পৃথিবীর মতো চাঁদেরও একটি একক, সর্বজনীন সময় নির্ধারণের জন্য চাঁদেও নতুন টাইম জোন তৈরি করতে যাচ্ছে নাসা। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাকে এ নির্দেশ দেয় হোয়াইট হাউজ। এ পদক্ষেপকে মহাকাশ অন্বেষণের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত বলে মনে করছে নাসা। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, এ উদ্যোগ মহাকাশে সহযোগিতা ও অগ্রগতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
চাঁদকে ঘিরে ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা মোকাবেলায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি আন্তর্জাতিক নীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে। এই নীতি চাঁদ এবং অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর জন্য একটি সমন্বিত টাইম জোন নির্ধারণ করবে। এ লক্ষ্যে ২০২৬ সাল নাগাদ চাঁদের জন্য নতুন টাইম জোন তৈরির নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে নাসাকে। চাঁদে চলা নতুন এ সময়কে ডাকা হবে ‘কো-অর্ডিনেটেড লুনার টাইম বা এলটিসি’ নামে।
নতুন টাইম জোনের বিষয়ে নাসার শীর্ষ যোগাযোগ ও নেভিগেশন কর্মকর্তা কেভিন কগিন্স বলেন, ‘চাঁদ আর পৃথিবীর সময় এক সমান নয়। চাঁদে স্থাপিত একটি পারমাণবিক ঘড়ি পৃথিবীর ঘড়ির চেয়ে ভিন্ন গতিতে সময় গণনা করবে। এ কারণে যখন চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহের মতো অন্য গ্রহে অভিযান চালানো হয়, তখন সেখানকার সময় পৃথিবীর তুলনায় ভিন্ন হয়।’
নাসার ২০২৬ সালের আর্টেমিস কর্মসূচি ও মহাকাশের অন্যান্য গ্রহের জন্য সময় নির্ধারণের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রতিষ্ঠানটি এই নতুন উদ্যোগ শুরু করছে। নাসার পরিকল্পনা হলো, ধীরে ধীরে সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ, উপগ্রহ এবং মহাজাগতিক বস্তুর সময়ের জন্য একক মান নির্ধারণ করা। পৃথিবীর সঙ্গে সময়ের অসংগতির কারণে চাঁদে অবস্থান বা প্রদক্ষিণের সময় মহাকাশযানে সময়জনিত ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
এসব সমস্যার মূল কারণ, চাঁদে কোনো প্রমিত সময় না থাকা। কো-অর্ডিনেটেড লুনার টাইম শুরু হলে মানুষ যখন চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহে অভিযান চালাবে, তখন স্থানীয় গ্রহের দিন ও বছরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সময় সম্পর্কিত ডেটা মিলিয়ে এসব অভিযান পরিচালনা করা হবে। এতে সময়জনিত সমস্যাগুলো এড়ানো যাবে সহজেই।
সারা বিশ্বে সময়ের হিসাব রাখা হয় গ্রিনিচ মিন টাইম বা জিএমটি অনুসারে। ইংল্যান্ডের গ্রিনিচে অবস্থিত রয়েল অবজারভেটরি থেকে বিশ্বজুড়ে সময় গণনার জন্য ব্যবহৃত হয় এ মান। পৃথিবীর ঘূর্ণন অনুসারে এ মান নির্ধারিত হয়। ১৮৪৭ সালে প্রথম শুরু হয় এর ব্যবহার। জিএমটি ব্যবহারের অনেক কারণ আছে। এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগ সহজ করে তুলেছে, এক দেশ থেকে অন্য দেশের বিমান ও জাহাজের ভ্রমণ সমন্বয়ে সাহায্য করেছে। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও প্রয়োজনীয় ডেটা বিশ্লেষণেও কাজে লাগে জিএমটি।
অনেকে প্রশ্ন করবেন, পৃথিবীর সময় চাঁদে ব্যবহার করলে অসুবিধা কী? পৃথিবীর প্রমিত সময় (জিএমটি) চাঁদে ব্যবহার করলে কালের আবর্তে চাঁদের সময় পৃথিবীর সময় থেকে অনেক দূরে সরে যাবে। এর কারণ হলো, চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যে সময়ের গতি ভিন্ন। চাঁদে পৃথিবীর তুলনায় সময় প্রায় ৫৮.৭ মাইক্রোসেকেন্ড দ্রুত চলে। কারণ, পৃথিবীর তুলনায় চাঁদে মহাকর্ষ কম। মনে হতে পারে সময়ের এ ব্যবধান তো খুবই সামান্য। কিন্তু মহাকাশযান কোথায় গিয়ে নামবে, ঠিক কোন মুহূর্তে কক্ষপথের কোন জায়গায় থাকবে—এরকম বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই সামান্য সময়ের ব্যবধানও জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।
নাসার এত কিছু করার অবশ্য কারণও আছে। চাঁদে স্থায়ী ঘাঁটি স্থাপনের লক্ষ্যে তারা আর্টেমিস প্রকল্প শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে আর্টেমিস ১। এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য হলো ২০২৬ সালের মধ্যে চাঁদে মানুষ পাঠানো।
চাঁদে ঘাঁটি স্থাপনের পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহেও মানব অভিযান চালানোর ইচ্ছে আছে নাসার। সে জন্য চাঁদের কক্ষপথে নির্মাণ করা হবে ‘লুনার গেটওয়ে’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। গবেষণার পাশাপাশি মঙ্গল গ্রহে যাত্রা করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহেও ভূমিকা রাখবে লুনার গেটওয়ে।
আর্টেমিস প্রোগ্রাম অবশ্য শুধু নাসার প্রকল্প নয়। আন্তর্জাতিক এ প্রকল্পে যুক্ত আছে মোট ৩৮টি দেশ। তবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিচ্ছে। বেশ কটি বেসরকারি কোম্পানিও যুক্ত রয়েছে এ প্রকল্পের সঙ্গে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও রাশিয়া এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত নেই বটে, তবে তারাও চাঁদে নিজস্ব অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে। এই সব মিলিয়েই চাঁদের জন্য আলাদা টাইম জোন বানানোর এই উদ্যোগ। এ জন্য শিগগিরই চাঁদে পারমাণবিক ঘড়ি বসাতে হবে বলেই ধারণা বিজ্ঞানীদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।