জুমবাংলা ডেস্ক : ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা পক্ষের বিভিন্ন দাবিতে রাস্তায় নামার মধ্যেই এবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ন্যূনতম বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
চাকরিপ্রত্যাশীদের ভাষ্য- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ বছর, যা অন্তত দেড় শতাধিক দেশে বাস্তবায়ন ঘটানো হয়েছে।
৩৫ বছরের সীমাটি বাংলাদেশেও বাস্তবায়নের দাবিতে শনিবার বেলা ১১টায় শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ২টার দিক থেকে শাহবাগ মোড়ের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন শিক্ষিত তরুণরা।
দাবি আদায় না হলে শাহবাগ ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছেন, সরকারের প্রতিনিধি না এলে রাস্তা ছাড়বেন না তারা।
শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে ছিলেন আন্দোলনকারীরা।
সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নেওয়ায় শাহবাগ মোড় ঘিরে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আশপাশের সব সড়কে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন কাজে রাস্তায় বের হওয়া মানুষ।
চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সকালে সমাবেশে যোগ দেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কত অনিয়ম চালু আছে, সে কথা বলতে গেলে একটা ডিকশনারির মত হয়ে যাবে। কত যে অস্থায়ী নিয়োগ আছে, যখন তখন একেকজনকে কান ধরে বের করে দেওয়া যায়, এমন নিয়মেরও হিসাব নেই। এসবের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ পর্যন্ত নেই।
“আমরা যে আন্দোলন করেছি, এটা শুধু সরকার পতনের কোনো আন্দোলন ছিল না। আমরা বলেছি এটা দেশ বদলের আন্দোলন, অপশাসন বদলের আন্দোলন। দেশ থেকে বৈষম্য দূর করাই আমাদের আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু সুন্দরভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি মনে করি, আমাদের দেশটা বদলে যাচ্ছে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হলে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রত্যাশী আহমেদ তানজিম দাবি করেন, বিশ্বের প্রায় ১৬২টি দেশে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা কমপক্ষে ৩৫ বছর, তার মধ্যে কিছু দেশে তা একেবারে উন্মুক্ত।
“ওই সব দেশ চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে নূন্যতম ৩৫ বছর করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে মাত্র ৩০ বছর। নতুন বাংলাদেশে আমরা এই বৈষম্য মানি না।”
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না জানিয়ে তানজিম বলেন, “সরকারের প্রতিনিধি কেউ আসুক, আমাদের বলুক যে তারা দাবি মেনে নেবেন। না আসলে রাস্তা ছাড়ব না।”
দুপুর ২টা থেকে রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার কথা জানিয়ে এই চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, “সকালে সমাবেশ করেছি, দুপুর ২টা থেকে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে আছি।”
আরেকজন চাকরিপ্রত্যাশী আহমেদ কবিরও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হলে বলেন, “আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ন্যূনতম ৩৫ করার জন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছি। এটা আমাদের যৌক্তিক দাবি। দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাস্তায় আছি।”
দাবি আদায়ের স্লোগান হিসেবে আন্দোলনকারীদের মুখে উচ্চারিত হতে শোনা যায়- ‘বয়স না মেধা, মেধা মেধা ‘, ‘আর নয় কালক্ষেপণ, এবার দাও প্রজ্ঞাপন,’ ‘৩৫ এর শৃঙ্খল, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সন্ধ্যা পৌনে ৬টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের কণ্ঠে স্লোগান উঠতে শোনা যায়।
১৬২টি দেশে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছরের বেশি বলে যে দাবি তানজিম-কবিররা করেছেন, সেটি নিরপেক্ষাভাবে যাচাই করতে পারেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।
অবশ্য গত ৬ মে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের অনেক দেশেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৭ বছরের বেশি। অথচ বাংলাদেশে বয়স ত্রিশ পার হলেই আর সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করার সুযোগ নেই।
বিবিসির এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটা থেকে যারা সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করেন, তাদের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ৩২ বছর।
বিসিএসে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর হলেও সরকারি নার্সিংয়ে চাকরির ক্ষেত্রে তা ৩৫ বছর এবং বিভাগীয় প্রার্থীর কোটায় ৩৫ বছর।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের চাকরির ক্ষেত্রেও ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়।
২০১২ সাল থেকে বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চলে আসছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদও এই দাবি তুলে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে অনেকবার। তবে আওয়ামী লীগ সরকার এই দাবি মানেনি।
গত মে মাসে এই দাবি নিয়ে শিক্ষিত তরুণরা আবার রাস্তায় নামলে বিষয়টি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে প্রতিক্রিয়া আসে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা হলে বিপর্যয় ঘটে যাবে সতর্ক করে ছিলেন, এই বয়সে চাকরি পেলে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে কাজে যোগ দিতেই তাদের ৩৭ বছর পার হয়ে যাবে।
এই যুক্তিতে আন্দোলনকারীদের দাবি নাকচ করেছিলেন শেখ হাসিনা। ৫ অগাস্ট প্রবল গণআন্দোলন ও জনরোষের মুখে আওয়ামী লীগসরকারের পতন হলে ক্ষমতায় বসে অন্তর্বর্তী সরকার।
এখন বৈষম্যের দিন বদলের ডাক ওঠায় আনন্দোলনকারীরা আবার রাস্তায় নেমেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।