চাঁদের তাপমাত্রা দিনে প্রায় ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও রাতে কমে হয় প্রায় মাইনাস ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কেন? তাপমাত্রার এত হেরফের কেন হয়? ধরুন, আপনি চাঁদে গিয়ে একটু বেড়িয়ে আসতে চান। এই মূহূর্তে কথাটা অসম্ভব মনে হলেও ভবিষ্যতে তা সম্ভব হতে পারে। হয়তো একদিনের মধ্যে চাঁদে বেড়িয়ে আবার ফিরে আসা যাবে পৃথিবীতে। কিন্তু আপনি একদিনে ফিরে আসতে চান না। দুই দিন চাঁদে থেকে চারপাশ ভালো করে ঘুরে তারপর ফিরতে চান। তাহলে নিশ্চয়ই আপনার কিছু পোশাক নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু কোন ধরনের পোশাক নেবেন? শীতের, নাকি গরমের?
এমন প্রশ্ন করার কারণ আছে। চাঁদের তাপমাত্রা রাতে প্রায় মাইনাস ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও দিনে থাকে প্রায় ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রশ্ন হলো, কেন? চাঁদের তাপমাত্রার এমন হেরফের কেন হয়? এর কারণ চাঁদে বায়ুমণ্ডলের অনুপস্থিতি। পৃথিবীর যেমন বায়ুমণ্ডল আছে, চাঁদের তা নেই। বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর ক্ষেত্রে কম্বলের মতো কাজ করে। তাপ আটকে রাখে। সূর্যের আলো পৃথিবীতে ঢুকতে পারে ঠিকই, কিন্তু বায়ুমণ্ডলের কারণে এর সবটা বেরিয়ে যেতে পারে না।
আর সূর্যের আলো পৃথিবীপৃষ্ঠকে উষ্ণ রাখে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রায় এরকম বড় পরিবর্তন হয় না। শুধু শীতকালে রাতের দৈর্ঘ্য একটু বেড়ে যায় বলে দিনে আসা সূর্যের আলো যথেষ্ট উষ্ণতার যোগান দিতে পারে না। সে জন্যই আমাদের শীত লাগে। এ বিষয়ে আরও জানতে পড়ুন: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত ও শীত ও গরম কি পৃথিবীর বার্ষিক গতির ওপর নির্ভর করে?
চাঁদে যেহেতু পৃথিবীর মতো বায়ুমণ্ডল নেই, তাই চাঁদ তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। এ জন্য সূর্যের আলো পড়লে চাঁদ হয়ে ওঠে অনেক উষ্ণ। আবার আলো চলে গেলে, মানে রাত হলে তাপমাত্রা কমে প্রায় মাইনাস ১৩০ ডিগ্রিতে চলে যায়।
চাঁদের তাপমাত্রা পরিবর্তনের আরেকটি কারণ আছে। চাঁদ তার অক্ষের ওপর একবার ঘুরতে সময় নেয় পৃথিবীর প্রায় ২৭ দিন। ফলে চাঁদের পৃষ্ঠে টানা প্রায় ১৩ দিন সূর্যের আলো থাকে, আবার ১৩ দিন থাকে অন্ধকারে। সূর্যের আলো যখন থাকে, তখন তাপমাত্রা এত বাড়ে যে এই তাপমাত্রায় পানি রাখলে ফুটে বাষ্প হয়ে যাবে। আবার অন্ধকার হলে, মানে রাতে তাপমাত্রা এত কমে যায় যে জমে বরফ হয়ে যাবে।
তাপমাত্রার এই নাটকীয় পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা নভোচারীদের জন্য স্পেসস্যুট তৈরি করে। স্পেসস্যুটের ভেতরে হিটার ও কুলিং সিস্টেম থাকে। ফলে চাঁদের পৃষ্ঠে তাপমাত্রার এ পরিবর্তনের জন্য নভোচারীদের কোনো সমস্যা হয় না।
নাসার তথ্যমতে, চাঁদের পৃষ্ঠের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমে মাইনাস ১৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। তবে চাঁদের মেরুর তাপমাত্রা কমে হতে পারে মাইনাস ২৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস! কারণ এই আঞ্চলে কখনো সূর্যের আলো পৌঁছায় না।
ভবিষ্যতে চাঁদে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তা করছে মানুষ। সেই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে নাসা। ইতিমধ্যে সংস্থাটি ঘোষণা করেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে আবার চাঁদে মানুষ পাঠাবে। সে জন্য তারা চালু করেছে আর্টেমিস প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামের প্রথম মিশন ইতিমধ্যে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
দ্বিতীয় মিশন, অর্থাৎ আর্টেমিস ২ চলতি বছর ডিসেম্বরে বা আগামী বছর জানুয়ারিতে সম্পন্ন হবে। আর ২০২৬ সালে আর্টেমিস ৩ মিশনে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামবে মানুষ। এরপর ধীরে ধীরে সেখানে কলোনি তৈরি করে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ার চেষ্টা করবে। আগে, অ্যাপোলো প্রোগ্রামে মানুষ যতক্ষণ চাঁদে ছিল, এবারে, অর্থাৎ আর্টেমিস ৩ মিশনে তার চেয়ে বেশি সময় থাকবেন নভোচারীরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।