জুমবাংলা ডেস্ক: অবশেষে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন বরিশালের হিজলার কথিত ‘ভূমিহীন’ কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম কাজল। শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নিয়োগপত্র হাতে পেয়েছেন আসপিয়া ইসলাম।
রবিবার বিকাল ৪টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি।
স্বপ্নের চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ায় উৎফুল্ল আসপিয়া ও তার পরিবার। বিশেষ করে তার মা ঝরনা বেগম প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন।
আসপিয়া ইসলাম সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেছেন গত বছর। ১৫ বছর ধরে উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের একজনের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকছে তার পরিবার। আসপিয়া মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে। পরিবারে তিন বোন ও এক ভাই এবং মা রয়েছেন। ভাই গার্মেন্টেসে কর্মরত। তার আয় দিয়েই চলে তাদের সংসার।
আসপিয়া বলেন, শনিবার রাতে হাতে নিয়োগপত্র পেয়েছি। নিয়োগপত্র পাওয়ার পর বারবার তা পড়ে দেখেছি। চাকরি পাওয়ায় অনেক খুশি হয়েছি। পরিবার ও প্রতিবেশীরাও খুশি হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
জেলা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন হিজলা থানার এসআই মো. মিজান।
নিয়োগপত্রে আগামী ২৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টার মধ্যে তাকেসহ চূড়ান্ত নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য সামগ্রী নিয়ে জেলা পুলিশ লাইনে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। সেখান থেকে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে আনুষ্ঠানিকতা শেষে মহিলা টিআরসিদের ৬ মাসের প্রশিক্ষণের জন্য রংপুরে পাঠানো হবে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। এরপর তাকে পদায়ন করা হবে।
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, আসপিয়াকে কনস্টেবল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ছয় মাসের মৌলিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারলে তাকে পদায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ে তাকে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, আসপিয়া ও তার পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের নির্মাণকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। দু’একদিন পরপর আসপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা নিজেদের ঠিকানা দেখে আসেন।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, জমিসহ ঘরের দলিল হস্তান্তরে আরও ১০ দিন সময় লাগবে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘর নির্মাণ এবং দলিল তৈরির কাজ চলছে। ঘর নির্মাণে তেমন সমস্যা না থাকলেও দলিলের কাগজপত্র তৈরিতে সময় লাগছে বেশি। তবে আসপিয়ার জন্য সেসময় অনেক কমিয়ে আনা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে জমিসহ ঘর আসপিয়াকে হস্তান্তর করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, সাত স্তরের পরীক্ষায় পঞ্চম হয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় কলেজছাত্রী আসপিয়ার চাকরি হওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন পিতৃহীন আসপিয়া ও তার পরিবার। পরে গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনের রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামানের কাছে গিয়েছিলেন আসপিয়া। ডিআইজি আসপিয়ার প্রতি সমবেদনা জানালেও তাকে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি।
বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আসপিয়াকে জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় বলে জানান জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার।
এদিকে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে আসপিয়ার পরিবারের দুই বিঘা জমির সন্ধান পায় ভোলার লালমোহনে তাদের মূল বাড়িতে। আসপিয়াদের জমি বর্গা দেওয়া রয়েছে বলেও জানান তার পরিবারের সদস্যরা। এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।