসে মাল্টা চাষ করে ৪ বছরের মাথায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। এখন মাল্টা চাষে ভাগ্য বদলে যাওয়া যুবক হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আল-আমিন প্রধান।
তার মাল্টা বাগানে প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে শতশত মানুষ গাছে ঝুলে থাকা মাল্ট দেখার জন্য এসে ভিড় জমাচ্ছে। এ এলাকায় নতুন করে এ মাল্টা চাষ হওয়ায় মানুষের মাঝে কৌতহল দেখা দিয়েছে। তাই তারা ছুটে আসছে এ মাল্টা বাগানে।
গত বছর প্রথম মাল্টা ধরতে শুরু করে গাছে, আর এ বছর গত বছরের তুলনায় অনেক অনেক গুন বেশী মাল্টা গাছে ধরায় অনেকেই এ মাল্টাচাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে। অল্প পুজিতে ব্যাপক সাফলেরও আশা করছে এলাকার চাষিরা।
আল-আমিনের মাত্র ৪ বছরের মাথায় মাল্টা চাষ করে সাফল্য অর্জন করার খবর ছড়িয়ে পড়লে চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান আল-আমিনের মাল্টা বাগানটি দেখার জন্য চাঁদপুর থেকে ছুটে যান মতলব উত্তর উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের আল-আমিনের মাল্টা বাগানে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আল-আমিনের মাল্টা বাগান পরিদর্শন করায় আল-আমিনের এ মাল্টাচাষে আরো আগ্রহ বেড়ে ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান আল-আমিনকে এ মাল্টাচাষে উৎসাহ প্রদান করে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
আল-আমিনের এ সাফল্য দেখে এলাকার অনেক যুবক বেকার না থেকে এ ধরনের কৃষিকাজ করে নিজেরা ভাগ্যবদল ও সাফল্য অর্জন করার মত প্রকাশ করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কাছে।
সচাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলায় আল-আমিনের মাল্টা বাগানে সারিবদ্ধ গাছে গাছে ঝুলছে মাল্টা। প্রতিটি গাছে এতোবেশি মাল্টা ধরেছে যে ফলের ভারে গাছের ডালগুলো মাটির দিকে নুজ হয়ে পড়েছে। এখানকার অধিকাংশ মানুষ জীবিকা অর্জনে কৃষি কাজের ওপর নিভর্রশীল। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর মেঘনা-ধনাগোদা সেঁচ প্রকল্প, বর্ষায়ও জমিতে পানি উঠে না, তাই সারা বছরই ফসল করা যায়।
অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গত৪ বছর ধরে এখানে চাষ হচ্ছে মাল্টা। অল্প টাকা আর কম শ্রমে বেশি লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকায় এ ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য আল-আমিন প্রধান। তিনি সখের বসে রাস্তার পাশের ২০ শতক জমিতে মাটি ফেলে উঁচু করে মাল্টার চাষ শুরু করেন চার বছরে পূর্বে। বছর যেতে না যেতেই গাছে ফল আসতে শুরু করে। প্রথম বছরই তিনি অর্ধলক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এ বছর তিনি এক লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবেন বলে তার আশা। তার ফলের বাগানে মাল্টা, ড্রাগন, চায়না কমলা, জামবুড়া, বড়ই, আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করা হচেছ বিগত কয়েক বছর যাবত।
মাল্টা চাষি আলআমিন জানান, টিভিতে মালটা চাষ দেখে প্রথমে মাল্টা চাষ শুরু করি। মালটা চাষে আমি লাভবান হওয়ায় এলাকার অন্যান্য যুবকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে মালটা চাষে। মাল্টা গাছের চারপাশের আগাছা পরিষ্কার করলে এবং পোকার আক্রমণ দেখলে কীটনাশক স্প্রে করলেই গাছ সতেজ হয়ে থাকে।
আল-আমিন প্রধান আরো জানান, প্রতিটি গাছে বর্তমানে ১০০ থেকে ১৫০টি মাল্টা জুলছে। আশা রাখি, এবছর বাগানের গাছ থেকে ১৫ হাজার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো। মাল্টা বাগানে সপ্তাহে তিন থেকে চার ঘণ্টা শ্রম দিলেই চলে। মাঝে মধ্যে লাল সার, গুটি সার এবং কিছু কীটনাশক দিতে হয়। আমার মাল্টা বাগানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামানসহ স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা পরিদর্শনে এসেছেন।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীষ দাশ বলেন, আল-আমিন প্রধান লক্ষ্য ঠিক রেখেছেন বলেই মাল্টাচাষে সফল হয়েছে। তার মাল্টাচাষ দেখে অনেকেই এখন মাল্টাচাষ করছেন। ভালো কাজগুলোতে সকলের উৎসাহ ও সহযোগিতা থাকা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ পরিচালক আবদুর রশিদ জানান, চাঁদপুরে ফলচাষে আগ্রহীদের আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকি। চাঁদপুরে মাল্টাচাষ করে অনেকেই সফল হয়েছে। এছাড়া নতুন যারা আগ্রহ নিয়ে মাল্টাচাষ করতে চাচ্ছেন, তারজন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সর্বদাই হাত বাড়িয়ে দিয়ে সকল প্রকার সহযোগিতার করবেন বলে তিনি আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি বলেন মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ধনাগোদা চেষ প্রকল্পের ভিতরে কৃষি বিষয়ক তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও মাঠ সহকারীরা।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, মতলবের কলাকান্দায় এসে জানতে পারি আল-আমিন প্রধান নামের একজন ইউপি সদস্য মাল্টার বাগান করেছে, তাই উৎসাহ নিয়েই তার মাল্টার বাগান দেখতে গিয়েছি। তার দেখা মাল্টাচাষ দেখে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছে মাল্টাচাষে। মাল্টার বাগানটি দেখে আমার ভালো লেগেছে । এরজন্যে সরকারি ভাবে ফল চাষীদের সহযোগিতার জন্য আমরা কাজ করবো। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।