চাকরি না পেয়ে মাত্র ৭০ হাজার টাকায় শুরু, এখন আয় ১০ লাখ
জুমবাংলা ডেস্ক: আব্দুল মজিদ মণ্ডল। বয়স ৩৪ বছর। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর মৃত গোলাম মোস্তফার ছেলে। তিনি চলতি মেয়াদের ৩নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর ও সফল উদ্যোক্তা।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আব্দুল মজিদ মণ্ডল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। এরই মধ্যে তার পিতা গোলাম মোস্তফার মৃত্যুর পর পুরো সংসারের দায়িত্ব তার কাঁধে পড়ে। বিচলিত হয়ে পড়েন তিনি। এ অবস্থায় উদ্যোক্তা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে একইসঙ্গে মাছ, মুরগি ও গাভী পালনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেন। এতে নিজে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকার বেকার ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থার সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করার স্বপ্ন দেখেন আব্দুল মজিদ মণ্ডল।
কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, আব্দুল মজিদ মণ্ডল তার পিতা মৃত গোলাম মোস্তফার রেখে যাওয়া কৃষি জমির সঙ্গে রাস্তার দু’পাশের অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিতে একইসঙ্গে মাছের খামার, মুরগি খামার ও গাভীর খামারসহ বায়োগ্যাস প্লান্ট গড়ে তুলেছেন। কৃষি কাজে সেচ সুবিধার জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে একটি সেচ পাম্প স্থাপন করেছেন। তার প্রকল্প দেখে মনে হয়েছে এ যেন একের ভেতর অনেক কিছু বিদ্যমান। শুরুতে ৭০ হাজার টাকার পুঁজি বিনিয়োগ করে প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করলেও এখন সেই প্রকল্প থেকে বছরে আয় ১০ লাখ টাকারও বেশি। আব্দুল মজিদের সাফল্য দেখে একই পদ্ধতিতে একই জমিতে মাছ, মুরগি খামার করেছেন এলাকার মকলেছুর রহমান নবাব।
সরেজমিনে কৃষ্ণপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কৃষ্ণপুর গ্রামের পাশে পাঁচ একর জমিতে আব্দুল মজিদ মণ্ডল গড়ে তুলেছেন মাইশা ডেইরি ফার্ম ও সিজান পোল্ট্রি ফার্ম নামের আলাদা দুইটি খামার। একই খামারে রয়েছে দুইটি পুকুর, সেচ ব্যবস্থার জন্য একটি গভীর নলকূপ। খামারের কর্মচারি ও শ্রমিকদের খাবার রান্নার জন্য গরুর গোবর দিয়ে নির্মাণ করেছেন একটি বায়োগ্যাস প্লান্ট। খামারের চার পাশ দিয়ে চাষাবাদ করা হয়েছে নানা ধরনের শীতকালীন শাক-সবজি। আবার কিছু জমিতে ধান আর কিছু জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। গরুর খামারে রয়েছে ৫০ টি উন্নত জাতের গরু এবং মুরগির খামারে রয়েছে ১০ হাজার লেয়ার জাতের মুরগি।
এদিকে আব্দুল মজিদের সাফল্য দেখে এলাকার শিক্ষিত যুবকরা নতুন নতুন উদ্যোক্তা হয়ে খামার গড়ে তুলছেন। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে।
অপর মুরগি খামারি মোকলেচুর রহমান বলেন, মজিদের সাফল্য দেখে তিনিও উদ্যোক্তা হয়ে মুরগি খামার গড়ে তুলেছেন। আগামিতে গাভী ও মৎস্য খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
সফল উদ্যোক্তা আব্দুল মজিদ মণ্ডল বলেন, লেখাপড়া শেষ করে নারায়ণগঞ্জে শক্তি ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও’তে চাকরি নেন। সেখানে দেখতে পান নানাভাবে উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া যায়। উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থেকে এনজিও’র চাকরি ছেড়ে যুব উন্নয়ন থেকে পশু পালনের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এরপর ঋণের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন নিবেদন করেও ঋণ না পেয়ে চাকরিকালীন জমাকৃত ৭০ হাজার টাকা দিয়ে ছোট্ট কলেবরে শুরু করেন মুরগি খামার। এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর পর্যায়ক্রমে গরু খামার, মৎস্য খামার ও মুরগির খাদ্য ব্যবসাসহ আব্দুল মজিদ মণ্ডল পুরোপুরি হয়ে ওঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা খামারি, ব্যবসায়ি ও আদর্শ কৃষক। প্রতি বছর তার খামার, ব্যবসা ও কৃষি থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে আয় হচ্ছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা। একই সঙ্গে তার সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে ২০ জন কর্মচারি কর্মরত থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. রবিউল ইসলাম বলেন, খামার একটি লাভজনক ব্যবসা। আব্দুল মজিদের মতো অনেকেই খামার করে স্বাবলম্বী হয়ে হয়েছেন। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থার সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রাণিসম্পদ পালন করে উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হয়ে থাকছে।
পতিত জমিতে ড্রাগন চাষে তাক লাগিয়ে দিলেন ইংল্যান্ড থেকে পিএইচডি করে আসা নোয়াখালীর শিক্ষক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।